আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’নামে একটি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ৪৯টি প্রগতিশীল নারী-শ্রমিক-সাংস্কৃতিক-শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী সংগঠন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর-রুনি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত। সেখানে বলা হয়, যখন গণ–অভ্যুত্থানের অংশীদারত্ব থেকে নারীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন এই ঘটনা বাংলাদেশের জুলাই–পরবর্তী নারী আন্দোলনের একটি মাইলফলক ঘটনা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বা পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো আন্দোলনে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আন্দোলন শেষে নারীর প্রকৃত মূল্যায়ন করা হয়নি।

বলা হয়, ইতিহাস রচনার সময় নারীর ভূমিকা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। নারীমুক্তি কোনো বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক বিষয় না। বরং সমগ্র রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তির সঙ্গে এই নারীমুক্তির প্রশ্নটি জড়িত। সেই মুক্তির যাত্রায় নারী কিছু হিস্যা বুঝে নেবেন।

সাংবাদ সম্মেলনে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমান হিস্যা, সমশ্রমে সমমজুরি, পরিবার-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মস্থলে যৌন হয়রানি নিরসনে ভূমিকা, কৃষি ও মৎস্য কাজে নারীর স্বীকৃতি, বিচারিক প্রক্রিয়ায় নারীর ন্যায্য বিচার পাওয়া নিশ্চিত করা, পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়ন বন্ধ, নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত, যৌনকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত, একই সঙ্গে যৌন পেশার অবসান ঘটানো, ধর্ষণ বন্ধ করা, বাল্যবিবাহ ও যৌতুক প্রথার অবসানের মতো বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

সীমা দত্ত বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারীর ভূমিকা ছিল অগ্রগামী। কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা বেড়েই চলেছে। অথচ এর বিরুদ্ধে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। আমাদের ‘নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা’ কর্মসূচি সেই প্রতিবাদের একটি সম্মিলিত রূপ। যেখানে শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ পরিচয়, রাজনৈতিক অবস্থান পেরিয়ে নারীরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ধারাবাহিকতা চলমান উল্লেখ করে সীমা দত্ত বলেন, ফুটবল খেলার মতো সাধারণ কাজেও নারীরা মব হুমকির মুখে পড়ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ হাসিনা হলে হামলা হয়েছে। নারী সাংবাদিকদের হয়রানি করা হয়েছে। শাহবাগে হেনস্তার শিকার এক নারী শিক্ষার্থীকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামেও নারীদের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি বান্দরবানে বম ও খিয়াং জাতিসত্তার নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা উঠে এসেছে। চিংমা খিয়াং নামের এক পাহাড়ি গৃহবধূকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। তবে এখনো অপরাধী ধরা পড়েনি। লালমাটিয়ায় দুই নারীর ধূমপানের ঘটনায় অভিযুক্ত চিহ্নিত হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ সময় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিদ্বেষমূলক বক্তব্যেরও কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, ধর্ম ও নারীকে মুখোমুখি দাঁড় করানো এই দেশের শাসকশ্রেণির এক চিরায়ত ষড়যন্ত্র। নারীকে রাজনীতিতে ইস্যু বানানো হয়। দিনে দিনে নারীর প্রতি সহিংসতা গভীর রূপ নিয়েছে। অপর পক্ষে রাষ্ট্র নীরব।

অর্থনৈতিক কাঠামোতেও নারীর নিপীড়িত হওয়ার ঘটনা কম নয় বলে উল্লেখ করেন সীমা দত্ত। তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিক, যৌনকর্মী, পাহাড়ি নারী, কিংবা কলেজশিক্ষিকা—সব শ্রেণির নারীই রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মাধ্যমে বঞ্চনার শিকার। গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের শত শত নারী শ্রমিক এখনো তাঁদের মজুরি পাননি। যৌনকর্মীদের ওপর একাধিক হামলা হলেও রাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি আগামীকালের অনুষ্ঠানে সবাইকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান। আজকের সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সহসভাপতি জলি তালুকদার, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুমসহ ৪৯টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।

এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।

অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।

আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগে

এ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।

সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।

এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।

আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ