সিন্ডিকেটের কবলে ইজারা বন্দোবস্ত বিপুল রাজস্ব হারানোর শঙ্কা
Published: 15th, May 2025 GMT
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার প্রসিদ্ধ হাট টেংরাবাজারের ইজারা বন্দোবস্ত নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে খাস কালেকশনের নামে স্থানীয় একটি চক্রের হাতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব তছরুপ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজার গবাদি পশু বেচাকেনার প্রসিদ্ধ হাট। এ ছাড়া মাছ, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনায় এ বাজারের সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর দুই অংশে উপজেলা প্রশাসন থেকে বাজারটির ইজারা দেওয়া হয়। এ বছর পশুর হাট ছাড়া অন্য অংশ আয়কর, ভ্যাটসহ ১১ লাখের বেশি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পশুর হাট অংশের জন্য ৮টি শিডিউল বিক্রি হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা পড়েছে মাত্র একটি। যে একটি শিডিউল জমা পড়েছে, তাতেও সরকারি মূল্যের অর্ধেকের চেয়ে কম রাজস্বের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
রাজনগর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (১৪৩১ বঙ্গাব্দ) ৮১ লাখ টাকার মূল ইজারামূল্যের সঙ্গে আয়কর ভ্যাটসহ প্রায় এক কোটি এক লাখ ২৫ হাজার টাকা কোষাগারে জমা দেয় ইজারাদার পক্ষ। কিন্তু চলতি বছর (১৪৩২ বঙ্গাব্দ) সরকারিভাবে টেংরাবাজার পশুর হাটের ইজারামূল্য নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৮৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ৮টি শিডিউল বিক্রি হলেও সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় মাত্র ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব প্রস্তাব করে একটি শিডিউল জমা দেওয়া হয়েছে। আর কেউ জমা দেয়নি। উপজেলা প্রশাসন সাতবার টেন্ডার আহ্বান করেও সিন্ডিকেটের কারণে এতে সাড়া মেলেনি। এক পর্যায়ে রাজনগর উপজেলা প্রশাসন সভা আহ্বান করে খাস কালেকশন করার লক্ষ্যে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি গঠন করে। এ কমিটি উপজেলার কামারচাক তহশিল অফিসের সহকারী ভূমি অফিসার জামাল আহমদ, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন ও ব্যবসায়ী রাজীব তরফদারকে পশুর হাটের খাস কালেকশনের জন্য নিয়োগ দেয়।
গত পহেলা বৈশাখ থেকে স্থানীয় সহকারী ভূমি অফিসারের নেতৃত্বে প্রতি রোববার পশুর হাটের জমা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে সরকার নির্ধারিত মূল্য তথা গত বছরের ইজারামূল্যের অর্ধেকের চেয়েও কম অর্থ আদায় দেখানো হচ্ছে। গত বছরের রাজস্ব আদায়ের ভিত্তিতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা দুই লাখ ২৬ হাজার টাকা। কিন্তু চলতি বছর পশুর হাটে প্রতি সপ্তাহে ৮৭ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় দেখানো হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টেংরাবাজার হাটে খাস কালেকশনের ব্যবস্থা করে প্রতি সপ্তাহে আদায় করা অর্থের অর্ধেকের বেশি আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এদিকে ইজারা আদায়ে ব্যবহৃত রসিদে আদায়কারীর কোনো স্বাক্ষর কিংবা সিল ব্যবহার করা হয়নি। শনাক্তকারীর পরিচয় ও বিক্রেতার স্বাক্ষরও নেওয়া হচ্ছে না। এতে ভুয়া রসিদ বই বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে খাস কালেকশনে ইজারা আদায়ের দায়িত্ব পাওয়া স্থানীয় টেংরা ইউপির সদস্য মো.
টেংরাবাজারের ইজারা আদায়ে নিয়োজিত কামারচাক ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা জামাল আহমদ বলেন, ইজারা আদায়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় কিছু মিসিং হচ্ছে। এতে আদায় কম হতে পারে। রাজস্ব আয় বাড়াতে চেষ্টা করছেন তিনি।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা সমকালকে বলেন, টেংরাবাজার হাট থেকে রাজস্ব আদায়ে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য আবারও ওই হাটের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। খাস কালেকশনে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, জমা আদায়কারীদের কেউ দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে খাস কালেকশন কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জনগর উপজ ল খ স ক ল কশন অফ স র শ ড উল র ইজ র ত বছর
এছাড়াও পড়ুন:
হাওরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা
হাওরের বুক চিরে চলে গেছে পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা। দুই ধারে থৈ থৈ স্বচ্ছ পানি। তাতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ গোল পাতার ওপর নয়নাভিরাম সাদা শাপলা।
প্রকৃতিতে শরৎ এসেছে। তবে, হাওরে এখনো বর্ষার আমেজ। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে এখনো পানিতে টইটুম্বুর হাওর। পথে যেতে যেতে দেখা মেলে শিল্পীর আঁকা ছবির মতো দৃশ্য।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের পাশে কাউয়াদিঘি হাওরে পানির কমতি নেই। পানির ওপরে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা। স্বচ্ছ জলে ভাসছে হংস-মিথুন। এ যেন অপরূপ ছবির ক্যানভাস, রূপসী বাংলার শাশ্বত চিত্র।
এমন দৃশ্য দেখে হয়ত কেউ মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গাইছেন, ‘যখন তোর ঐ গায়ের ধারে/ঘুঘু ডাকা নিঝুম কোনো দুপুরে/ হংস-মিথুন ভেসে বেড়ায়/শাপলা ফোটা টলটলে ঐ পুকুরে’।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাউয়াদিঘি হাওরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে, সাদা শাপলা সবার মন কাড়ে। দূর-দূরান্ত মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সম্প্রতি হাওরপাড়ে দেখা হয় বেড়াতে আসা ফাহিম ও সুমন নামের দুই কিশোরের সঙ্গে। তারা বলে, অবসর পেলে একটু প্রশান্তির জন্য কাউয়াদিঘি হাওরপাড়ে আসি। প্রকৃতির রূপ দেখে মন ভরে যায়।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা বেতাহুঞ্জা মৌজার গেদন মিয়া বলেন, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় শরৎকালেও বর্ষার ভাব আছে। হাওরের পেট ভরে আছে বর্ষার জলে। এখনো সাদা শাপলা (স্থানীয় নাম ভেট বা হালুক ) ভালোভাবে ফোটেনি। ভালোভাবে ফুটলে আরো সুন্দর লাগবে।
হাওরের ভুরভুরি বিলের ধারে গেলে দেখা হয় প্রকৃতিপ্রেমী আবু বকরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাদা শাপলা হাওরের শোভা বাড়িয়েছে। স্বচ্ছ জলের মাঝে হংস-মিথুন ভেসে বেড়াচ্ছে। এ যেন কোনো শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। সাদা শাপলার জৌলুস প্রকৃতিকে আরো মনোহর করে তোলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অভিদপ্তরের রাজনগর উপজেলা কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লা আল আমিন বলেন, শাপলা সপুষ্পক পরিবারের জলজ উদ্ভিদ। সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল আমাদের দেশের হাওর, বিল ও দিঘিতে বেশি ফোটে।
ঢাকা/রফিক