গাজায় ১৯ মাস ধরে চলমান হামলায় মোট ২২০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। গাজার জনসংযোগ কার্যালয় এ হিসাব দিয়েছে। এই সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন আশরাফ আবু নার নামের একজন। আজ রোববারই ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন তিনি।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মাস দুয়েকের যুদ্ধবিরতির সময় ছাড়া উপত্যকাটিতে নির্বিচার চলছে মানুষ হত্যা। আজও গাজায় অন্তত ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ দিন দক্ষিণের খান ইউনিস, উত্তরের জাবালিয়া ও মধ্য গাজার নুসেইরাতে হামলা হয়েছে।

গাজার জনসংযোগ কার্যালয়ের হিসাবে, গাজায় ১৯ মাস ধরে চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত ২২০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে সংঘাত শুরুর পর থেকে উপত্যকাটিতে প্রায় ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি। এ সময় আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ।

উদ্ধার সরঞ্জামের অভাবে গাজায় হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে উপত্যকাটির সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। আজ সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আল-মুগাইর বলেন, ‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী আমরা সহায়তা করতে না পারার কারণে ৯ হাজার ৭০০ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’

গাজায় ইসরায়েলের ওপর পাল্টা আঘাত হানার কথা বলেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডস। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০ মে খান ইউনিসের আল-কারারা এলাকায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি সেনাদের একটি দল অবস্থান করছিল। সেখানে হামাস যোদ্ধারা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ‘শত্রু’ সেনারা হতাহত হন।

অনাহারে শিশুর মৃত্যু

এদিকে ইসরায়েল গাজায় দিনে ১০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও তার অনেক কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে উপত্যকাটির কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজার ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর সেখানে ৩০০টি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করেছে। তবে ফিলিস্তিনের একজন কর্মকর্তার অভিযোগ, মাত্র ৯২ ট্রাক হাতে পেয়েছেন তাঁরা।

এমন পরিস্থিতিতে খাবারসহ জরুরি পণ্যের অভাবে অনাহার-অর্ধাহারে রয়েছেন গাজার বাসিন্দারা। অনেক ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে খাবারের মজুত শেষ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছে, গাজায় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন। উপত্যকাটির বাসিন্দাদের আর অপেক্ষা করার অবস্থা নেই।

খাবারের অভাবে অনাহারে গাজায় চার বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তাঁর নাম মোহাম্মদ ইয়াসিন। এর মধ্য দিয়ে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ শুরুর পর থেকে অনাহারে মৃত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ৫৮-তে দাঁড়াল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র অন হ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইব্রাহিমের হার না মানা ২৬ বছরের সংগ্রাম

তখনো ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটেনি। মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে একে একে বেরিয়ে পড়ছেন মুসল্লিরা। কেউ প্রাতঃভ্রমণ করছেন, কেউবা বাড়ির পানে চলেছেন ধীর পদক্ষেপে। কেউবা ছুটেছেন নিজ নিজ কাজে। এঁদেরই একজন মো. ইব্রাহিম। তিনিও ছুটেছেন নিজের গন্তব্যে।

এদের মধ্যে অনেকেই চলেছেন খবরের কাগজের স্টলের দিকে। গরম গরম তাজা খবর পেতে। নরসিংদীর ঘোড়াশালে এই তাজা খবর সরবরাহকারী ইব্রাহিম চঞ্চল গতিতে ততক্ষণে খবরের কাগজের গাইট নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রি স্থলে। এখন হবে খবরের বিকিকিনি।

পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজারে খুব সকালের নিয়মিত দৃশ্য ছিল এটি। একটানা গত ২৬ বছর ধরে প্রতিদিন এখানে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন ইব্রাহিম। সময় বদলেছে, সমাজ বদলেছে, মানুষের পাঠাভ্যাস বদলেছে কিন্তু বদলায়নি ইব্রাহিমের দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম আর পত্রিকা বিক্রির সংগ্রাম। হ্যা, আধুনিক ডিজিটাল যুগে পত্রিকা বিক্রি এক প্রকার সংগ্রামই বটে!

ইব্রাহিম কেবল একজন পত্রিকা বিক্রেতাই নন, তিনি একজন কুরআনের হাফেজও। শৈশবে গ্রামের মাদ্রাসায় কুরআন হিফজ করে শুরু হয়েছিল জীবন। পরিবারে অভাব-অনটনের হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে হাতে তুলে নেন পত্রিকার ব্যাগ। সেই থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধের নতুন অধ্যায়।

একসময় হাজার কপিরও বেশি পত্রিকা বিক্রি হতো দিনে। দোকানদার, চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিংবা সাধারণ পাঠক-সবাই অপেক্ষা করতেন খবরের কাগজের জন্য। ইব্রাহিমের টেবিল হয়ে উঠতো বাজারের তথ্য কেন্দ্র।

“আগে পত্রিকা মানেই ছিল মানুষের চোখের আলো, কানের শব্দ। সবাই জানার জন্য মুখিয়ে থাকতো। এখন মোবাইলে চোখ, খবর পড়ে না কেউ।” বলছিলেন ইব্রাহিম।

আজকের দিনে যেখানে কাগজের পত্রিকার বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে ইব্রাহিম এখনও সেই পুরোনো পথেই হেঁটে চলেছেন দৃঢ় চিত্তে। 

তিনি বলেন, “আগে দৈনিক হাজার কপি বিক্রি করতাম, এখন ২০০ কপিও বিক্রি হয় না। তবুও কাজটা ছাড়িনি। এটা আমার রিজিক, এতে লজ্জা কিসের? আমি গর্ব করি এই কাজ নিয়ে। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি শেষে সময় দেই কোরআন তিলাওয়াতে, নামাজে ও ধর্মীয় শিক্ষায়। জীবিকার জন্য ছোট কাজ বলে কিছু নেই। যদি তাতে থাকে ইমান, যদি থাকে সম্মান আর দায়িত্ববোধ, তাহলেই সেই কাজ হয়ে ওঠে ইবাদতের মতো।”

স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর ইসলাম বলেন, “তিনি একজন আলোকিত মানুষ, যিনি জীবিকার প্রয়োজনে হাতের কাজ বদলালেও হৃদয়ের ধর্মবিশ্বাস বদলাননি। তার জীবন যেন এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত-কীভাবে দ্বীন ও দুনিয়ার মাঝে ভারসাম্য রাখা যায়।”

বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজন পর্যন্ত সবাই ইব্রাহিমকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। বাজারের এক পুরোনো ব্যবসায়ী পারভেজ বলেন, “উনি শুধু একজন পত্রিকা বিক্রেতা না, উনি আমাদের এলাকার গর্ব। যতটুকু আয় করেন, তাতেই সন্তুষ্ট। কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না, খুব ইমানদার মানুষ।”

মিডিয়ার আলো থেকে বহু দূরে, কোনো খবরের হেডলাইন না হয়ে, ইব্রাহিম নিজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে লিখে যাচ্ছেন এক অসাধারণ সংগ্রামের গল্প। যিনি প্রমাণ করেছেন-সততা, পরিশ্রম ও আত্মমর্যাদা কখনো পুরোনো হয় না। সময় যতই বদলাক না কেন, এমন মানুষেরাই সমাজের মেরুদণ্ড হয়ে থাকেন।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীর বাড্ডায় দুর্বৃত্তের গুলিতে একজন নিহত
  • সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি–দাওয়া পর্যালোচনায় কমিটি পুনর্গঠন
  • আলোনসোকে রিয়ালের কোচ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা 
  • আমাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট বানানো হয়েছে: বাঁধন
  • এক নায়িকাও আমার ভিসা জটিলতায় জড়িত ছিলেন: বাঁধন
  • শরীয়তপুরে সরকারি স্কুলে শিক্ষক সংকট, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান
  • চিকিৎসক মায়ের ৯ শিশু সন্তান নিহত
  • গাজায় চিকিৎসক মায়ের ৯ শিশু সন্তান নিহত
  • ইব্রাহিমের হার না মানা ২৬ বছরের সংগ্রাম