গণঅনশনে জবি শিক্ষার্থীরা, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
Published: 16th, May 2025 GMT
দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে কাকরাইল মসজিদ মোড়ে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে অনশন শুরু করেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া।
তিনি বলেন, আমরা যখন ক্যাম্পাস থেকে এসেছি, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে ফিরব না। এই মুহূর্ত থেকে আমাদের গণঅনশন শুরু হলো।
এর আগে বিকাল তিনটায় সমাবেশে জবি ঐক্যের পক্ষ থেকে একই ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব লিমন। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে, আমাদের আর পেছনে ফেরার জায়গা নেই। আমরা বিকেল সাড়ে তিনটায় অনশন কর্মসূচি শুরু করব। বিজয় না নিয়ে আমরা ফিরছি না।
এর আগে বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.
অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, আমরা সরকারের কাছে আমাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়েছিলাম। তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মেরেছে কিন্তু আমাদের অধিকারের বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা আসেনি।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো- আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাঁটছাট না করেই অনুমোদন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন এবং শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনা।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজে ফিরেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা, সচল বন্দর
কয়েকদিনের অচলাবস্থার পর গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার হচ্ছে খবর পেয়ে রোববার বিকেলেই বিভিন্ন বন্দরে কাস্টমস কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ এর অধীন দেশের সব কর কার্যালয় এবং বন্দর, কাস্টমস ও শুল্ক ষ্টেশনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাভাবিক সময়ে কাজে যোগ দেন।
এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, কাস্টম হাউসগুলো রোববার বিকেল থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করে। সোমবার সকালেই সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকসহ সবার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে যৌক্তিক সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তারা প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেছেন। এতে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। গত শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর পাশাপাশি ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণার পর কাস্টমসসহ পুরো এনবিআরের কার্যক্রম স্থগিত হলে বিভিন্ন বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে সরকারের কঠোর অবস্থান ঘোষণা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতার কারণে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত প্রায় দুই মাসের আন্দোলনে রাজস্ব আদায় ব্যাহত হলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে কিছুটা হলেও প্রবৃদ্ধি থাকবে। তিনি জানান, গতকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। সকালে এ তথ্য জানানোর সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, সোমবার ভালো অঙ্কের রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হবে। সরকারি বিলগুলো সমন্বয় হলে আগের অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আয় বেশি হবে।
সচল সব বন্দর
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর দেশের প্রধান দুই সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়েছে। পাশাপাশি বেনাপোলসহ সব স্থলবন্দরেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার রাতেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন শুরু হয়। এর পর সোমবার সকাল থেকে আমদানি পণ্যের শুল্কায়নসহ বিল অব এন্ট্রি, বিল অব এক্সপোর্ট, শুল্ক পরিশোধ, পরীক্ষণ, ডেলিভারিসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। রপ্তানি পণ্য নিয়ে চারটি জাহাজ ইতোমধ্যে বন্দর ত্যাগ করেছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম জানান, সোমবার সকাল থেকে আমদানি শুল্কায়নও পুরোদমে শুরু হয়েছে। বিকডার মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার জানান, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৯১৫টি রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দু’দিনের কর্মবিরতিতে স্থবির হওয়া বেনাপোল স্থলবন্দরে সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি ফের শুরু হয়েছে। কাস্টমস অফিসে শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও ডেলিভারির কাজ নিয়ে কর্মকর্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, প্রায় দুই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে।
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার ম. সফিউজ্জামান জানান, গত কয়েকদিনে কাস্টমসের লোকসান হয়নি, কারণ জাহাজ ছিল না। সকাল থেকে পণ্য ছাড় হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, আন্দোলনের সময়ও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। এখন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।