মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘কাপ্তাই লেকে এক সময় ৮৬ প্রজাতির মাছ থাকলেও বর্তমানে তা কমে ৬৬ প্রজাতির মধ্যে চলে এসেছে। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ব্যবসায়ী, জেলেদের আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।’’  

তিনি বলেন, ‘‘কিছু অসাধু জেলে, ব্যবসায়ী নিষিদ্ধ জাল যেমন- মশারি জাল, কারেন্ট জালসহ নিষিদ্ধ উপকরণ দিয়ে মাছ আহরণ করেন। সেটা একেবারে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও আমরা এটা বন্ধে আইন প্রয়োগ করছি, এখানেও আইন প্রয়োগ করা হবে। কোনোওভাবেই অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ করা যাবে না।’’ 

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের আয়োজনে সোমবার (১২ মে) সকালে রাঙামাটি বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ ও মৎস্যজীবীদের মাঝে ভিজিএফ চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এ সব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

মেঘনায় জেলের জালে ১৯ কেজির কাতল, ১৬ হাজারে বিক্রি

নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে নামলেও ইলিশ মেলেনি

ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘‘মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের ২০ কেজি করে যে চাল দেয়া হয়, সেটা কোনোভাবে পর্যাপ্ত নয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় আমরা ৪০ কেজি করে চাল দিই। কিন্তু এখানে তার অর্ধেক দেয়া হয়, কি কারণে এভাবে দেয়া হয়, সেটা আমরা দেখবো। এটাকে ৪০ কেজিতে নিয়ে যেতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে এটাও পর্যাপ্ত নয়, কারণ মাছ ধরতে না পারলে তাদের আয় বন্ধ থাকে, এসময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘কাপ্তাই লেক আমাদের সম্পদ। এখানে ট্যুরিস্টরা ঘুরতে এসে ছবি তুলবেন, সৌন্দর্য উপভোগ করবেন আবার বর্জ্য ফেলে লেক দুষণ করবেন, এটা হবে না। জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদকে এই বিষয় দেখতে হবে। তারা এসে এখানে যাতে পরিবেশ, হ্রদ দুষণ করতে না পারে সেজন্য তাদের ওপরও এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে।’’ ল্যান্ডিং সেন্টারটিকে আরো উন্নত করা গেলে মৎস্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘‘আমি জেনেছি কাপ্তাই হ্রদে অনেক সময় চাঁদাবাজির জন্য এখানকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও জেলেরা কাজ করতে পারছে না, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ 

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের(বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

তোফাজ্জেল হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান লে. জেনারেল অনুপ কুমার চাকমা, জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, বিএফডিসি রাঙামাটির ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিমসহ সরকারের অন্যান্য উর্ধ্বতন নেতারা। মৎস্যজীবী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য ব্যবসায়ী মাহফুজ উদ্দিন।

আলোচনা সভা শেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ অতিথিরা কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। ৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই হ্রদের চারটি অভয়াশ্রমে পর্যায়ক্রমে ৬০ মেট্টিক টন পোনা অবমুক্ত করা হবে। পরে হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন ২৬ হাজার ৬৫১ জন বেকার জেলে পরিবারের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। 

প্রতি বছর কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রাকৃতিক প্রজনন এবং অবমুক্তকৃত পোনার সুষ্ঠু বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ মে থেকে তিন মাস কাপ্তাই হ্রদ মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। তবে গত কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে সঠিক সময়ে হ্রদের পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় তিন মাসের স্থলে চার মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

ঢাকা/শংকর/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ আহরণ অবম ক ত ব যবস য় উপদ ষ ট আখত র

এছাড়াও পড়ুন:

অস্বাভাবিকভাবে ইলিশের দাম বাড়ানো যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

ইলিশের দাম যেন কোনো অবস্থাতেই অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশের মূল্য ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইলিশসহ সকল ধরণের মাছের সরবরাহ ও মূল্য শৃঙ্খলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম সরাসরি ঘোষণা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং বাজারে দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে, তাতে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করা যায়। ইলিশের আহরণ, মজুদ ও বিপণন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকার নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই আইন অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈধ জাল উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধেও সরকারের বিভিন্ন বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।

উপদেষ্টা বলেন, নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে ইলিশের প্রাকৃতিক চলাচল ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। এ সংকট নিরসনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

সভায় বক্তারা ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, প্রজনন মৌসুমে সুরক্ষা, নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং অবৈধ উপায়ে আহরণ রোধে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্বাভাবিকভাবে ইলিশের দাম বাড়ানো যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা
  • ‘অস্বাভাবিক কোনো কারণে যেন ইলিশের দাম না বাড়ে’
  • রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের