১৩৩ সিসি ক্যামেরায় বাড়ল পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা
Published: 15th, May 2025 GMT
পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের সার্ভিস এলাকা ও সংযোগ সড়কসহ মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শিবচরের পাচ্চর পর্যন্ত ১৩৩টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পুরো পদ্মা সেতু এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আসায় নিরাপত্তা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন যানবাহনের চালক, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও যাতায়াতকারী যাত্রীরা।
পদ্মা সেতুর পুরো এলাকা সিসি টিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কাজ শেষ হয়েছে গত মঙ্গলবার। এতে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল ও নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারি সহজ হয়েছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট দূরত্বে পদ্মা সেতুজুড়ে চার ধরনের ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যামেরাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জুম হয়। মাওয়া প্রান্তের সেন্টারে বসে চারজন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে সেই স্থানে টহল দল পাঠাচ্ছে। এই ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু এখন প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পূর্ণতা পেয়েছে।
অন্যদিকে, দুই প্রান্তের এক্সপ্রেসওয়ের সর্বোচ্চ গতির মতো পদ্মা সেতুতেও যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। গতি নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাফিক আইন কার্যকরের ক্ষেত্রেও ক্যামেরাগুলো গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেতুতে দুর্ঘটনা ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল যানবাহনের অবস্থান দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়েছে। এতে ডাকাতিসহ নানা অপরাধের শঙ্কাও কেটেছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) পরিচালক (প্রশাসন) ও যুগ্ম সচিব আলতাফ হোসেন শেখ জানান, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে পর্যবেক্ষণ কক্ষ থেকে পুরো সেতু, দুই প্রান্তের সার্ভিস লেন, দুই টোল প্লাজাকে দূরবর্তী নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে বিবিএ প্রধান কার্যালয়ের সেতু ভবন থেকেও পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে কোনো দুর্ঘটনা হলে তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষক দল বা উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া কেউ কোনো ধরনের খারাপ কিছু করলে তা সঙ্গে সঙ্গে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, উচ্চ ক্ষমতার এই সিসি ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। জুম করলেও ছবি অস্পষ্ট হয় না। ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া শনাক্তকরণ ব্যবস্থা রয়েছে, ফলে আলাদা করে আবহাওয়া স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজন হয়নি। এটি তাপমাত্রা, আবহাওয়ার অবস্থা ও ঘন কুয়াশার সময় দৃশ্যমানতার মাত্রাও নির্দেশ করতে পারে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (টোল, ব্রিজ অ্যান্ড বিইএফ) আবু সায়াদ জানিয়েছেন, ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারির জন্য আলাদা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আছে, সেখানে চারজনের একটি দল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। কোনো উদ্ধার কাজের প্রয়োজন হলে টহল দলের মাধ্যমে সেই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক শেখ ইশতিয়াক আহমেদ জানান, পদ্মা সেতুতে আধুনিক ও অত্যন্ত উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। যাকে বলা হয়, ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস)। এর মধ্যে রয়েছে ভিডিও, যান শনাক্তকরণ ব্যবস্থা এবং রাস্তার আবহাওয়া ও তথ্য ব্যবস্থা। এগুলো একসঙ্গে কাজ করে। এর মাধ্যমে, যদি কখনও কোনো দুর্ঘটনা বা সমস্যা ঘটে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করা যায় এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অতিরিক্ত পরিচালক আরও জানান, আইটিএসের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, রাস্তার আবহাওয়া ও তথ্য ব্যবস্থা– যা দিয়ে সেতুর কোনো খুঁটিতে বা অন্য কোথাও তাপমাত্রা ও দৃশ্যমানতা নির্ধারণ করা যায়। বিশেষ করে শীতকালে যখন ঘন কুয়াশা থাকে, তখন এই ব্যবস্থা খুব কার্যকরী হয়। কারণ কুয়াশার কারণে যদি দৃশ্যমানতা ৪০ মিটার বা তার নিচে আসে, তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া