প্রায় নয় বছর পর আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত চারবারের সমাবর্তনের তুলনায় এবারই সর্ববৃহৎভাবে বিশেষ এই দিনটি উদযাপন করা হবে। যাকে একক কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সবচেয়ে বড় সমাবর্তন বলছে কর্তৃপক্ষ।

গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে আর মাথায় টুপি পরে, হাতে সনদ নিয়ে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার শিক্ষার্থী। বিশাল এই আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষক নোবেল বিজয়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি।

সমাবর্তনে তাকে দেওয়া হবে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো নিজ জেলা চট্টগ্রামে আসছেন তিনি। সমাবর্তনে ৪২ জনকে পিএইচডি ও ৩৩ জনকে এমফিলসহ ডিগ্রি প্রদান করা করা হবে।

বিশাল এই আয়োজনে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু তিন কোটি টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে দেড় লাখ স্কয়ার ফিটের আকর্ষণীয় প্যান্ডেল। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অতিথি, অভিভাবকসহ প্রায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে বিশাল এই মিলনমেলায়। সমাবর্তনকে ঘিরে এখন পুরো ক্যাম্পাসেই সাজ সাজ রব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়িতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে চা খাচ্ছেন তাবাসসুম জাহান। পাঁচ বছর পর এই ঝুপড়িতে এসেছেন তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় প্রতিদিন এই ঝুপড়িতে আসা হতো। বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় এখানে বসেই হয়ত গানের আসর জমাতেন তারা। সমাবর্তনের গাউন সংগ্রহ করতে এসে সেই পুরোনো স্মৃতি সেই আড্ডা গান আজ আবার স্মরণ করছেন তাবাসসুম জাহান ও তার বন্ধুরা।

তাবাসসুম জাহান বলেন, পাঁচ বছর পর ক্যাম্পাসে এলাম। গাউন সংগ্রহ করলাম সমাবর্তনের। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। চারদিকে উৎসব মুখর পরিবেশ। পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ছে। মনে হয় যেন ক্লাস করতে এসেছি।

মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জয় প্রকাশ বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনে ছিলাম, গাউন, টুপি নিজে পরবো। মা বাবাকেও নিজের গাউন, টুপি পরাবো। অবশেষে সেই বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নটা বাস্তব হলো। এতে অন্যরকম ভালো লাগছে। আমার খুশিতে মা বাবাও আনন্দিত।

তাদের মতো গাউন, টুপি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত অনেকেই। দুইদিন ধরে স্ব স্ব বিভাগ থেকে নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করছেন বহুল প্রতীক্ষিত সমাবর্তনের অন্যতম আকর্ষণ গাউন, টুপি। এ নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই তাদের মাঝে।  

সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে আগত সাবেক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগ থেকে গাউন সংগ্রহ করছেন। দূর দূরান্তের জেলা থেকেও ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন অনেকেই। কেউ এসেছেন মা বাবাকে নিয়ে কেউবা আবার সন্তান ও জীবনসঙ্গীকে নিয়ে। বন্ধুদের সঙ্গেও এসেছেন অনেকেই। ক্যাম্পাসজুড়ে সমাবর্তনের গাউন পরে আগেই ছবি তুলে স্মৃতি ধারণ করে রাখছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে স্মৃতিচারণ করছেন তারা। বিভিন্ন বিভাগের সামনে বসানো ফটোবুথের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের উৎসব যেন দুইদিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিটি বিভাগে গাউন, টুপি সংগ্রহ করতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সমাবর্তনের পোশাকের গ্রাফিতিতে রাখা হয়েছে অভ্যুত্থানের নানা বিষয়। লোগোতেও প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস, শহীদ আবু সাইদের প্রতিকৃতিসহ অনেক কিছুই। এবার ১৮ হাজার শিক্ষার্থী পাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সই করা ব্যতিক্রমী সনদও।

ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ফরিদ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা অন্যতম ইচ্ছা হলো গ্র্যাজুয়েশন শেষে সমাবর্তন পাওয়া। সেখানে মা-বাবাকে আনা তাদের কাছে বেশ আনন্দের লাগে। আমার কাছেও একই অনুভূতি কাজ করছে। মা বাবাসহ একসঙ্গে ছবি তুলবো স্মৃতি ধারণ করে রাখবো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে বন্ধুদের সাথে ছবি তুলছিলেন শাহরিয়ার ইফাত। সমাজতত্ত্ব বিভাগের সমাবর্তী শাহরিয়ার ইফাত বলেন, দীর্ঘ নয় বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে। আমরা বন্ধুরা একসঙ্গে আজ গাউন সংগ্রহ করলাম ও ছবি তুলছি। আমার মনে হয় এই আয়োজনটা ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, এবারের সমাবর্তনের বুথগুলো প্রতিটি বিভাগে বসানো হয়েছে। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব অনুষদ ও বিভাগের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ধ দ র স বছর পর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম

আগামী ১৩-২৪মে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র অনুষ্ঠিত হবে। শরীফুল ইসলাম এর আগে সাংবাদিক হিসেবে ৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময় নয়াদিগন্তসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফিচার স্টোরি, ফটোগ্রাফিসহ বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এবারে একজন একাডেমিক শিক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্বের নানন দেশ থেকে আসা চলচ্চিত্রবিষয়ক অভিজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এছাড়াও, চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মশালায়ও অংশ নেবেন।

শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম মর্যদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রণ পাওয়া খুবই সম্মানের। আর সেটা যদি হয় একাডেমিক শিক্ষক হিসেবে, তবে তা সত্যিই অনেক গর্বের। সেখানে একটি সেশনে আমার কথা বলার সুযোগ থাকবে। আমি চেষ্টা করব, আমার দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার। পাশাপাশি বাংলাদেশি সিনেমা নিয়েও কথা বলব।’

শরীফুল ইসলাম সময় পেলেই বিশ্বের বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। তিনি কান চলচ্চিত্র ছাড়াও কোরিয়ার বুসান চলচ্চিত্র, জাপানের টোকিও চলচ্চিত্র ও সৌদি আরবের রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছেন।

শরীফুল ইসলাম দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি নয়াদিগন্ত, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, বৈশাখী টেলিভিশন, সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি ও উহান টেলিভিশনে কাজ করেছেন। ২০২০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউল্যাব, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বিউপিতে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবিতে শেষ হলো ষষ্ঠ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিতর্ক উৎসব
  • পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার
  • কান: প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়বে ২২ চলচ্চিত্র
  • কার হাতে উঠবে স্বর্ণপাম
  • বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটিতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম
  • মা তোমাকে খুব ভালোবাসি
  • হাতিরঝিলে হবে দৌড় উৎসব, অংশ নিতে করতে হবে নিবন্ধন
  • গৌতম বুদ্ধের সৌন্দর্যমণ্ডিত উৎসব
  • কান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম