গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরায়েল
Published: 18th, May 2025 GMT
গত ৪৮ ঘণ্টায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে প্রায় ৩ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক গাজা শহরের দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া দপ্তর।
শনিবার (১৭ মে) এক বিবৃতিতে তারা এই তথ্য জানায়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলের রক্তাক্ত ইতিহাসে আরও একটি ভয়াবহ অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। শুধু উত্তর গাজা গভর্নরেটেই গত দুই দিনে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের এই ধারাবাহিকতা স্পষ্টতই গণহত্যারই অংশ।”
গাজার মিডিয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ওই অঞ্চলের এক হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি, ৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে গাজা শহরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোই নেই।
বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের হামলার স্থানে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। ফলে প্রায় ১৪০ জনের লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়ার তেল আল-জাতার এলাকা, বাইত লাহিয়া শহর ও আশপাশের এলাকায় শরণার্থীদের জন্য স্থাপন করা শত শত তাঁবু পুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি ড্রোনগুলো। গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, এই ঘটনার সময় আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতা ও নির্লজ্জ সহযোগিতা গভীর উদ্বেগজনক।
গাজা শহরের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া অফিস। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্র বা তাঁবুর ঘাটতির কারণে হাজার হাজার পরিবারকে রাস্তায় বসবাস করতে হচ্ছে, বিশেষ করে আল-জালাআ স্ট্রিট ও আল-সাফতাউই এলাকায়। খাদ্য, পানি ও ওষুধের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি এবং টানা অবরোধ ও বিমান হামলার মধ্যে তারা চরম মানবিক সংকটে রয়েছেন।
এমন অবস্থায় জরুরিভিত্তিতে গণহত্যা বন্ধ করতে, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক দল পাঠাতে, অবরোধ খুলে মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলি নেতাদের আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক চার দিনের উপসাগরীয় দেশগুলোতে সফরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ৩৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এর আগের চার দিনে এই সংখ্যা ছিল ১০০ জনের কাছাকাছি, অর্থাৎ ট্রাম্পের সফরকালীন নিহতের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বেড়েছে — গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে আনাদোলু এই হিসাব পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের খাদ্য, পানি ও ওষুধ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রেখেছে। এরপর গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)