ইউটিউবের জনপ্রিয় আধেয় নির্মাতা মিস্টার বিস্টের সম্পদ শতকোটি বা এক বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে বলে জানা গেছে। ২৭ বছর বয়সে এই ইউটিউবার বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ ‘সেলফ বিলিয়নিয়ার’ হন।

মিস্টার বিস্টের আসল নাম জিমি ডোনাল্ডসন। সাধারণ সব ভিডিও দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন রীতিমতো টেলিভিশন রিয়েলিটি শোর মতো চ্যালেঞ্জ আর পুরস্কার নিয়ে অনুষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। একই সঙ্গে বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। শুধু ভিডিও তৈরি নয়, একই সঙ্গে ব্যবসা করছেন তিনি। বিস্ট বার্গার আর ফিস্টেবলস তাঁর অন্যতম উদ্যোগ। মূলত ইউটিউব থেকে আয় করেই সেই আয়কে আবার ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছেন তিনি। ইউটিউব থেকে আয় করেই বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় যোগ দিয়েছেন তিনি। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার, যার ফলে ২৭ বছর বয়সী এই কন্টেন্ট নির্মাতা বিশ্বব্যাপী অষ্টম কনিষ্ঠ বিলিয়নিয়ার। ৩০ বছরের কম বয়সী ধনীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র, যিনি উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো সম্পদ পাননি।

মিস্টার বিস্ট কিশোর বয়সে ইউটিউবে কনটেন্ট নির্মাণ করা শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনাতে তাঁর বেড়ে ওঠা। ২০১৭ সালে ‘আই কাউন্টেড টু ওয়ান লাক’ নামের ভিডিওর মাধ্যমে তাঁর প্রথম ভাইরাল সাফল্য আসে। সেই ভিডিও তৈরি করতে তাঁর ৪৪ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। সেই ভিডিও এখন পর্যন্ত তিন কোটির বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিও তৈরিতে সাফল্য লাভের পর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার আর রোমাঞ্চকর ভিডিও তৈরি করে আলোচনায় আসেন তিনি। তাঁর সাবস্ক্রাইবারদের নিয়ে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো আয়োজন করে নজর কাড়েন মিস্টার বিস্ট।

একের পর এক হিট কনটেন্ট তৈরি করে তিনি ২০২৪ সালের ফোর্বস–এর শীর্ষ নির্মাতাদের তালিকায় একজন শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা হিসেবে জায়গা করে নেন। ফোর্বসের হিসেবে একসময় তাঁর মোট সম্পদ ছিল ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের একটি মামলার আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে তাঁর আয় ছিল ২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০২৪ সালে তা ৭০ কোটি ডলারে পৌঁছানোর কথা। বিস্ট বার্গার ফাস্ট ফুড চেইন তিনি ২০২০ সালে চালু করেন। সেখান থেকে তাঁর প্রতি মাসে ২৩ লাখ ডলার আয় হয়‌। মিস্টার বিস্ট ফিস্টেবলস নামে একটি চকলেট বার কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে তাঁর প্রতি মাসে এক কোটি ডলারের বেশি আয় বলে জানা যায়।

এ ছাড়া ক্রিয়েটিভ জুসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জুস ফান্ডস নামে একটি ২০ লাখ ডলারের তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এখান থেকে উদীয়মান নির্মাতাদের মধ্যে বিনিয়োগ করা হয়। ক্রিপ্টো ও প্রযুক্তি খাতে তাঁর মিস্টার বিস্ট বিটকয়েন ও ক্রিপ্টো পাঙ্কস এনএফটি রয়েছে। মিস্টার বিস্ট কয়েনবেস, রিফাইনেবল ও এক্সক্যাড নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন ভিডিও মাধ্যমে তাঁর পুরস্কার দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ১০০টির বেশি গাড়ি দান করেছেন। টিম ট্রিজের মাধ্যমে গাছ লাগানোর জন্য দুই কোটি ডলার সংগ্রহ করেছেন।

২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউটিউবে তাঁর চ্যানেলে ৩০ হাজারের কম সাবস্ক্রাইবার ছিল। ২০২১ সালে ১ বছরে ৩ কোটি ৭০ লাখ সাবস্ক্রাইবার যোগ হয় তাঁর চ্যানেলে। স্প্যানিশ, ফরাসি, আরবিসহ ১০টির বেশি ভাষায় ডাব করা ভিডিও নিয়ে তাঁর আলাদা চ্যানেল চালু আছে। ২০২৪ সালের জুনে তাঁর চ্যানেল ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইব করা চ্যানেলে পরিণত হয়।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ফোর্বস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ: নতুন গণতান্ত্রিক পথযাত্রা

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও গণআন্দোলনের ঢেউ এখন রূপ নিতে যাচ্ছে একটি ঐতিহাসিক রাষ্ট্রিক চুক্তি ‘জুলাই সনদ’। কয়েক মাসব্যাপী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের যে সংলাপ ও আলোচনার প্রক্রিয়া চলে এসেছে, তারই ফসল এই সনদ। রাজনৈতিক বিভক্তির দীর্ঘ ইতিহাসে এ এক বিরল মুহূর্ত, যেখানে রাষ্ট্রীয় সংস্কার নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ১৬৬টি প্রস্তাবে অভূতপূর্ব ঐকমত্য গড়ে তুলেছে।

সনদের লক্ষ্য ও দর্শন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাষায়, ‘জুলাই সনদ’ কেবল রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি একটি ভবিষ্যতপ্রতিশ্রুত সামাজিক চুক্তি যার উদ্দেশ্য- রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক, বিকেন্দ্রীভূত ও জবাবদিহিমূলক কাঠামোয় পুনর্গঠন করা।

জাতীয় ঐক্যমত

কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ  বলেন, এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের জন্য এক নৈতিক ভিত্তির নির্মাণ। সনদ বাস্তবায়িত হলে, নতুন প্রজন্ম আমাদের সাহসিকতা মনে রাখবে।

যেসব ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য

কমিশনের তথ্যমতে, নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে প্রায় সকল দলের ঐক্যমত রয়েছে:

* সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার: সংসদ সদস্যদের দলভিন্ন অবস্থান গ্রহণের স্বাধীনতা নিশ্চিত।

* রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস, বিশেষত সাধারণ ক্ষমা প্রদানে।

* তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার নীতিগত সম্মতি।

* সংসদীয় আসনসীমা নির্ধারণে নতুন কাঠামো।

* স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলের নেতৃত্ব।

* প্রধান বিচারপতির নিয়োগ পদ্ধতির সংস্কার।

* বিভাগীয় উচ্চ আদালতের বেঞ্চ স্থাপন।

তবে প্রধানমন্ত্রী পদের দুই মেয়াদ বা ১০ বছর সীমাবদ্ধতা প্রস্তাবটি এখনো পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন পায়নি।

বিভাজন রয়ে গেছে যেসব বিষয়ে

সংলাপে একাধিক স্পর্শকাতর ইস্যুতে এখনো মতানৈক্য বিদ্যমান:

* সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।

* রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য।

* নারী সংসদ সদস্যদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন।

* সংবিধানিক নিয়োগে স্বাধীন বোর্ড গঠন।

জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শতভাগ ঐকমত্য কখনোই বাস্তবসম্মত নয়। তবে আমরা একটি সর্বজনগ্রাহ্য সনদ উপস্থাপন করতে পারব বলেই আশাবাদী।

সনদ বনাম ঘোষণাপত্র

বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল:

১. ‘জুলাই সনদ’  সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে তৈরি একটি আইনি দলিল।

২. ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’  একটি রাজনৈতিক ও নৈতিক দিকনির্দেশনা।

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ঘোষণাপত্রকে প্রতীক হিসেবে না রেখে, এটিকে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র নির্মাণের রূপরেখা হিসেবে দেখতে হবে। না হলে এটি তিন জোটের ব্যর্থ রূপরেখার পুনরাবৃত্তি হয়ে যাবে।

রাজপথের বাস্তবতা

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদকে ঘিরে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা যে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা এখনো চোখে পড়ছে না। ঘোষণাপত্র ও সনদের বিষয়েও তালবাহানা চলছে। ফ্যাসিবাদী ভয়ের সংস্কৃতি ভেঙে যারা রাজপথে নেমেছে, তারা কাউকে ভয় পায় না।

জুলাই: এক নতুন অভ্যুত্থানের প্রতীক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুর রহমান আকাশ বলেন, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান থেকেই শুরু হয়েছিল এই চেতনার বীজবপন। যদি এই সনদ সাংবিধানিক ভিত্তি পায়, তাহলে তা হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের এক নতুন অধ্যায়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, জুলাই মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত সনদ প্রকাশ করা হবে। তখনই বোঝা যাবে এটি কেবল রাজনৈতিক কাগজপত্র, না বাস্তব প্রতিফলনের এক সাহসী উদ্যোগ।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, জুলাই সনদ এখন শুধু একটি রাজনৈতিক দলিল নয়, এটি দেশের ইতিহাসে গণআকাঙ্ক্ষার দলিল হয়ে উঠার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এটির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনসম্পৃক্ততা এবং প্রজন্মের চাপ প্রয়োগের ওপর। জুলাই কি হবে গণতন্ত্রের নবজন্ম, নাকি আরেকটি ব্যর্থ আশার নাম? উত্তর দেবে সময়, আর সময়ের গতিপথ নির্ধারণ করবে আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও জনসচেতনতা।

ঢাকা/আসাদ/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো কোন কোন দেশের
  • প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজই শুরু হয়নি
  • পোশাকে গড়ে ২১% শুল্ক আদায়
  • কাউকে আর ‘ফ্যাসিস্টের’ ভূমিকায় ফিরতে দেওয়া হবে না
  • সহিংসতায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার শনাক্ত
  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-টোয়েন্টি পরিসংখ্যান
  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
  • ১২ মাসে জয়ের চেয়ে হার বেশি, তবু বেতন বাড়ছে বাবর-সালমানদের
  • জুলাই সনদ: নতুন গণতান্ত্রিক পথযাত্রা