Samakal:
2025-12-13@21:05:29 GMT

শুটিংয়ের অন্দরে

Published: 27th, March 2025 GMT

শুটিংয়ের অন্দরে

বড় বাজেটের সিনেমা, তারকাদের ঝলমলে উপস্থিতি, ক্যামেরার ঝলকানি—এ সবই পর্দায় দর্শক দেখেন। কিন্তু এর পেছনে থাকে একগাদা গল্প, হাসির মুহূর্ত, দুঃখ, ক্লান্তি আর কখনও কখনও ছোটখাটো দুর্ঘটনা। সিনেমার শুটিং মানেই একটা আলাদা দুনিয়া, যেখানে বাস্তবের সঙ্গে পর্দার জীবনের প্রতিনিয়ত লড়াই চলে। দুই নির্মাতার শুটিংয়ের অন্দরের গল্প লিখেছেন মীর সামী

অমিতাভ রেজা
সিনেমা বানানোটা কখনোই শুধু ক্যামেরা অন করে শট নেওয়া নয়, একটি স্বপ্নের মতো, যেটি ধীরে ধীরে বাস্তব হয়। ‘আয়নাবাজি’ আমার কাছে শুধুই একটি সিনেমা নয়, এটি একটি সময়, একটি অনুভূতি, একটি শহরের গল্প, যেখানে ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা একে অপরের আয়নায় প্রতিফলিত হয়। আমি সবসময় চেয়েছি এমন একটি সিনেমা বানাতে, যেটি আমাদের শহরকে অন্যভাবে দেখাবে। ঢাকা শহর, তার রহস্য, তার মানুষ– এসব মিলিয়েই ‘আয়নাবাজি’। সিনেমার মূল চরিত্র আয়না– যে একজন মাস্টারমাইন্ড অভিনেতা, কিন্তু তার মঞ্চ সিনেমার পর্দায় নয়, বরং বাস্তব জীবন! এই চরিত্রটা যখন গুছিয়ে উঠল, তখনই মনে হলো, এবার কাজটি শুরু করা দরকার। আমাদের সিনেমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ঢাকার আসল রূপ ধরা। আমি চাইনি কৃত্রিম সেট বানিয়ে শুটিং করি, বরং চাইছিলাম সত্যিকারের ঢাকা শহরটি ক্যামেরায় তুলে আনতে। আমরা পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরতে শুরু করলাম। একেকটা জায়গায় ঢুকলেই মনে হতো, ‘এটিই হতে পারে আয়নার দুনিয়া!’ পুরান ঢাকার সরু গলি, শত বছরের পুরোনো বাড়ি, রাস্তার পাশে চায়ের দোকান–এ সবকিছু মিলে আয়নার গল্পের বাস্তবতা তৈরি হলো।
আমার মনে আছে, ‘আয়নাবাজি’র শুটিংয়ের সময় একটি দৃশ্য ছিল যেখানে চঞ্চল (চঞ্চল চৌধুরী) ধীর পায়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসবে, খুবই স্টাইলিশ শট। সব রেডি। আমি বললাম, ‘অ্যাকশন!’
চঞ্চল হাঁটতে শুরু করল। ঠিক তখনই, পাশের রাস্তায় একটা ভ্যানওয়ালা জোরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘এই যে আপনেরা শুটিং করতাছেন, এইডা নাটক না সিনেমা?’
ক্যামেরার ফ্রেমে চঞ্চল, সঙ্গে ভ্যানওয়ালার মাথা!
আমি চিৎকার দিয়ে বললাম, ‘কাট! ভাই, একটু চুপ করবেন?’
ভদ্রলোক একদম অবাক হয়ে বললেন, ‘আরে ভাই, আমি তো মাইক্রোফোন পাই নাই, কেমনে চুপ করমু?’
আমরা সবাই হেসে উঠলাম। শুটিং বন্ধ রেখে তাঁকে বুঝিয়ে বিদায় দিলাম।
যাই হোক। সিনেমার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো রিটেক।
একটি দৃশ্য পারফেক্ট করতে কতবার যে রিটেক দিতে হয়, তার হিসাব নেই।
একবার একটি সংলাপ ছিল, যেখানে চঞ্চলকে বলতে হবে— ‘মানুষ আয়না দেখে নিজেকে চেনে, কিন্তু আমি?’
ডেলিভারি একটুর জন্য পারফেক্ট হচ্ছিল না। চারবার শট নিলাম। পাঁচবার নিলাম। দশবার নিলাম।
অবশেষে চঞ্চল বলল, ‘দেখেন, আমি আয়নায় তাকিয়ে আগে নিজেকে চিনে নিই, তারপর সংলাপ বলি!’
শুটিং সেটে হাসির রোল উঠল।
‘অ্যাকশন সিন’ বিপদের আরেক নাম
একটা দৃশ্যের কথা ভুলতেই পারি না। সিনেমার ক্লাইম্যাক্স শুট করছি। চঞ্চলকে ছাদ থেকে নিচে নামতে হবে। সব ঠিকঠাক, ক্যামেরা রেডি, স্টান্ট টিম প্রস্তুত।
‘অ্যাকশন!’
চঞ্চল ঝাঁপ দিল।
কিন্তু ভুলটা হলো অন্য জায়গায়– নিচে সেফটি ম্যাট ঠিকমতো রাখা হয়নি!
আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি, চঞ্চল হাসছে, বলছে, ‘ভাই, আমি বেঁচে আছি, কিন্তু একটু ব্যথা পেয়েছি!’
এই জন্যই আমি বলি, সিনেমা বানানো মানেই শুধু গল্প বলা নয়, বরং একটা যুদ্ধে নামা।
‘শেষ দিন, শেষ হাসি’ সিনেমার শুটিংয়ের শেষ দিনটা সবসময় অদ্ভুত এক অনুভূতি দেয়। সবাই ক্লান্ত, কিন্তু বিদায়ের মন খারাপও থাকে। সেদিন সেটে সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে, লাইট প্যাকিং হচ্ছে, ক্যামেরা খুলে নেওয়া হচ্ছে। চঞ্চল, নাবিলা, পার্থদা সবাই বসে আছেন, ক্লান্ত কিন্তু খুশি।
আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।
একজন এসে বলল, ‘ভাই, আরেকটি টেক নেবেন?’
আমি একটু হেসে বললাম, ‘না, এবার আসল সিনেমার জন্য অপেক্ষা করা যাক!’
সিনেমা বানানো অনেক কষ্টের, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পর্দায় যখন সেটি দেখা যায়, তখন মনে হয়—এই যুদ্ধটা জেতাই ছিল আসল আনন্দ!

মেজবাউর রহমান সুমন
আমি জানতাম, ‘হাওয়া’ সহজ কোনো ছবি হবে না। সমুদ্রের গল্প মানেই অনিশ্চয়তা, আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই তো সবচেয়ে সুন্দর গল্পগুলো লুকিয়ে থাকে। প্রথম থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বাস্তবের কাছাকাছি যেতে হলে আমাদের সত্যিকার অর্থেই সমুদ্রে নামতে হবে। কিন্তু গভীর সমুদ্রে শুটিং করা যে এতটা কঠিন হবে, সেটি কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল একদল স্বপ্নবাজ মানুষকে নিয়ে। চঞ্চল ভাই, নাসির ভাই, রাজ, আর পুরো টিমকে নিয়ে আমরা গভীর সমুদ্রে রওনা দিলাম একটি ফিশিং ট্রলারে। ধীরে ধীরে মোবাইল নেটওয়ার্ক মিলিয়ে গেল, তীরে ফেলে আসা শহরের আলোও দূরে হারিয়ে গেল। আমাদের সামনে শুধু জলরাশি, মাথার ওপর বিশাল আকাশ। শুটিং শুরুর আগেই মনে হলো, আমরা একটি নতুন পৃথিবীতে এসে পড়েছি। প্রথম কয়েক ঘণ্টা সবার মধ্যে রোমাঞ্চ ছিল। তারপরই শুরু হলো আসল চ্যালেঞ্জ। ঢেউয়ের ধাক্কায় শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখা যাচ্ছিল না, শুটিং তো দূরের কথা, সোজা হয়ে দাঁড়ানোই কঠিন হয়ে পড়ল। ট্রলারের একটানা দুলুনি, খাবারের সীমাবদ্ধতা, মোবাইল নেটওয়ার্কের অনুপস্থিতি– সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত মানসিক পরীক্ষার মধ্যে পড়লাম আমরা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সি-সিকনেস। একেকজন খাবার খেয়েই বমি করে দিচ্ছিল।
সাগরে শুটিং মানে প্রতিদিন একরকম নতুন যুদ্ধ। কখনও ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই, কখনও সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, কখনও আবার হঠাৎ ঝড়। এর মধ্যেও কিছু ঘটনা আছে, যা কখনও ভুলব না।
প্রথম দিন: সমুদ্রের আসল রূপ
আমরা তখন গভীর সমুদ্রে শুটিং করছি। ছোট্ট একটি ট্রলারে পুরো ইউনিট, ক্যামেরা সেট, লাইট, সবকিছু। প্রথম দিনেই আমি বুঝলাম, এখানে কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
‘অ্যাকশন!’ বলার সঙ্গে সঙ্গে ঢেউ এলো। পুরো ট্রলার দুলে উঠল। ক্যামেরা প্রায় পড়ে যাচ্ছিল, টেকনিশিয়ানরা ঝাঁপিয়ে গিয়ে ক্যামেরা সামলালো।
আমি তখনই বুঝলাম, এই সিনেমাটি আমাদের নয়, এটি সমুদ্রের, ওর মর্জির ওপরই সব নির্ভর করছে!
সিনেমার সবচেয়ে কঠিন দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল– চঞ্চল চৌধুরী [চান মাঝি] আর অন্য শিল্পীদের ট্রলারের গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা। সাগরের মধ্যে ট্রলার এমনভাবে দুলছিল যে মনে হচ্ছিল, যেকোনো সময় কেউ পড়ে যাবে।
চঞ্চল ভাইকে বললাম, ‘ভাই সাবধানে, আপনার ভারসাম্য রাখতে পারবেন তো?’
তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি তো মাঝি, পানির ছেলে, আমার ভয় কী?’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অ য কশন আম দ র প রথম বলল ম সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

অলসতা মোকাবিলার আধ্যাত্মিক কৌশল

সকাল হয়েছে, কিন্তু বিছানা ছাড়তে মন চাইছে না—এমন দিন কি আপনারও আসে? হয়তো ঘুম থেকে ওঠার আগেই মনে হচ্ছে শরীরটা একেবারে নিস্তেজ। জোর করে বাথরুম পর্যন্ত যাচ্ছেন, আর ক্যালেন্ডার বা কাজের তালিকা দেখার কথা মনে আসতেই আবার লেপের নিচে সেঁধিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছে করে শুয়ে থাকি, আর কিছুই না করি।

এই অনুভূতিটার সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত।

যাদের আমরা অত্যন্ত কর্মঠ বা ‘প্রোডাক্টিভ মুসলিম’ বলে মনে করি, তাদের জীবনেও এমন দিন আসে। আমরা এর আগে আলাপ করেছিলাম, অক্ষমতা নিয়ে। অর্থাৎ, সেই অনুভূতি—যখন আপনি ভালো কিছু করতে চান, কিন্তু কাজ করার ক্ষমতাটুকু অনুভব করেন না। মানে ‘আমি চাই, কিন্তু পারছি না’। আজ আলোচনা করব তার নিকটাত্মীয় আলস্য নিয়ে। একে আরবিতে বলে ‘কাস্‌ল’। মানে ‘আমি চাই, কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না’ বা ‘আমার করতে ইচ্ছে করছে না’।

আলস্য কেবল একটি শারীরিক বা মানসিক জড়তা নয়; এর গভীরে থাকে বেশ কিছু কারণ, যার মধ্যে আধ্যাত্মিক কারণও রয়েছে। আলস্যকে জয় করতে হলে প্রথমে এর উৎসটি জানা জরুরি। কারণ, সব আলস্য এক ধরনের হয় না এবং এর সমাধানও উৎসভেদে ভিন্ন।

আলস্যের উৎস কোথায়

আলস্য মোকাবিলা করার আগে বুঝতে হবে, এটি ঠিক কোথা থেকে আসছে। আলস্যের মূল কারণের ওপর নির্ভর করে এর প্রতিকার:

১. এটি কি সাময়িক ক্লান্তি

কখনও কখনও আলস্য কেবলই আমাদের শরীর ও আত্মার একটি সহজ বার্তা, “এখন বিশ্রাম প্রয়োজন।” আপনি হয়তো একটানা খুব বেশি পরিশ্রম করেছেন, দু’দিক থেকে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন (অর্থাৎ, অতিরিক্ত পরিশ্রম করেছেন), আর এখন আপনার ভেতরের শক্তিভাণ্ডার প্রায় শূন্য।

এই ধরনের আলস্য আসলে আপনার ফিতরাত বা প্রাকৃতিক প্রবণতা। এটি আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে পুনরুদ্ধার হওয়ার সুযোগ দেয়। এক রাতের ভালো ঘুম বা স্বল্প সময়ের বিশ্রামেই এই আলস্য দূর হতে পারে।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় তোমার শরীরের তোমার ওপর অধিকার রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৬৮)

এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, পরিশ্রমের মধ্যে বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরের যত্ন নেওয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

২. এটি কি গভীর ক্লান্তি (বার্নআউট)

যদি আপনার আলস্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে, তবে আপনি সম্ভবত সম্পূর্ণ অবসাদ (Burnout) বা গভীর ক্লান্তির শিকার। এই ধরনের ক্লান্তি কেবল এক রাতের ঘুমে দূর হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় আপনার দৈনন্দিন রুটিন, অগ্রাধিকার এবং সম্ভবত আপনার পরিবেশের একটি মৌলিক ও সামগ্রিক পরিবর্তন।

গভীর ক্লান্তির আরেকটি মূল কারণ হলো, জীবনের চালকশক্তি হিসেবে সুস্পষ্ট মহৎ উদ্দেশ্য না থাকা। যখন আপনার কোনো বড়, অর্থপূর্ণ লক্ষ্য থাকে না যা আপনাকে বিছানা থেকে ওঠাবে, তখন মস্তিষ্ক সহজেই আলস্যকে গ্রহণ করে নেয়। জীবনের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট হলে, শক্তি হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

আরও পড়ুনশত্রুদের বিবরণ আছে সুরা মুনাফিকুনে ০৮ অক্টোবর ২০২৪

৩. এটি কি আধ্যাত্মিক

আলস্যের মূল কখনও কখনও আমাদের ধারণার চেয়েও গভীরে প্রোথিত থাকে। স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন,

“যখন তোমাদের কেউ ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তার মাথার পেছনে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে বলে, তোমার রাত অনেক দীর্ঘ, সুতরাং ঘুমাও। অতঃপর যদি সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহকে স্মরণ করে, তবে একটি গিঁট খুলে যায়; যদি সে অজু করে, তবে দু’টি গিঁট খুলে যায়; আর যদি সে নামাজ আদায় করে, তবে সব গিঁট খুলে যায়। এভাবে সে সকালে প্রফুল্ল মন ও সতেজ শরীর নিয়ে ওঠে; অন্যথায় সে সকালে খারাপ মন ও অলসতা নিয়ে ওঠে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৭৬)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আমাদের আলস্য অনেক সময় আধ্যাত্মিক গিঁটের ফল হতে পারে, যা জিকির (আল্লাহর স্মরণ), অজু এবং নামাজের মাধ্যমে খোলা হয়নি।

তবে অলসতার আরও একটি সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে। আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, যখনই আপনি কোনো অর্থপূর্ণ কাজ শুরু করতে যান—যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া—ঠিক তখনই আলস্য যেন সবচেয়ে কঠিনভাবে আঘাত করে? এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।

শয়তানের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার সবসময় প্রলোভন নয়; কখনও কখনও এটি নিছক আলস্যের মাধ্যমে কাজকে স্থগিত করে দেওয়া বা শিথিলতা ঘটানো। আপনি যত বড় ও অর্থপূর্ণ কাজের কাছাকাছি পৌঁছান, এই আধ্যাত্মিক প্রতিরোধ তত শক্তিশালী হয়। মনে হয় যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আপনার ভালো উদ্দেশ্যগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছে, যার ফলে সামান্য কাজও পাহাড়ের মতো কঠিন মনে হচ্ছে।

অলসতা মোকাবিলার কৌশল

অলসতার উৎস যেটাই হোক না কেন, এটিকে স্থায়ী হতে দেওয়া চলবে না। এর মোকাবিলায় কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:

১. বিশ্রামের মাধ্যমে সাময়িক আলস্য দূর করা

যদি আপনার অলসতা সাময়িক হয় এবং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করে থাকেন, তবে শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার অভিপ্রায় নিয়ে একটি বিরতি নিন। আপনার এই বিশ্রাম যেন ফলপ্রসূ হয়: পর্যাপ্ত ঘুমান, পুষ্টিকর খাবার খান এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটান। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং তারপর আবার খেলায় ফিরে আসুন।

বস্তুত, বিশ্রাম একটি শক্তি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া, আলস্যকে লালন করার অজুহাত নয়। (দেখুন: আল-গাজালি, ইহয়াউ উলুমিদ্দিন, ৪/৩৫১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৬)

২. নামাজের মাধ্যমে আলস্যের ধারা ভেঙে দেওয়া

যখন আপনি আলস্যের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে মনে হয়, তখন নামাজের মাধ্যমে সেই চক্রটি ভেঙে দিন। উপরে বর্ণিত তিনটি গিঁটের হাদিসটি মনে করুন। ইবাদতের প্রতিটি কাজ (জিকির, অজু, নামাজ) আপনাকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সতেজ করবে এবং আলস্য মোকাবিলায় সাহায্য করবে। নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ, যা মন ও আত্মাকে তাৎক্ষণিক শক্তি ও নির্দেশনা দেয়।

আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫

৩. পরিবেশ পরিবর্তন করা

আপনি যদি ডেস্কে বসে জড়তা অনুভব করেন, তবে আপনার কাজের স্থান পরিবর্তন করুন। কাজ নিয়ে কোনো কফি শপ বা লাইব্রেরিতে যান। কখনও কখনও পরিবেশের একটি সাধারণ পরিবর্তন অলসতার চক্রটি ভেঙে দিতে পারে। নতুন পরিবেশ মস্তিষ্কে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, যা আলস্যকে পিছনে ফেলে কাজ শুরু করতে সাহায্য করে।

৪. সামাজিক শক্তি কাজে লাগানো

আমরা যখন অলস অনুভব করি, তখন প্রায়শই একা থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু সামাজিক শক্তি হলো সেই অনন্য শক্তি, যা অন্যের উপস্থিতির মাধ্যমে জন্ম নেয়। আপনার দলের সদস্যদের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হোন, একজন জবাবদিহি সঙ্গী (Accountability Partner) খুঁজুন বা মসজিদে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হোন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে যে শক্তির অভাব বোধ করছেন, তা অনেক সময় সামষ্টিক চেতনায় (Collective Spirit) মধ্য দিয়ে ফিরে আসতে পারে। এটি মানুষকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।

৫. আল্লাহর সাহায্য চাওয়া

কাসালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো সেই দোয়াটি, যা মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই উদ্বেগ ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও আলস্য থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের চাপ থেকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৬৮)

তবে কেবল যান্ত্রিকভাবে এই দোয়াটি পাঠ করবেন না। যখন আপনি বলেন, “আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও আলস্য থেকে”, তখন নিজেকে এই সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হচ্ছেন বলে কল্পনা করুন। আপনার ওপর থেকে আলস্যের ভার সরে যাচ্ছে—তা অনুভব করুন।

বিশ্বাস রাখুন যে আল্লাহ আপনাকে এমনভাবে সতেজ করতে পারেন, যা পৃথিবীর অন্য কোনো উদ্দীপক (যেমন কফি) দিতে পারে না। দোয়া হলো আলস্যকে আল্লাহর কাছে হস্তান্তর করে তাঁর শক্তিকে নিজের মধ্যে আনার প্রক্রিয়া।

আলস্য সর্বদা খারাপ নয়। কখনও কখনও এটি একটি সংকেত, কখনও কখনও এটি মানবীয় প্রকৃতির অংশ। আবার কখনও কখনও এটি একটি আধ্যাত্মিক আক্রমণ, যার চিকিৎসা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আলস্যকে আপনার জীবনের স্থায়ী অংশ হতে না দেওয়া। এর উৎস কোথায় তা বুঝুন, মূল কারণকে মোকাবিলা করুন এবং আল্লাহর সাহায্যে এটিকে জয় করুন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে অলসতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

আরও পড়ুনইসলামে কলবের মর্যাদা ও গুরুত্ব১২ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অলসতা মোকাবিলার আধ্যাত্মিক কৌশল