তিন দফা দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। গতকাল বুধবার দিনভর আন্দোলনের পর সারা রাত বেশ কিছু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কাকরাইল মোড়ে অবস্থান করেন। আজ বৃহস্পতিবারও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে কাকরাইল মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাকরাইল মোড় থেকে পল্টনের দিকের সড়কে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে অন্তত ২৪টি বাস কাকরাইল মোড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা আন্দোলনস্থলে যান।

দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চলমান আন্দোলনে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতিমধ্যে অনেক সাবেক শিক্ষার্থী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।

জামালপুর থেকে আসা মুকুল হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, গতকাল যা হয়েছে, সে জন্য না এসে থাকতে পারছেন না। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আঘাত সহ্য করতে পারছেন না।

চট্টগ্রাম থেকে আসা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী একরামুল হক এরফান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল দুপুরের দিকে যখন লাইভে দেখলাম আমার শিক্ষক, ভাইদের ওপর পুলিশ হামলা চালাচ্ছে, তখন আর স্থির থাকতে পারলাম না। অফিস শেষ করে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে। ভোর চারটায় এসে ঢাকায় নেমেছি। ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা যাব না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল থেকে বাসে করে শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চক্রাকার বাস চালু আছে, শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হলেই বাসে করে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সাবেক শিক্ষার্থীরাও এসে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।’

তিন দফা দাবি হলো-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা।

তিন দফা দাবিতে গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচি শুরু করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। একপর্যায়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পিছু হটেন। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান।

গতকাল বেলা ২টার দিকে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি বাসে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কয়েক শ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.

রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন ছিলেন।

বিক্ষোভকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে গতকাল জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। কারণ হিসেবে তিনি এখানে ১৪৪ ধারা বহাল থাকার কথা উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুনএখনো কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথের আন্দোলনকারীরা, তীব্র যানজট৩ ঘণ্টা আগে

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় যায়।

দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে গতকাল রাত ১০টার পর অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে। বক্তব্য চলাকালে ভিড় থেকে তথ্য উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করা হলে তাঁর মাথায় লাগে। এরপর বক্তব্য বন্ধ করে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

আরও পড়ুনকাকরাইল মোড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিলেন জগন্নাথের ভিসি২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল দিবাগত রাত ১২টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন। তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এ ঘটনার দায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নেবে না বলে জানান। এ সময় অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শামসুল আরেফিন। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া তাঁরা কোনোভাবেই এই জায়গা ছেড়ে যাবেন না।

আরও পড়ুনপল্টনে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড০৭ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনলংমার্চে লাঠিপেটার পর বিক্ষোভ, চলছে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান১১ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র গতক ল ব

এছাড়াও পড়ুন:

পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ১১

চট্টগ্রামের পটিয়ায় থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের চার সদস্য ও আন্দোলনকারী পক্ষের অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন বলে উভয় পক্ষ দাবি করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আন্দোলনকারী পক্ষের সূত্রে জানা গেছে, রাত নয়টার দিকে পটিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের এক নেতাকে আটক করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। পরে তাকে পটিয়া থানা চত্বরে নিয়ে আসা হয়। তবে ওই ছাত্রলীগ নেতার নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে চায়নি। এ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি পটিয়ায় ঘটনাস্থলে গেছি। আমাদের কর্মীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।’

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাহেদ মো. নাজমুন নূর সমকালকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের এক নেতাকে থানায় নিয়ে এসেছিলেন। তবে নিয়ে আসার পরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তাকে মারধর করা হচ্ছিল। একদল নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে থানায় মব নিয়ে ঢুকে যাচ্ছিল। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এতে তিন–চারজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ