ব্যোমিকা–ভারতীর জাত জানলে বিজেপি তাদেরও নিশানা করত: এসপি নেতা
Published: 16th, May 2025 GMT
কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে ‘ধর্মবিদ্বেষী’ মন্তব্যের পিঠে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করলেন সমাজবাদী পার্টির (এসপি) নেতা রামগোপাল যাদব। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, কর্নেল সোফিয়ার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিজেপি উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাত জানলে ওঁদেরও নিশানা করত।
রামগোপালের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন উত্তর প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রামগোপালের ‘সংকীর্ণ মানসিকতার’ সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীর পোশাককে বর্ণবাদের দৃষ্টিতে দেখা হয় না। তাঁরা ধর্ম বা বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। প্রত্যেকে জাতীয় কর্তব্য পালন করেন।
বিজেপি–শাসিত মধ্যপ্রদেশের উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলে বিপাকে পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরন ও বিচারপতি অনুরাধা শুক্লা। সেই অনুযায়ী রাজ্য পুলিশ এফআইআর দাখিল করেছে।
বিজয় শাহের বিরুদ্ধে এফআইআর ‘নরম’ হওয়ায় পুলিশকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে। হাইকোর্ট নতুনভাবে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে বিজয় শাহ সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হলেও সর্বোচ্চ আদালত তা নাকচ করে দিয়েছেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্য রামগোপাল যাদব নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাতগত পরিচয় প্রকাশ করে। বলেছেন, ওই দুজনের জাত জানলে বিজেপি তাঁদেরও ছেড়ে দিত না।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালানোর পর সরকার সংঘাতের বিয়ষে ব্রিফিংয়ের জন্য তিনজনের একটি দল গঠন করেছিল। সেই দলে পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ছিলেন। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে যাঁরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী।
মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ এক সভায় সোফিয়ার নাম না করে বলেন, ‘যারা আমাদের মা–বোনদের সিঁথির সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদেরই বোনকে ব্যবহার করে হামলাকারীদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওদের বোনকে দিয়েই ওদের সর্বনাশ করেছেন।’
কর্নেল সোফিয়াকে ‘সন্ত্রাসীদের বোন’ বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রতিবাদ। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতিরা মন্ত্রীকে ভর্ৎসনা করে পুলিশকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। বিরোধীরা দাবি করেন, মন্ত্রীকে বরখাস্ত করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টও বিজয় শাহর আবেদন নাকচ করে বলেন, সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের কথবার্তায় লাগাম থাকা জরুরি।
এই বিতর্কের মধ্যেই আসর গরম করেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টির নেতা রামগোপাল যাদব। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বিজেপির এক মন্ত্রী কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে কুমন্তব্য করেছেন। কিন্তু ওই মন্ত্রী জানতেন না, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং ও এয়ার মার্শাল এ কে ভারতীর জাত কী। জানলে তাঁদেরও আক্রমণের নিশানা করা হতো।
ভারতের মুসলিম নারী সেনা কর্মকর্তা সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি–দলীয় মন্ত্রী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ন ড র ব য ম ক কর ন ল স ফ য় ব জয় শ হ মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
কর্নেল সোফিয়াকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ‘বোন’ আখ্যা দিয়ে বিপাকে মধ্যপ্রদেশের বিজেপিদলীয় মন্ত্রী, মুখ বন্ধ মোদির
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে কটূক্তি করে বিপাকে পড়েছেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ। মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি অতুল শ্রীধরণ ও বিচারপতি অনুরাধা শুক্লা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজ্যের এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের ওই নির্দেশের পরেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব এক্সে জানান, উপজাতিকল্যাণমন্ত্রী বিজয় শাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলা হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ওই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন বিজয় শাহ। তাঁর আইনজীবীর আবেদন, মন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁকে ভুল বোঝা হয়েছে। গণমাধ্যমে তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি এ জি মাসিহ স্থগিতাদেশ না দিয়ে বলেন, আজ তাঁরা আবেদন শুনবেন। তার আগে স্থগিতাদেশের জন্য আবেদনকারী হাইকোর্টে যেতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘সাংবিধানিক পদমর্যাদার ব্যক্তিকে দায়িত্বশীল হতে হয়। তাঁর জানা দরকার কী বলছেন, কখন বলছেন। বিশেষ করে দেশ যখন এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে।’
দলমত–নির্বিশেষে সবাই বিজয় শাহর সমালোচনায় মুখর। বিরোধী কংগ্রেস তো বটেই, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের মধ্য থেকেও তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি উঠেছে।
হাইকোর্টের দুই বিচারপতি গতকাল পুলিশকে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়ে বলেন, কর্নেল সোফিয়াকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বিজয় শাহ যা বলেছেন, তা ‘নর্দমার ভাষা, ভয়ংকর ও ক্যানসার তুল্য’। বিচারপতিরা বলেন, মন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি, হানাহানি ও সম্প্রীতি নষ্টে মানুষকে প্ররোচিত করবে।
পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনী অপারেশন সিঁদুর শুরু করার পর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত ব্রিফিং করা হতো। সেই ব্রিফিংয়ে অংশ নিতেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তাঁদের সঙ্গে থাকতেন পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।
কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং মধ্য প্রদেশের বিজেপি নেতা ও মন্ত্রী বিজয় শাহ