মহাসড়ক অবরোধ করে গতিরোধক স্থাপনের দাবি
Published: 16th, May 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গায় গতিরোধক (স্পিডব্রেকার) স্থাপনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার ইউটার্নের কাছে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা জানান, ওই মহাসড়কের জৈনাবাজার ইউটার্নে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় সময়ই এখানে প্রাণ যায় মানুষের। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। বৃহস্পতিবারও ইউটার্নটিতে অজ্ঞাত একটি গাড়ির চাপায় শওকত হোসেন নামের এক ভ্যানচালক নিহত হন। ইউটার্নটি বিপজ্জনক হলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
দ্রুত সময়ের মধ্যে জৈনাবাজার ইউটার্নের কাছে স্পিডব্রেকার নির্মাণের দাবি তোলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া স্থানীয় লোকজন। পাশাপাশি দুই পাশে ভাঙা সড়ক সংস্কারের আহ্বান জানান। তাদের অবরোধের কারণে ঘণ্টাখানেক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়।
সংবাদ পেয়ে সেখানে যান শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ। তিনি দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে যান। সজীব আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে দাবি নিয়ে কথা হয়েছে। শিগগিরই সমস্যাটির সমাধান হবে বলে আশা করছি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১৫৬ শিক্ষার্থী থাকলেও নেই কোনো শিক্ষক–কর্মচারী
সবুজ চত্বরে কংক্রিটের ভবনগুলোতে নতুনত্বের ছাপ। ক্যাম্পাসে তিনটি ব্যাচে আছেন শ দেড়েক শিক্ষার্থীও। কিন্তু নেই কোনো স্থায়ী শিক্ষক আর প্রশাসনিক জনবল। ভবন থাকলেও পাঠ গ্রহণের উপযুক্ত ল্যাব–সুবিধা, চেয়ার-টেবিল নেই। হোস্টেলগুলোতে ছাত্রছাত্রীরা ঠিকই থাকছেন, কিন্তু তাঁদের দেখভালের জন্য কেউ নেই। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরা আছেন নিরাপত্তা শঙ্কায়। সব মিলিয়ে পুরো ক্যাম্পাস যেন ‘এতিম’। এমন নিদারুণ পরিস্থিতিতেই চলছে ময়মনসিংহ নগরীতে অবস্থিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) কার্যক্রম।
ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা এলাকায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অবস্থান। নির্মাণকাজ শেষ হলে কোনো জনবল নিয়োগ না দিয়েই ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ল্যাবরেটরি ও রেজিওলজি বিভাগের পাঠ কার্যক্রম চালু হয় এ প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনটি ব্যাচে ১৫৬ জন শিক্ষার্থী আছেন। এসএসসি পাসের পর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে চার বছর মেয়াদি এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে মোট ২৩টি আইএইচটি রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান। গত ৪ মার্চ তিনি ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি হয়ে যান। এর পর থেকে প্রশাসনিক দায়িত্বে আর কেউ নেই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দুজন শিক্ষক সপ্তাহে দুই দিন করে পাঠ কার্যক্রম চালান। এর বাইরে প্রতিষ্ঠানটিতে আর কোনো ক্লাস হয় না।
মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে ৪৩৫ জন জনবলের চাহিদা দিয়ে জনবলকাঠামো অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও শুধু ৩৫ জন অনুমোদন দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ফাইল সেখানেই আটকে আছে।
শুক্রবার সকালে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে আছে একটি চারতলা একাডেমিক ভবন, একটি পুরুষ ও একটি নারী আবাসিক হল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনও। পুরো চত্বরে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলময় পরিস্থিতি। একাডেমিক ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে আছে প্যাকেটবন্দী কিছু জিনিসপত্র। নিচতলার একটি কক্ষকেই শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে কিছু চেয়ার ও একটি টেবিল আছে। এ ছাড়া পুরো ভবনে কক্ষ থাকলেও নেই আসবাব ও যন্ত্রপাতি। দ্বিতীয় তলা থেকে ওপরের দিকে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষে ধুলার আস্তর পড়ে আছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগভিত্তিক কোনো শিক্ষক না থাকায় ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীদের ক্লাস বন্ধ প্রায় ছয় মাস। ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক কোনো যন্ত্রপাতি এবং ক্লাসে পর্যাপ্ত আসবাব যেমন চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ ইত্যাদি দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া হলে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আসবাব বিছানা, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি দেওয়া হয়নি। নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী।
৯ লাখ ১১ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় ২৫ জুন বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কোনো লোক না থাকায় শিক্ষার্থীরাই বিদ্যুৎ বিভাগ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কাছে দৌড়ঝাঁপ করেন। পরে রাত ১২টার দিকে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ময়মনসিংহ দক্ষিণের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বকেয়ার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব স্যার ফোন করে জানিয়েছেন সারা দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একই অবস্থা। আগামী জুলাইয়ের দিকে টাকা পরিশোধ করা হবে জানানো হলে আমরা সংযোগ লাগিয়ে দিয়েছি।’
প্রতিষ্ঠানটির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মফিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানে কোনো অধ্যক্ষ নেই। সব প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির। স্থায়ী কোনো বিভাগভিত্তিক শিক্ষকও নেই। তাই একাডেমিক কার্যক্রম ধীরগতির। প্রতিষ্ঠানে মাত্র একজন নৈশপ্রহরী আছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় ইতিমধ্যে দুবার ক্যাম্পাসে চুরি হয়েছে। বর্তমানে হোস্টেল মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন ছাত্রছাত্রী আছেন, যাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এতিমের মতো এখানে আছি। কোনো সমস্যা হলে কার কাছে যাব, এমন কেউ নেই। বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিচ্ছেন। আতিকুর রহমান রোববার ও বৃহস্পতিবার এবং জান্নাতুল ফেরদৌস রোববার ও মঙ্গলবার ক্লাস নেন। তবে এর জন্য অতিরিক্ত কোনো সুবিধা তাঁরা পান না।
রেডিওগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী সুবর্ণা রানী দাস ও আবিদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা হোস্টেলে থাকি। কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই। একই ক্যাম্পাসে ছেলে ও মেয়েরা থাকলেও ক্যাম্পাসের ছেলেরা বিরক্ত করে না। কিন্তু বাইরে থেকে অনেক উচ্ছৃঙ্খল ছেলে মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে। আমরা সব সময় নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগি।’
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘২০২২ সালে আমাকে তৎকালীন সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি করার পর সংযুক্ত করে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে ভবন ছাড়া আর কিছু ছিল না। সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলে কিছু চেয়ার–টেবিল দিয়ে পাঠ কার্যক্রম আমি শুরু করেছিলাম। আমি সেখান থেকে চলে আসার সময় কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম সেখানে একজন অধ্যক্ষ দেওয়ার জন্য, কিন্তু দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটির জনবলকাঠামো অনুমোদনই হয়নি। এ অবস্থায় একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না।’
ময়মনসিংহে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির অবস্থা নজরে আনা হলে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মিছবাহ উদদীন আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবলকাঠামো অনুমোদন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান আছে।