কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রজাতি কমে ৬৬-তে এসেছে: উপদেষ্টা
Published: 12th, May 2025 GMT
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘কাপ্তাই লেকে এক সময় ৮৬ প্রজাতির মাছ থাকলেও বর্তমানে তা কমে ৬৬ প্রজাতির মধ্যে চলে এসেছে। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলেদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘কিছু অসাধু জেলে, ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ জাল যেমন- মশারি জাল, কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ উপকরণ দিয়ে মাছ আহরণ করেন। সেটা একেবারে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও আমরা এটা বন্ধে আইন প্রয়োগ করছি, এখানেও আইন প্রয়োগ করা হবে। কোনোওভাবেই অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ করা যাবে না।’’
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের আয়োজনে সোমবার (১২ মে) সকালে রাঙামাটি বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ সব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
মেঘনায় জেলের জালে ১৯ কেজির কাতল, ১৬ হাজারে বিক্রি
নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামলেও ইলিশ মেলেনি
ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের ২০ কেজি করে যে চাল দেয়া হয়, সেটা কোনোভাবে পর্যাপ্ত নয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় আমরা ৪০ কেজি করে চাল দিই। কিন্তু এখানে তার অর্ধেক দেয়া হয়, কি কারণে এভাবে দেয়া হয়, সেটা আমরা দেখবো। এটাকে ৪০ কেজিতে নিয়ে যেতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এটাও পর্যাপ্ত নয়, কারণ মাছ ধরতে না পারলে তাদের আয় বন্ধ থাকে, এসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।’’
তিনি বলেন, ‘‘কাপ্তাই লেক আমাদের সম্পদ। এখানে ট্যুরিস্টরা ঘুরতে এসে ছবি তুলবেন, সৌন্দর্য উপভোগ করবেন আবার বর্জ্য ফেলে লেক দুষণ করবেন, এটা হবে না। জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদকে এই বিষয় দেখতে হবে। তারা এসে এখানে যাতে পরিবেশ, হ্রদ দুষণ করতে না পারে সেজন্য তাদের ওপরও এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।’’ ল্যান্ডিং সেন্টারটিকে আরো উন্নত করা গেলে মৎস্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘আমি জেনেছি কাপ্তাই হ্রদে অনেক সময় চাঁদাবাজির জন্য এখানকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও জেলেরা কাজ করতে পারছে না, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের(বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
আলোচনা সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ অতিথিরা কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই হ্রদের চারটি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে ৬০ মেট্টিক টন পোনা অবমুক্ত করা হবে। পরে হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন ২৬ হাজার ৬৫১ জন বেকার জেলে পরিবারের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়।
প্রতি বছর কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রাকৃতিক প্রজনন এবং অবমুক্তকৃত পোনার সুষ্ঠু বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মে থেকে তিন মাস কাপ্তাই হ্রদ মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে সঠিক সময়ে হ্রদের পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় তিন মাসের স্থলে চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ আহরণ অবম ক ত ব যবস য় উপদ ষ ট আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
রেমিট্যান্স আহরণে সৌদি আরব শীর্ষে
চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে রেকর্ড ২ হাজার ৪৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় যা ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এই আয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে সৌদি আরব প্রবাসীদের। যদিও ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ হিসেবে কখনও সংযুক্ত আরব আমিরাত, কখনো যুক্তরাষ্ট্র, কখনো যুক্তরাজ্যকে দেখানো হচ্ছিল। গত এপ্রিল মাসে আবার শীর্ষ দেশ হিসেবে সৌদি আরবের নাম উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মোট ২৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৪৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার; যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৭ কোটি ২১ লাখ ডলার। মোট রেমিট্যান্সের ১২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বা ৩৩ কোটি ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে ২৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে এসেছে ২১ কোটি ৯ লাখ ডলার। পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে কুয়েত, ইতালি, ওমান, সিঙ্গাপুর ও কাতার।
দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয় গত মার্চে। ওই মাসে শীর্ষ আহরণকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেখানো হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে দেখানো হয় ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার আহরণ দেখানো হয়েছিল সৌদি আরব থেকে। চতুর্থ যুক্তরাজ্য এবং পঞ্চম দেখানো হয় মালয়েশিয়াকে। গত অর্থবছরও শীর্ষ দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় যুক্তরাজ্য, চতুর্থ হিসেবে দেখানো হয় সৌদি আরব এবং পঞ্চম দেখানো হয় মালয়েশিয়াকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে সরাসরি ব্যাংক এবং এক্সচেঞ্জ হাউস– এই দুই মাধ্যমে দেশে আসে। এক্সচেঞ্জ হাউসের সংগ্রহ করা রেমিট্যান্স ব্যাংকগুলো কিনে নিয়ে সুবিধাভোগীকে টাকা পরিশোধ করে। দেশের মোট রেমিট্যান্সের বেশি অংশ আসে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে। যেসব দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধিত কোম্পানি বেশি। ফলে প্রবাসীরা যে দেশ থেকেই অর্থ পাঠান না কেন, ক্লিয়ারিং হয় এক্সচেঞ্জ হাউসের নিবন্ধিত দেশ থেকে। অবশ্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেশভিত্তিক আলাদাভাবে রেমিট্যান্সের হিসাব করে। তবে ব্যাংকগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আলাদাভাবে না দেখিয়ে ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে রিপোর্ট করে। এই ভুল রিপোর্টিংয়ের কারণে প্রায় তিন বছর শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী হিসেবে অন্য দেশের নাম উঠে আসছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে যে দেশের রেমিট্যান্স, সেই দেশের আয় হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে জানান, বাংলাদেশি কোনো ব্যাংক হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১০ লাখ ডলার কিনেছে। সেখানে পাঁচ দেশের রেমিট্যান্স আছে। এটা দেশভিত্তিক আলাদাভাবে না দেখিয়ে পুরোটাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের রেমিট্যান্স হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করে আসছিল। এতে করে প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হতো না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথাও উঠেছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে দেশভিত্তিক প্রকৃত চিত্রের আলোকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। সব ব্যাংক যথানিয়মে রিপোর্ট করলে আর ভুল রিপোর্টিং হবে না।
২০২২ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত সব মাসেই সৌদি আরব শীর্ষে ছিল। হঠাৎ করে ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষ আয়ের দেশ দেখানো হয়। দ্বিতীয় ছিল সৌদি আরব এবং তৃতীয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। অবশ্য সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরে সৌদি আরব শীর্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উঠে আসে দ্বিতীয়। আর তৃতীয় ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।