প্রকৃতির কাছে সব হারানো শাহানাজের অন্য লড়াই
Published: 27th, May 2025 GMT
‘একসময় সব ছিল, বাপের বাড়ি, স্বামীর বাড়ি। কোথাও কোনো অভাব দেখিনি। অবস্থা ভালো হওয়ায় কাজকর্ম করার কথা কল্পনাতেও আসত না। অল্প জমি আর স্বামীর আয়-রোজগারে আরাম-আয়েশে সংসার চলছিল।’ কথাগুলো বলতে বলতে দু’হাতে শাড়ির আঁচল উঠিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করলেন শাহানাজ বেগম। এ সময় আলতো ছোঁয়ায় দু’চোখের কোনা মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেন ৪০ বছর বয়সী এ নারী।
শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দক্ষিণ কদমতলায় বাড়ি দুই সন্তানের মা শাহানাজের। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন, ২০০৭-০৮ সাল থেকে তাদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। দু’দফা দুর্ঘটনায় স্বামী মোতালেব হোসেনের বাক্সের সব মৌমাছি মারা গেলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কিছুদিনের মধ্যে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলা তাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়নি। দুই সন্তানের এ মায়ের ভাষ্য, সামান্য কিছু জমি থাকলেও আইলার প্রভাবে দীর্ঘ সময় অনাবাদি ছিল। একই সময়ে এলাকায় কর্মসংস্থানের সংকট শুরু হয়।
অব্যাহত নদীভাঙন তাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেয়। সংসার চালানোর তাগিদে জাল-দোড়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে নামেন। এরপর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে কয়েক বছর ধরে অনেকটা একাই সংসারের ঘানি টেনে চলেছেন। তাঁর ভাষ্য, একসময় আয়েশি জীবন কাটালেও এখন অন্যদের সঙ্গে পাশের মালঞ্চ নদী ও সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ধরে সংসার চালান। অসুস্থ হয়েও তাঁর স্বামী নামমাত্র মজুরিতে অন্যের মৌ-খামারে কাজ নিয়েছেন।
উচ্চ মাধ্যমিক ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই মেয়ে এ দম্পতির। তাদের ঘিরেই এখন সব স্বপ্ন আবর্তিত হয় বাবা-মায়ের। মোতালেব হোসেনের ভাষ্য, মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতেই বিয়ের কারণে পড়ালেখা করা হয়নি শাহানাজের। সে অনুশোচনা থেকেই হয়তোবা নিজে কঠোর পরিশ্রম করে দুই মেয়েকে শিক্ষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গৃহস্থালির কাজ, রান্নাবান্না, পানি টানার পাশাপাশি মাছ-কাঁকড়া শিকার করে সংসারের খরচ জুগিয়ে চলেছে। অনেক কিছু খুইয়েও দুই সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে ‘সুখ’ খুঁজে পেতে চাইছেন।
পাশের নদী ও বনের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছে শাহানাজ বেগমের। তিনি বলছিলেন, ‘প্রকৃতি আমাগো পথে বসিয়েছে। বারবার ভাঙন আর ভাগ্যের পরিহাসে সর্বস্ব হারিয়ে নদীর চর এখন ঠিকানা।’ দুই মেয়েকে শিক্ষিত করে অথই সাগরে তিনি ‘নুড়ি খোঁজা’র চেষ্টা করছেন বলে উল্লেখ করেন।
একাধিকবারের ভাঙনে বাড়িঘর ও জায়গাজমি হারিয়ে বাধ্য হয়ে নদীর পারে সরকারি জমিতে ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন মোতালেব। স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রায় ৪ লাখ টাকা ‘বরসা’ নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রেখে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। নিজে অসুস্থ হওয়ায় শাহানাজ চার সদস্যের সংসার চালানোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য, প্রায় এক যুগ ধরে শাহানাজ বেগম সুন্দরবনের নদনদীতে মাছ-কাঁকড়া শিকারে যুক্ত। দুই নারী সহকর্মীর পাশাপাশি পুরুষদের সঙ্গেও শিকারে যান তিনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করে তিনি এলাকায় দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।
সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য একজন মা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার উদাহরণ শাহানাজ। এমন মন্তব্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্ককর্তা (ইউএনও) রনী খাতুন বলেন, প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে তিনি যেভাবে সামনে এগিয়ে এসেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর অসম যুদ্ধ সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার