পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার একেবারে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম দর্জিপাড়া। মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই ভারতের কাঁটাতারের বেড়া। ছোট্ট এই গ্রামটিতে প্রায়ই বুনো ময়ূরের দেখা মেলে। বাংলাদেশে ময়ূর বিলুপ্ত হলেও কয়েক বছর ধরে পাখিটির আনাগোনা দেখছেন দর্জিপাড়ার বাসিন্দারা।
এই ময়ূরগুলো গ্রামটির স্থায়ী বাসিন্দা নয়। খুব সম্ভবত এরা আমাদের সীমানার ভেতরে প্রজনন করে না। ওপারেই ভারতের সীমানায় একটি ছোট বন রয়েছে। ময়ূরগুলো খাবারের আশায় সেখান থেকে নিয়মিত দর্জিপাড়া আসে। খাওয়া শেষে আবার নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। স্থানীয় লোকজন সেগুলোকে বিরক্ত করেন না।
ময়ূরগুলো মূলত দেখা যায় গ্রীষ্মকালে। গত ১১ এপ্রিল দর্জিপাড়ায় এমন একটি ময়ূর আলোকচিত্রী রেজাউল হাফিজের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ৯ মে তেঁতুলিয়া সীমান্ত থেকে ময়ূরের ছবি তোলেন আলোকচিত্রী হাসান মাহমুদ। আরেক আলোকচিত্রী বন্ধু ফিরোজ আল সাবাও নিয়মিত দর্জিপাড়া গ্রামে ময়ূর দেখার কথা জানিয়েছেন। ২০২২ সালে দর্জিপাড়ায় চারটি ময়ূরের একটি দলের সন্ধান পান তিনি। এর মধ্যে দুটি ছিল পুরুষ। ২০২৩ সালে এবং সর্বশেষ এ বছরও ময়ূর চোখে পড়েছে তাঁর।
সুখবর হলো ময়ূর বনে ফেরানোর প্রচেষ্টা গতকাল রোববারই শুরু হয়েছে। মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের লহরিয়া বিটে ছাড়া হয়েছে পাঁচ জোড়া ময়ূর। প্রথমে এই ময়ূরগুলোকে বুনো পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলা হবে। এরপর সেগুলো বনে ফিরে যাবে।দর্জিপাড়ায় চার থেকে পাঁচটি ময়ূরের একটি দল আছে বলে ধারণা করা হয়। সেখানে বন অধিদপ্তর ইউক্যালিপটাসের সামাজিক বনায়ন করেছে। কয়েক বছর আগে সেখান থেকে একটি ময়ূর উদ্ধার করা হয়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার এই গ্রাম ছাড়াও ২০১৬ সালে দেবীগঞ্জের মারেয়া গ্রাম থেকে একটি এবং ২০২২ সালে বোদার চকলাহাট থেকে একটি ময়ূর উদ্ধার করা হয়েছিল।
সম্প্রতি দেশে ময়ূর দেখার তথ্য এতটুকুই। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন থেকে ২০১৫ সালে আমরা যে তালিকা প্রকাশ করেছিলাম, তাতে বাংলাদেশে ময়ূর একটি বিলুপ্ত প্রাণী। এর অর্থ বন্য পরিবেশে ময়ূর আর টিকে নেই। সর্বশেষ বাংলাদেশে বুনো ময়ূরের সন্ধান মিলেছিল ১৯৮৩ সালে—মির্জাপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের রাথুরা এলাকায়।
বাংলাদেশে দুই প্রজাতির ময়ূর ছিল। একটি হলো ভারতীয় ময়ূর। অন্যটি সবুজ ময়ূর। এর কোনোটিই দেশের বন্য পরিবেশে আর টিকে নেই। বিলুপ্তির আগে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত ভারতীয় ময়ূর। এই প্রজাতিটিই ভারতের জাতীয় পাখি। আর বিলুপ্ত হওয়া সবুজ ময়ূর আমাদের দেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় দেখা যেত। এই প্রজাতিটি এখন বিশ্বব্যাপী বিপন্ন।
গাজীপুরের মধুপুর শালবনের দোখলা রেঞ্জের লহরিয়া বিটে গতকাল ছাড়া হয় পাঁচ জোড়া ময়ূর। প্রথমে এই ময়ূরগুলোকে বুনো পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলা হবে। এরপর সেগুলো বনে ফিরে যাবে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২৪ ঘণ্টা পরই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলেন সাকিব
গতকাল আর আজ—দুই দিনই ম্যাচ শুরু হয়েছে একই সময়ে। তবে প্রথম দিন যে অনুভূতি নিয়ে সাকিব আল হাসান মাঠ ছেড়েছিলেন, দ্বিতীয় দিন তার পুরো বিপরীত। গ্লোবাল সুপার লিগে আজ ব্যাটিং বা বোলিং কোনোটিতেই ভালো করতে পারেননি সাকিব, হেরেছে তাঁর দল দুবাই ক্যাপিটালসও।
অথচ গতকালই টুর্নামেন্টে নিজের প্রথম ম্যাচে সেরা সময়ের অলরাউন্ডার রূপেই দেখা দিয়েছিলেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের বিপক্ষে ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৩৭ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস। এরপর চার ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৩ রান খরচে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। দুবাই জিতেছিল ২২ রানে, সাকিব হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।
আজ একই মাঠ গায়ানার প্রভিডেন্সে সাকিবের দলের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট হারিকেনস। প্রথমে ব্যাট করে দুবাই ক্যাপিটালস তোলে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪১ রান। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে সাকিব ১০ বল খেলে করেন ৭ রান, যার মধ্যে ছক্কাই একটি।
এরপর দুবাইয়ের হয়ে বোলিং শুরু করেন সাকিবই। তাঁর প্রথম ওভার থেকেই দুই বাউন্ডারিসমেত ১০ রান তুলে নেন হোবার্ট ওপেনার বেন ম্যাকডরমট। পরে আরও তিন ওভার করলেও রানের গতি খুব একটা থামাতে পারেননি সাকিব। ৪ ওভারে খরচ ৩৪ রান, উইকেট নেই। হোবার্ট দুবাইয়ের রান টপকে গেছে ৩ ওভার ৭ উইকেট হাতে রেখেই।
দুবাইয়ের পরের ম্যাচ সোমবার ভোরে গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে। তার আগে রোববার রাতে হোবার্ট হারিকেনসের মুখোমুখি হবে বিপিএলের দল রংপুর রাইডার্স।