সংঘাত বন্ধে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। দুই দেশকেই বিবেক, বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে জনগণ ও সম্পদের ক্ষতি এড়াতে উত্তেজনা কমাতে হবে। উভয় দেশের জন্য তা হবে মঙ্গলজনক। চলমান সংঘাত পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিলে সমগ্র বিশ্বেই এর প্রভাব পড়বে। গতকাল শুক্রবার এসব কথা বলা হয় পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য ডনের সম্পাদকীয়তে।
এতে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে ভয় ও উত্তেজনা। হামলা-পাল্টা হামলায় উভয় দেশ প্রতিশোধমূলক নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে। দুই ভূখণ্ডেই এখন বিমানবন্দর বন্ধ; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত এবং বাজারে ছন্দপতন ঘটেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ভারত থেকে ছোড়া ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর বাইরে কিছু কিছু ড্রোন হামলায় সম্পদের ক্ষতি ও মানুষ আহত হয়েছে।
গত ৭ মে ভারত আজাদ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। বৃহস্পতিবারও ভারতের ড্রোন সিন্ধু প্রদেশের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর অর্থ, ভারতের আগ্রাসন আরও এক ধাপ এগিয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, জম্মু কাশ্মীরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। এটি একটি অপ্রমাণিত অভিযোগ। ইসলামাবাদ মনে করে, মিথ্যা অজুহাতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালিত করে ভারত। পাকিস্তান পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে প্রতিশোধ নিয়েছে। এখন সব পক্ষের উচিত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা থেকে সরে আসা, যাতে উভয় দেশের জনগণের জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বালদেব সিং গতকাল শুক্রবার জোর দিয়ে বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সংকটের সমাধান চান তারা। দেশটির সেনাবাহিনী উত্তেজনা না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারত উস্কানিমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছে। এতে সীমান্তের এপারে বেসামরিক নাগরিকের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। অতএব সংলাপ ও উত্তেজনা না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তা হলো, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার উভয় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ডিজিএমওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংযমের আহ্বান জানালেও ভারত যুদ্ধ বন্ধে এগিয়ে আসার আগ্রহ দেখায়নি। তাদের মধ্যে স্পষ্ট উদাসীনতা দেখা গেছে। পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশের এই আচরণ বিভ্রান্তিকর। কারণ শত্রুতা কখনও দ্বিপক্ষীয় বিষয় থাকে না, বরং তা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যকেও প্রভাবিত করবে।
সম্পাদকীয়তে বলা হয়, জাতিসংঘ, ইসলামাবাদ ও দিল্লির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে– এমন দেশগুলোর উচিত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের উত্তাপ কমাতে ভূমিকা রাখা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশকে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। উপসাগরীয় রাষ্ট্র ইরান ও অন্যান্য বিদেশি শক্তির উচিত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে সংঘাত বন্ধ করা যায়।
উভয় দেশেই জঙ্গিবাদের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু ভারত এই সমস্যাটি পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। সম্ভবত তারা বলিউডের অ্যাকশনধর্মী সিনেমার প্রেক্ষাপটে যুদ্ধের কথা চিন্তা করছে। সংঘাতের আসল বাস্তবতা ও ক্ষতিকর পরিণাম সম্পর্কে তারা উদাসীন। পারমাণবিক যুদ্ধ হলে কী ঘটবে, তা কল্পনা করাও ভয়াবহ। অতএব, দুই দেশকেই বিবেক ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিজেদের যুদ্ধের দিকে অগ্রসর হওয়া থামিয়ে দিতে হবে। উত্তেজনাময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য দ ধ র প রস ত ত উভয় দ শ দ শট র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে: আমীর খসরু
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সব ষড়যন্ত্র জনগণ প্রতিহত করবে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচিত সংসদ হবে। এটি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগ এলাকায় নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ আসনের শুলকবহর ও ৪২ নম্বর সাংগঠনিক ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। তারেক রহমানের রাজনীতি এ দেশের মাটি ও মানুষের জন্য। জনগণের প্রত্যাশা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন তিনি।
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশের, গণতন্ত্রের বাঁচা–মরার সংগ্রাম। জনগণ ভোট দিলে সরকার গঠন করে প্রথম দিন থেকে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে বিএনপি। হাতে সময় নেই, মানুষের ধৈর্য নেই। পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রত্যাশা বাস্তবায়ন করতে হবে। এক কোটি লোকের চাকরি দিতে হবে ১৮ মাসে। এই ওয়াদা পূরণ করতে হলে বিনা মূল্য প্রাথমিক পাঁচটি সেবা দিতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়ন করতে হবে পরিবার কার্ডের মাধ্যমে। কৃষকের ক্ষমতায়ন করবে কৃষক কার্ড।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের পথ থেকে বিএনপি কখনো বিচ্যুত হয়নি। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল, শহীদ জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শ, বেগম খালেদা জিয়ার আদর্শ তারেক রহমানের আদর্শের বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল, সদস্য মামুনুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আশরাফ চৌধুরী, গোলাম কাদের চৌধুরী, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জমির উদ্দিন, শুলকবহর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শামসুল আলম, ৪২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক শায়েস্তা উল্লা চৌধুরী প্রমুখ।