‘লাল-সোনালি’ স্বপ্নে চড়ে কোয়ালিফায়ারে পাঞ্জাব
Published: 27th, May 2025 GMT
ক্রিকেট মাঠে কখনও কখনও কিছু জয় শুধুই স্কোরবোর্ডে লেখা থাকে না, তার বাইরেও থাকে এক গভীর বার্তা। সোমবারের (২৬ মে) আইপিএল ম্যাচে সেই রকম এক জয় তুলে নিয়েছে পাঞ্জাব কিংস। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে তারা শুধু জয়ই পায়নি, নিশ্চিত করে ফেলেছে প্রথম কোয়ালিফায়ারের টিকিটও। আর এই জয়ে যেন বহু বছরের অপূর্ণতা পূরণের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে দলটি।
ম্যাচের শুরুটা হয়েছিল মুম্বাইয়ের ইচ্ছেমতোই। টস হেরে ব্যাট করতে নামা দলটি ৭ উইকেটে তোলে ১৮৪ রান। সূর্যকুমার যাদব ছিলেন আক্রমণের মূল কেন্দ্রে। ৫৭ রানের ইনিংস খেলে তিনি ছাপিয়ে যান কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডকেও। একদিকে ব্যক্তিগত রেকর্ড, অন্যদিকে দলীয় সংকট; তবু সূর্য নিজের মতোই আলো ছড়ান।
কিন্তু পাঞ্জাবের জবাব ছিল আরও দুঃসাহসিক। শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালেও মাঝে জশ ইংলিশ ও প্রিয়াংশ আর্য গড়েন ১০৯ রানের দুর্দান্ত জুটি। প্রিয়াংশ মাত্র ৩৫ বলে ৬২ রানের ইনিংসে ঝড় তুললে ইংলিশ ছিলেন ধীরস্থির। যিনি ৪২ বলে করেন ৪৩ রান।
আরো পড়ুন:
৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পাচ্ছে বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজিরা
সাকিবের সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক ‘শেষ নয়’
শেষদিকে শ্রেয়াস আইয়ারের কার্যকরী ২৬ ও নেহাল ভাদেরার ঠাণ্ডা মাথার শেষ স্পর্শে ম্যাচটা জিতে নেয় পাঞ্জাব ৯ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই।
পাঞ্জাবের জয়ের আরেক ভিত গড়ে দিয়েছেন তাদের বোলাররা। মার্কো ইয়ানসেন, আরশদীপ সিং ও বিজয় কুমার; তিনজনই শিকার করেন দুটি করে উইকেট। মুম্বাইয়ের হয়ে যদিও মিচেল স্যান্টনার দুটি ও জাসপ্রিত বুমরাহ একটি উইকেট নিয়ে কিছুটা লড়াই করেছিলেন। তবে ব্যাটিং ব্যর্থতাই শেষ পর্যন্ত ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়।
পাঞ্জাবের এই জয়ে একদিকে যেমন প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত হয়েছে, অন্যদিকে গুজরাট টাইটান্সের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে অন্য ম্যাচের ফলাফলের উপর। আজ মঙ্গলবার লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস-এর বিপক্ষে বেঙ্গালুরু যদি জিতে যায় তবে গুজরাট নেমে যাবে তিনে। অর্থাৎ তাদের নাম লেখাতে হবে এলিমিনেটর রাউন্ডে। যেখানে তাদের মুখোমুখি হতে পারে এই ম্যাচে হার মানা মুম্বাই।
পাঞ্জাব কিংস সেই বিরল দলগুলোর একটি যারা সবসময় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে, কিন্তু ফলাফলে সেটার বাস্তবায়ন ঘটাতে পারেনি। তবে এবারের অভিযান যেন কিছুটা আলাদা। দলে তরুণদের আত্মবিশ্বাস, অভিজ্ঞদের স্থিরতা আর কৌশলগত বিচক্ষণতা মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক নতুন সংজ্ঞা, নতুন পাঞ্জাব। প্রথম কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেও তাদের যাত্রা শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাহসী গল্প!
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি