Prothomalo:
2025-05-27@19:31:41 GMT

একটি জানালার শাশ্বত স্মৃতি

Published: 27th, May 2025 GMT

মদিনায় নবীজির (সা.) রওজা শরিফের দক্ষিণ পাশে একটি খোলা জানালা আছে। মসজিদে নববির সালাম গেট দিয়ে সামনে এগোতে থাকলে হাতের ডান পাশে চোখে পড়বে জানালাটি। এর একটা ইতিহাস রয়েছে, যে-কারণে জানালাটি প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে খোলা। এটা হজরত হাফসা (রা.)-এর জানালা। জানালাটি কখনো বন্ধ হয়নি। নবীজির (সা.) রওজা মোবারককে সালাম দেওয়ার জন্য পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশ করে পূর্ব দিকে বের হতে হয়। রওজা শরিফ বরাবর এসে হাতের বামে উত্তরমুখী হয়ে সালাম দিতে হয়। নবীজি (সা.

) এখন যেখানে শুয়ে আছেন সেটি ছিল আয়েশা সিদ্দিকার (রা.) ঘর। এর ঠিক তার বিপরীত দিকে দক্ষিণ পাশের দেয়ালেই জানালাটির অবস্থান। এখানেই ছিল হজরত ওমরের (রা.) মেয়ে হাফসার (রা.) ঘর।

মসজিদে নববির পূর্ব পাশে সারিবদ্ধভাবে ছিল নবীজির (সা.) স্ত্রীদের ঘর। আয়েশা (রা.) ও হাফসার (রা.) ঘর ছিল মুখোমুখি। মাঝে একটি গলিপথ। যে গলিপথ দিয়ে সবাই রওজায় সালাম করতেন।

আরও পড়ুনমদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি০৩ জুন ২০২৪শর্ত রাখলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের যে বাড়িতে তিনি উঠছেন রওজা শরিফ বরাবর তার দেয়ালে একটি জানালা খুলতে হবে এবং জানালাটি কখনো বন্ধ করা যাবে না।

হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতের সময় ১৭ হিজরিতে মসজিদে নববি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হলে রওজায় সালাম দেওয়ার সুবিধার্থে হাফসা (রা.) ঘরটি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন দেখা দেয়। তিনি তখনো সেই ঘরে বাস করেন। ওমর (রা.) চিন্তায় পড়ে গেলেন। কীভাবে তিনি মেয়ে হাফসাকে (রা.) বলবেন ঘরটি ছেড়ে দিতে। অবশেষে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হাফসার (রা.) ঘরের প্রতিটি কোনায় নবীজির (সা.) স্পর্শ ও স্মৃতি। এই ঘর তাঁকে ছাড়তে হবে, কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। তাঁর কান্না দেখে ওমর (রা.) ফিরে গেলেন।

পরদিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে পাঠালেন। আরও অনেকে তাঁকে অনুরোধ করল। কিন্তু তিনি অনড়। তাঁকে বলা হলো, এই হুজরার (ঘরের) বিনিময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় বাড়িটি তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তাতেও তিনি রাজি হলেন না। কিছুদিন পর হজরত ওমর (রা.) পুত্র আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে আবার তাঁর কাছে এলেন। এবার ভাই আবদুল্লাহ বোনের কাছে আবেদন রাখলেন যেন তিনি মুসলিমদের স্বার্থে ঘরটি ছেড়ে দেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বাড়িও হাফসার (রা.) হুজরার সঙ্গেই লাগোয়া ছিল। তিনি বোনকে অনুরোধ করলেন তার বাড়িতে এসে ওঠার জন্য। তিনি বোনের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে অন্যখানে চলে যাবেন। যেহেতু এই বাড়িটিও তো তাঁর হুজরার সঙ্গেই, সুতরাং তিনি নবীজির (সা.) কাছেই অবস্থান করবেন।

তাঁকে বলা হলো, এই হুজরার (ঘরের) বিনিময়ে মদিনার সবচেয়ে বড় বাড়িটি তাকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। তাতেও তিনি রাজি হলেন না।আরও পড়ুনযেভাবে নির্মিত হলো মসজিদে নববি০৭ মার্চ ২০২৫

এবার তিনি সম্মত হলেন। তবে শর্ত রাখলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের যে বাড়িতে তিনি উঠছেন রওজা শরিফ বরাবর তার দেয়ালে একটি জানালা খুলতে হবে এবং জানালাটি কখনো বন্ধ করা যাবে না। যেন জানালা দিয়ে রওজার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন। হজরত ওমর (রা.) কথা দিলেন যে কখনো এ জানালাটি বন্ধ করা হবে না।

আজ থেকে হাজার বছর আগে হাফসা (রা.) ইন্তেকাল করলেন এবং এর মধ্যে বহুবার মসজিদে নববির পুনঃনির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়, কিন্তু কেউই হজরত ওমর (রা.) এর প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেননি। সে কারণে খোলা জানালাটি আজও নবীপ্রেমের একটি নিদর্শন হিসেবে রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন মসজিদে নববি ভ্রমণ করা যাবে ঘরে বসেই৩০ জানুয়ারি ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ল হ ওমর র মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

মদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি

তিনটি মসজিদ ভ্রমণ করলে ফজিলত পাওয়া যায়। এর প্রথমটি হলো মক্কা মুকাররমা বা কাবা শরিফ (সৌদি আরব), দ্বিতীয়টি মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস—ইসলামের প্রথম কিবলা মসজিদ (ফিলিস্তিন), তৃতীয়টি মদিনা আল মুনাওয়ারার মসজিদে নববি। মদিনা নবী করিম (সা.)-এর শহর, একে আরবিতে বলা হয় মদিনাতুন নবী। আর মদিনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববি’। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন এবং একে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ায় ফজিলত বেশি।

মসজিদে নববিতে নামাজ
আদায় ও দোয়া করার উদ্দেশ্যে মদিনায় গমন এবং সালাত আদায় করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা শরিফ জিয়ারত করা ও সালাম পৌঁছানোর ইচ্ছা থাকে প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের। জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মদিনায় যাওয়া সুন্নত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি ওমরাহর সওয়াব পাওয়া যায়।

মসজিদে নববিতে নারীদের জন্য নামাজ পড়ার আলাদা জায়গা আছে। ভেতরে কিছু দূর পরপর কোরআন শরিফ রাখা আছে। আর পাশে আছে জমজমের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। এখানে জিয়ারতের জন্য ইহরাম করতে বা তালবিয়া পড়তে হয় না। তবে মদিনা থেকে যদি মক্কায় আসতে হয়, তাহলে মিকাত আবিয়ারে আলী পার হলে ইহরাম করে আসতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন এবং একে সম্মানিত ঘোষণা করেছেন।আরও পড়ুনহজযাত্রীদের জন্য বিনা মূল্যে প্রথম আলোর হজ গাইড১০ মে ২০২৫

রিয়াজুল জান্নাহ

হুজরায়ে মোবারক ও মিম্বার শরিফের পাশের জায়গাটি ‘রওজায়ে জান্নাত’ বা ‘রিয়াজুল জান্নাহ’ বা ‘বেহেশতের বাগান’ নামে পরিচিত। স্থানটির বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তৈরি করা মসজিদে খেজুরগাছের খুঁটিগুলোর স্থলে ওসমানি সুলতান আবদুল মাজিদ পাকা স্তম্ভ নির্মাণ করেন। এগুলোর গায়ে মর্মর পাথর বসানো এবং স্বর্ণের কারুকাজ করা। প্রথম কাতারে চারটি স্তম্ভ লাল পাথরের এবং এগুলোকে পার্থক্য করার সুবিধার জন্য সেগুলোর গায়ে নাম লেখা রয়েছে। মসজিদে নববির ভেতরে কয়েকটি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে, সেগুলোকে রহমতের স্তম্ভ বা খুঁটি বলা হয়। রিয়াজুল জান্নাহতে প্রবেশের জন্য নুসুক অ্যাপে নিবন্ধন করতে হয়। নারীদের প্রবেশের সময়সূচি: সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা, বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা, রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত।

জান্নাতুল বাকি

মসজিদে নববির পাশেই বাকিউল গরকাদ (জান্নাতুল বাকি) কবরস্থান। এখানে হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত ওসমান (রা.)–সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। এর এক পাশে নতুন নতুন কবর হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আরও পড়ুন মদিনা যাত্রায় মনের কোণে যত কথা২১ জুন ২০২৪

ওহুদ যুদ্ধের ময়দান

ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুদ্ধ এটি। দুই মাথাওয়ালা একটি পাহাড়, দুই মাথার মাঝখানে একটু নিচু—এটাই ওহুদের পাহাড়। তৃতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

মসজিদে কুবা

হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় আগমন করে প্রথম শহরের প্রবেশদ্বারে কুবা নামক স্থানে নামাজ পড়েন। পরে এখানে মসজিদ গড়ে ওঠে।

কিবলাতাইন মসজিদ

এই মসজিদে একই নামাজ দুই কিবলামুখী হয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। 

এ ছাড়া মসজিদে কুবা, মসজিদে কিবলাতাইন, ওহুদ পাহাড়, খন্দকের পাহাড় প্রভৃতি দেখার জন্য মসজিদে নববির বাইরে প্রবেশপথের কাছে ট্যাক্সিচালকেরা প্যাকেজের ব্যবস্থা করে থাকেন। খরচ ১০–২০ রিয়াল।

আরও পড়ুনমক্কা-মদিনা এখন বিশ্বমানবের শহর৩১ জুলাই ২০১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মদিনার প্রাণকেন্দ্র মসজিদে নববি