হা-মীমের কর্মকর্তা খুনে দুই গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে: র্যাব
Published: 27th, March 2025 GMT
রাজধানীর তুরাগে হা-মীম গ্রুপের কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ হত্যায় জড়িত অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁর নাম নূর নবী মিয়া (১৯)। তিনিও পেশায় গাড়িচালক। বুধবার বিকেলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার হররাম উত্তরপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ফলগাছা থেকে গাড়িচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব-১ এর সিপিসি-২ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ আহনাফ রাসিফ বিন হালিম সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার দুজন হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। তাদের তুরাগ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। র্যাব–১৩ আলাদা অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করে।
তুরাগ থানার ওসি রাহাত খান সমকালকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
র্যাব সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় গ্রেপ্তারকৃতরা একে অপরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে এর মধ্যে আর্থিক লেনদেনের একটি ঘটনা রয়েছে। নিহত ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব থেকে তাঁর গাড়িচালক সাইফুলের হিসাবে ৩০ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার টাকা ক্যাশ আউট করে নেওয়া হয়েছে। হত্যার সঙ্গে এ ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
নিহত আহসান উল্লাহ হা-মীম গ্রুপের দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রোববার বিকেলে প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করে নিজের প্রাইভেটকারে আশুলিয়া থেকে তুরাগের চন্ডালভোগের বাসায় ফিরছিলেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন সাইফুল। পথেই আহসানকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। পরে সাইফুল নিহতের বাসায় গাড়ি রেখে পালিয়ে যান। এর দুদিন পর মঙ্গলবার দুপুরে তুরাগ থানাধীন উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে কাশবন থেকে আহসানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই সাইফুলকে আসামি করে পল্লবী থানায় অপহরণ মামলা করেছিলেন নিহতের স্ত্রী লুৎফুন নাহার। লাশ পাওয়ার পর সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য গ র প ত র কর আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার অব্যাহতির আবেদন
গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদন করা হয়।
মামলাটির ১৩ আসামির মধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সিটিআইবির সাবেক তিন পরিচালক গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
গ্রেপ্তার এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অব্যাহতির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আইনজীবী আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুর ও মাজাহারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরওয়ারের বিরুদ্ধে ১২ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়নি।
আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) চারটি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন। এর মধ্যে তিনটি অপরাধ (আটক, অপহরণ ও নির্যাতন) তাঁর আসামিরা ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই সংঘটিত হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের পদায়নের আগের ঘটনার দায় দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ আইনে নেই।
এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে গুমের ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যে ঘরে ছিলেন, সেটি ২১ ফুট বাই ১৭ ফুটের ছিল বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেই ঘরে জানালা পাঁচটি, দুটি দরজা, ওয়ার্ডরোব, রিডিং টেবিল, পরে এয়ারকন্ডিশনও লাগানো হয়েছিল। অর্থাৎ আযমীকে গুম করে রাখার ঘর আয়নাঘর ছিল না, অন্য কোনো জায়গা ছিল। এ কারণে আযমীকে গুম করে রাখার অভিযোগও এই আসামিদের ওপর বর্তায় না।
এসব কারণে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি অভিযোগ থেকে তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসিতে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। জেআইসির অবস্থান ঢাকা সেনানিবাসের ডিজিএফআই সদর দপ্তরের পেছনে। এটি ‘আয়নাঘর’ নামেও পরিচিত। জেআইসি বা আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবি।
এ মামলার ১০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও আছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এ মামলার পলাতক আসামি। তাঁদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা অব্যাহতির আবেদন করেছেন।