কুমুদিনী হাজং একটি প্রতীক, তার মধ্য দিয়েই হাজং বিদ্রোহ। তিনি একজন বিজয়ী আন্দোলনকারী, যার মধ্যে দিয়ে আমরা টংক বিদ্রোহ দেখতে পাই। নারীর স্বাধিকার আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের দিকে যদি আমরা দেখি, অল্প বয়সেই কুমুদিনী নারীদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন।

অমর একুশে বইমেলায় আয়োজিত ‘কুমুদিনী হাজং’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। সোমবার বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে ‘কুমুদিনী হাজং: জুইলৗ তারা, তারালা জুই’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক মতিলাল হাজং এবং কবি পরাগ রিছিল। এছাড়া সভায় সভাপতিত্ব করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। 

মতিলাল হাজং বলেন, কুমুদিনী হাজং নামটি একটি ঘটনার প্রবাহ আর এই প্রবাহ থেকে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। নারীর স্বাধিকার আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের দিকে যদি আমরা দেখি, অল্প বয়সেই (১৩/১৪)  কুমুদিনী নারীদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। তিনি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আন্দোলনগুলো আগুনের মতো বিস্ফোরণ হয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমুদিনী লক্ষ্মীপুরের হালুয়াঘাট গিয়ে আত্মগোপন করেছিলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ বাহিনী তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করায় তিনি কারও সামনে আসতে পারছিলেন না। সেদিন কি হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার কিছু মনে নেই,সব ভুলে গিয়েছি। অধিকার নিয়ে লড়তে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। 

মূল প্রবন্ধে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, কুমুদিনী জন্মেছিলেন নেত্রকোনার দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেরাতলী গ্রামে এক কৃষিজীবী হাজং পরিবারে। পাহাড়ি টিলার এই গ্রামে কিছু প্রাচীন বহেরা গাছ ছিল। ঝাঁক বেঁধে টিয়া পাখি আসতো, মাঝেমধ্যে বানরও আসতো। কুমুদিনীর মা জনুমণি হাজং ছিলেন ঐতিহ্যবাহী তাঁত বানা কারিগর এবং কৃষক। বাবা অতিথ চন্দ্র রায় হাতিখেদা বিদ্রোহী এবং কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিলেন। জন্মের দু'বছরের ভেতর কুমুদিনী মা-বাবাকে হারান। কুমুদিনী বড় হন মামার কাছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে মাইজপাড়ার লংকেশ্বর হাজংয়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পরপর শুরু হয় টংকপ্রথা উচ্ছেদ আন্দোলন। লংকেশ্বর হাজং তাঁর তিন ভাইসহ সবাই টংক আন্দোলনে যোগ দেন। একইসঙ্গে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ের কুমুদিনী হাজং। টংক আন্দোলনে বহু হাজং নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছেন। এই আন্দোলন সামগ্রিকভাবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের হাজং গ্রাম, কৃষি ও উৎপাদন ব্যবস্থা, জীবন জীবিকা আমূল পাল্টে দেয়। ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে এই প্রথা রহিত হলেও হাজংদের জীবনে আজো সুরক্ষা ও স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়নি। টংক আন্দোলনের শত সহস্র বীরদের ভেতর কুমুদিনীর নাম কেন বহুল উচ্চারিত? টংক আন্দোলনের একটি বিশেষ সময়ে এক
 যৌনসহিংতার প্রতিবাদের কারণে মূলত কুমুদিনীকে সমাজ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। কুমুদিনী হাজং ২০২৪ সালের ২৩ মার্চ প্রায় শতবর্ষের জীবন পাড়ি দিয়ে অনন্তলোকে যাত্রা করেন। কুমুদিনী হাজংকে অনন্যা শীর্ষদশ পদক ২০০৩, ড.

আহমদ শরীফ স্মারক সম্মাননা ২০০৫, সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক ২০১০, জলসিঁড়ি পদক ২০১৪, হাজং জাতীয় পুরস্কার ২০১৮, বাংলা একাডেমী সমাজসেবা ফেলোশিপ ২০১৯, নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্মাননা ২০২১ প্রদান করা হয়েছে। কুমুদিনীকে পাঠের জন্য টংক আন্দোলনের পরিক্রমা বোঝা জরুরি এবং একইসাথে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নিম্নবর্গীয় সংগ্রামের ধারাবাহিকতা ও বিস্তার জানা বোঝা জরুরি।

কুমুদিনীকে নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান করায় বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবু সাঈদ খান বলেন, কুমুদিনী হাজং একটি প্রতীক, তার মধ্য দিয়েই হাজং বিদ্রোহ। তিনি একজন বিজয়ী আন্দোলনকারী, যার মধ্যে দিয়ে আমরা টংক বিদ্রোহ দেখতে পাই। আমরা মূল রাজনীতি ধারার পাশে যে সকল সংগ্রাম, জনযুদ্ধ দেখি সেগুলোর মতোই ছিল হাজংদের জনযুদ্ধ, জনবিদ্রোহ। এসব আন্দোলনের মধ্যে একটি হলো কঙ্গো আন্দোলন, এই আন্দোলনটি জনগণের মধ্যে থেকেই গড়ে উঠা আন্দোলন। আর এই আন্দোলনকে আলোর দিশারী হিসেবে এগিয়ে নিয়েছিলেন কুমুদিনী। 

তিনি আরও বলেন, বাংলা একাডেমির পুরস্কার নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে কিন্তু কুমুদিনী হাজংকে সামাজিক অবদানের জন্য যে ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে এটি নিয়ে কোনো সংশয়, বিতর্ক নেই। এমন মানুষকে পুরস্কৃত করায় বাংলা একাডেমির একটি বড় ভূমিকা বলে মনে করি।

আবু সাঈদ খান বলেন, এই বাংলাদেশটা কেবলমাত্র বাঙালির দেশ নয়, এখানে হাজং, সাওতালরা, মারমা খাসিয়া অনেকের বাস। ধর্মীও দিক থেকে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে বাঙালি ও মুসলমানদের উদার হতে হবে এবং সংখ্যালঘু ছোট ছোট জাতসত্বাকে লালন করতে হবে। এর মধ্যে দিয়েই আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল র জন য এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
 
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।

সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
 
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’ 

আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’ 

সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নবীজির (সা.) অদ্ভুত দোয়া
  • অর্থ আত্মসাত: খুলনায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
  • বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা হাসপাতালে
  • অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি
  • মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে