কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ছিনতাই প্রতিরোধে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রধান প্রধান সড়কগুলো পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভৈরব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ছিনতাই প্রতিরোধ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে সভাটির আয়োজন করে ভৈরব নাগরিক সমাজ সভা। বেলা সোয়া একটা পর্যন্ত চলমান সভায় সভাপতিত্ব করেন পৌর বিএনপির সহসভাপতি মারুকি শাহিন।

আরও পড়ুনভৈরবে ছিনতাইয়ের প্রতিবাদে সভা, ঠিক তখনই আরেক ছিনতাইয়ের ঘটনা২৩ মে ২০২৫

বক্তারা জানান, দেশের অন্য স্থানের সঙ্গে ভৈরবের ছিনতাইকারী ও ছিনতাইয়ের ধরনের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য আছে। সাধারণত ছিনতাইকারীদের প্রধান লক্ষ্য থাকে সর্বস্ব হাতিয়ে নেওয়া। কিন্তু ভৈরবের ছিনতাইকারীরা এতেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। সবকিছু কেড়ে নেওয়ার সময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আহত করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণও হারান ভুক্তভোগী। সর্বশেষ চলতি বছরের ২ মে প্রাণ হারান পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বট কাজল গ্রামের সজীব। তিনি রাজধানী থেকে ট্রাক নিয়ে সিলেটের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ভৈরবে নামামাত্রই তিনি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন।

সভায় বক্তব্য দেন ভৈরব উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, ভৈরব প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব সোহেলুর, গণ অধিকার পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ, ভৈরব চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তানভীর আহমেদ, সাবেক পৌর কাউন্সিলর আক্তারুজ্জামান, মাহিন সিদ্দিকী, ভৈরব টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ।

আরও পড়ুনপ্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নেমে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ট্রাকচালক নিহত২১ মে ২০২৫

ছিনতাইয়ের সঙ্গে মাদকের সরাসরি সম্পর্ক আছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই ভৈরবে মাদকের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে নেশার টাকার জোগাড়ের জন্য। আর ছিনতাইয়ে নামার আগে দুর্বৃত্তরা ইয়াবা সেবন করে থাকে। এ কারণেই ভৈরবের ছিনতাইকারীরা বেশি বেপরোয়া। ছিনতাই প্রতিরোধে প্রশাসন ব্যর্থ। এ অবস্থা উন্নতির জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কমিউনিটি পুলিশি কার্যক্রম আগের চেয়ে জোরদার করতে হবে এবং নাগরিক সমাজকে নিজেদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দিনরাত কাজ করছি। এই কয়েক দিনে চিহ্নিত ১০ জন ছিনতাইকারীকে ধরেছি। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।’

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, ছিনতাইয়ের জন্য স্পর্শকাতর জায়গার একটি সৈয়দ নজরুল সড়ক সেতুর ভৈরব প্রান্ত। স্থানটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ছ নত

এছাড়াও পড়ুন:

আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি অনেকের

পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে কাদামাটিতে একাকার হয়ে যায় উঠান। বেশির ভাগ টিউবওয়েল নষ্ট। চলাচলের রাস্তাগুলোও বেহাল। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ চিত্র সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের।

নানা সমস্যার কারণে সুবিধাভোগীদের অনেকেই প্রকল্পের ঘরে থাকতে চান না। স্ট্যাম্পে সই করে অন্যদের কাছে বেশ কয়েকটি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরইমধ্যে তিনটি প্রকল্পের পাঁচটি ঘর বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। ত্রিশ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় এসব ঘর বিক্রি করা হয়েছে।

শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি হেলাল উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়টি জেনেছি। এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। বাসিন্দারা গোপনে ঘর বিক্রি করেন। ক্রেতারা বসবাস করার পর আমরা জানতে পারি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে উপজেলার আট ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৫৬টি ঘর। এরমধ্যে দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বড় মাঝদক্ষিণায় ৪৮টি, শ্যামপুরে ৩৫টি, তালম ইউনিয়নের গুল্টা এলাকার খ্রিষ্টান মিশনারি পাড়ায় ১৩টি, গুল্টা কলেজপাড়ায় ৬টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকিগুলো বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 

শ্যামপুর ইউনিয়নে তিনটি, বড় মাঝদক্ষিণায় ১০ থেকে ১২টি ঘর, গুল্টা কলেজপাড়ায় ১৮ থেকে ২০টিসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সুফলভোগীরা বসবাস করেন না। এসব ঘরে তালা ঝুলছে। ব্যতিক্রম দেখা গেছে, গুল্টা খ্রিষ্টান মিশনারি পাড়ায়। এ প্রকল্পে ১৩টির ঘরে বসবাস করছেন সুফলভোগীরা। 

৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় ঘর বিক্রি 
উত্তর শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের নাজমা খাতুন একটি ঘর পেয়েছিলেন। সেই ঘর তিনি উত্তর শ্যামপুর গ্রামের সাগর হোসেনের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা দেওঘর গ্রামের জবেদা খাতুন টাগড়া গ্রামের মো. হবুর কাছে ৫০ হাজার টাকায় ও রেজিয়া খাতুন উত্তর শ্যামপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের কাছে ৩০ হাজার টাকায় ঘর বিক্রি করেছেন। রেজিয়া খাতুনের ঘরে ক্রেতা সাইদুর রহমানের ভাই সাইফুল ইসলাম ব্রয়লার মুরগির খামার করেছেন। বিক্রি হওয়া অন্য দুটি ঘর তালাবদ্ধ করে করে রেখেছেন ক্রেতারা। 

এ প্রকল্পে ঘর সুফলভোগী হাড়িসোনা গ্রামের জহুরুল ইসলাম, দেশিগ্রামের শারমীন খাতুন, তাড়াশের ছানা, বুলবুলি খাতুনসহ ১০ থেকে ১২ জন তাদের জন্য বরাদ্দ ঘরে থাকেন না। দু’একজন কাজের সুবাদে ঢাকা বা অন্যত্র থাকলেও বেশির ভাগ বাসিন্দা আগের বাসস্থানেই রয়ে গেছেন। ঘর তালাবদ্ধ রেখে তারা বিক্রির পাঁয়তারা করছেন বলে জানা গেছে।

একই চিত্র দেখা গেছে বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। এ প্রকল্পে বাসিন্দা তেঘরী গ্রামের ফয়েজ আলী ও কর্ণঘোষ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ১ লাখ টাকা করে তাদের নামের বরাদ্দের ঘর বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলতে ফয়েজ আলী ও আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি হয়েছে। আপনারা খোঁজ নিলে তথ্য পাবেন।’

দেশিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাক বলেন, ‘ঘর বিক্রি, ঘরে না থাকা বিষয়গুলো অনেকেই জানান। তবে লিখিতভাবে কেউ জানান না।’

কেন থাকেন না সুফলভোগীরা
প্রকল্পের সুফলভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে যারা প্রকল্পে বসবাস করছেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। অনেক কষ্টে বসবাস করতে হয় তাদের। বেশির ভাগ সুপেয় পানির নলকূপ নষ্ট। কোনো কাজ না থাকায় ছেলেমেয়েদের মুখে দুমুঠো খাবার অনেক সময় জোটে না। এ কারণে অনেকেই ঘরে তালা দিয়ে চলে গেছেন শহরে কাজের সন্ধানে। এছাড়া তদবির, জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোকজন বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সামর্থ্যবানরাও ঘর বরাদ্দ পান। সংগত কারণে তারা সেই ঘরে থাকেন না। বিক্রি করে দিয়ে চলে যান। এ সব তথ্য জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি।

শ্যামপুর প্রকল্পের বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, এ প্রকল্পের সাতটি টিউবওয়েলের ৩টিই নষ্ট। নালাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো। আশ্রয়ণের ভেতরে ও বাইরে চলাচলের রাস্তা কাদামাটিতে একাকার। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ সব কারণেও অনেকে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলেও তাতে থাকতে চান না।

উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি নিজ সন্তান ছাড়া অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। তাড়াশে গোপনে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর বা টিপসইয়ের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া ঘর বিক্রি করছেন সুফলভোগীরা।

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, ‘ঘর বিক্রির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ