রাস্তার মাঝে কেউ শুয়ে আছেন, কেউ বসে। কেউ আবার গান গাইছেন। হাতে তালি দিয়ে কেউ অন্যকে উজ্জীবিত রাখছেন। কেউ আবার মেতেছে খোশগল্পে। কেউ দিচ্ছে স্লোগান, কেউ আবৃতি করছে কবিতা- এভাবেই কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩ দফা দাবিতে রাত কাটাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে কাকরাইল মোড়ে মসজিদের সামনে এভাবেই কর্মসূচিতে পালন করতে দেখা যায়। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচিতে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, শিবির, ছাত্রঅধিকার পরিষদ, ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধীসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান করছে। 

সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে অপরকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘মার যখন খেয়েছি, মার আরও খাবো; অধিকার আদায় না করে ক্যাম্পাসে ফিরবো না।’

জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রদলও আন্দোলনে আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতর প্রায় ৫ শতাধিক আর বাইরে রাস্তায় অসংখ্য ছেলেপিলে অবস্থান করছে। তারা বিপ্লবের গান করে সময় পার করছে। রাস্তায় যখন নেমেছি, রাস্তা থেকেই সব দাবির ফয়সালা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দাবি ন্যায্য, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আমরা সব সময় আপোষহীন। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এসেছিলাম যমুনায়। কিন্তু, পুলিশ আমাদের ভাই বোনের ওপর বর্বরভাবে আঘাত করেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি, আমরা দাবি আদায় রাজপথে।’ 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রাকিব বলেন, ‘যেহেতু রাজপথে আমরা নেমেছি, অধিকার আদায় না করে আমরা ফিরব না। মার যখন খেয়েছিম মার আরও খাব; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার আদায়ের আমরা আছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীন আহমেদ বলেন, যেহেতু ক্যাম্পাস ছেড়ে এসেছি, আমাদের দাবি পূরণ না করে আর ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই না। তাতে যদি আমাদের আরও এক সপ্তাহ এখানে থাকা লাগে, আমরা তাই থাকবো, ইনশাল্লাহ। 

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাতে রাস্তায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরাও। রাত ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক ড.

মোশাররফ হোসেন ও ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মঞ্জুর মোর্শেদ ভুইয়া। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারা রাত তারা রাস্তায় সময় পার করেন। এছাড়া রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. মোশাররফ সমকালকে বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থীরা এখানে আছে, এজন্য আমিও আছি। আমার ছেলেদের রেখে আমি যেতে পারি না। আমাদের দাবি যৌক্তিক।’ 

শিক্ষার্থীদের ৩ দফা দাবি হলো-

আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।

বুধবার সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লংমার্চে শুরু করে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা। লংমার্চটি গুলিস্থান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে ১২টা ৪০ মিনিটে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি চার্জ করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন।

পরবর্তীতে রাতে উপদেষ্টা মাহফুজ সামনে বিফ্রিং করতে আসেন। তিনি বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের কথা সরকার শুনবে। এই সংকটের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবগত হয়েছেন। এর সমাধানের জন্য বারবার বসতে হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা।

এদিকে উপদেষ্টা মাহফুজের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। এখন তারা কাকরাইল মসজিদের সামনে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে আছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র দ ব উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। গত কয়েক বছরের মতো চলতি মৌসুমেও গাছ থেকে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। তবে ধারণা করা হচ্ছে কিছুদিন পরেই পরিপক্ব আম বাজারজাত করতে পারবেন বাগান মালিকরা। 

গতবারের তুলনায় এবছর আমের ফলন ‘কিছুটা’ ভালো হওয়ায় লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন তারা। এ মৌসুমে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভবনা দেখছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা।

কৃষি সম্প্রসারণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ১০০ হেক্টর কমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষাবাদ হচ্ছে। পাঁচ উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়েছে শিবগঞ্জে। এখানে ২০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। এছাড়া ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৩৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম জমিতে আম চাষ। চলতি বছর প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ৩ মেট্রিক টন হিসেব করে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা কৃষি বিপণনের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমের মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করছেন বাগান মালিকরা। এসব আম প্রতিকেজি গড়ে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এমন হিসেব করে এ বছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছরে প্রায় শতভাগ আম গাছে মুকুল এসেছিল। এতে চাষিরা আমের বাম্পার ফলন নিয়ে দারুণ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে এবার আশানুরূপ গুটির দেখা পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিকভাবে এবার বেশি ফলনের বছর হলেও আমের গুটি এসেছে খুবই কম। ফলে গুটিতে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কাঙ্খিত আমের ফলন পওয়া যায়নি।

আম চাষি গোলাম মোস্তাফা সুমন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার আমের ফলন খুব একটা ভালো না। যেভাবে মুকুল এসেছিল সেভাবে গাছে আম দাঁড়ায়নি। মৌসুমের শুরুর দিকে বিরূপ আবহওয়ায় আমের মুকুল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে কম গুটি বের হয়েছে। তীব্র খরায় আমের গুটি ঝরে গেছে। সবমিলিয়ে এবার আমের ফলন খুব একটা ভালো না।”

তিনি আরও বলেন, “বিরূপ আবাহওয়ার মধ্যেও যেসব বাগানে মুকুল ও গুটি টিকে গেছে, সেসব বাগানে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। যে বাগানে আমের মুকুল ও গুটি টেকেনি সেখানে কাঙ্খিত আমের দেখা নেই বললেই চলে।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে আম চাষাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের চাহিদা অন্য জেলার থেকে বেশি। এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। ফলে ভোজন রসিকরা চাঁপাইবাবগঞ্জের আম কখন পাকবে সেই দিনক্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকেন। 

বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ জেলার আম বাগানগুলোয় তিন দফা মুকুল আসে। যেসব গাছে অগ্রিম মুকুল আসে, সেই সব গাছে পরিপক্ব হয়ে আম পেকে যায় আগেই। তবে কিছু বাগানে বিছিন্নভাবে গোপলভোগসহ গুটি আম পাকার খবর শোনা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মুনজের আলম মানিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “এ বছর গাছ থেকে আম নামানোর জন্য নিদিষ্ট সময়সীমা নেই। যখন আম পাকবে তখনই বাজারে নামানো যাবে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু-কিছু বাগানে গোপালভোগ আম পাকার খবর শোনা গেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আম নামার সম্ভাবনা আছে। তবে এই মাসের শেষের দিকে গোপলভোগ ও গুটি আম বাজারে বিক্রি হবে বলে ধরাণা করা হচ্ছে।”

প্রাকৃতিকভাবে এবার আমের জন্য বেশি ফলনের বছর। চলতি মৌসুমে বাগানিরা আমের ফলন নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও গতবারের তুলনায় বেশি আম রয়েছে বাগানে। ধারণা করা হচ্ছে এবার আমের দাম তুলনামূলক কমই হবে। আম বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আমের চাহিদার থেকে আমের সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কমে যায়। 

ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম রাইজিংবিডিকে বলেন, “এখনও বাজারে আম নামেনি। ধারণা করা হচ্ছে- শুরুর দিকে রকমভেদে ৮০০ টাকা থেকে মণ দরে বিক্রি হবে গুটি, আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত গোপালভোগ এবং দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হবে ক্ষীরশাপাত আম। সরবরাহের উপর নির্ভর করে আমের দাম বাড়তে বা কমতে পারে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমের ফলন নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। এখন পর্যন্ত বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এই মাসের শেষের দিকে আম বাজারে নামতে পারে।”

বাণিজ্যের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোমিনুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, “এবার প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিকেজি আম ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলে দুই হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ