এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি: কলম বিরতি কর্মসূচি বাড়ল আরও একদিন
Published: 17th, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে নতুন অধ্যাদেশ বাতিল এবং টেকসই রাজস্ব সংস্কারের দাবিতে চলমান কলম বিরতি কর্মসূচি আরও একদিন বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি দাবি আদায়ে আগামীকাল রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আজ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালনের পরে সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার মো.
আসাদুজ্জামান বলেন, পরবর্তী কর্মসূচি হলো- আগামীকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা কলম বিরতি চলবে। আগের মতোই আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি এবং জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
গত ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করার বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের ২৫ দিন পর এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
অধ্যাদেশের খসড়াতেই আপত্তি জানিয়ে এটি বাতিলের দাবি তোলেন আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের সদস্যদের সমিতি। ক্যাডার সার্ভিসের বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এই দাবির পক্ষে এক জোট হন।
তবে শুরুতে কর্মকর্তাদের দাবির পক্ষে অনড় থাকলেও ধীরে পরে দুই সমিতির শীর্ষ নেতারা পিছু হটেন। আর এতে সমিতির পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা গত বুধবার পদত্যাগ করেন। অধ্যাদেশ বাতিল করে সবার মতামত নিয়ে নতুন করে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে ঐক্য পরিষদের ব্যানারে গত বুধবার থেকে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান বলেন, তাদের স্পষ্ট বার্তা তারা সংস্কারের পক্ষে। রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা পৃথক হোক, সেই বিষয়ে সবাই একমত। তবে, এই সংস্কার হতে হবে বাস্তবমুখী, অংশীজনের মতামতভিত্তিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সর্বোচ্চ মূল্যায়নের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, এটি বরাবরই একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন। কিন্তু শুক্রবার কতিপয় বহিরাগত অনুপ্রবেশ করানোর মাধ্যমে আন্দোলনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করেছে। ঐক্য পরিষদ এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই অচলাবস্থার নিরসন করতে চায় ঐক্য পরিষদ। আলোচনা করলে এই পরিস্থিতির নিরসন হবে।
নিপুণ চাকমা বলেন, সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের অনির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে, বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির প্রায় সকল সদস্য পদত্যাগ করায় এটিও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সুতরাং, এই দুই অ্যাসোসিয়েশন এখন আর এই দুই ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এমতাবস্থায়, বিলুপ্ত ও অকার্যকর এই দুই কমিটির নামে যে কোনো বক্তৃতা, বিবৃতি ব্যক্তিগত বলে গণ্য হবে।
সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা বলেন, দেশের স্বার্থে রাজস্ব ব্যবস্থার একটি যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজন। এনবিআরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। সংস্কারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও কাস্টমস ও ট্যাক্স সার্ভিসের হাজার-হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
এই নতুন অধ্যাদেশ রাজস্ব ব্যবস্থায় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বলে ঐক্য পরিষদ মনে করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর র কর মকর ত র মত মত
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করে যে তরুণ
মানবসেবাই জলীল হাওলাদারের ধ্যান-জ্ঞান। ২০২৪ সালে ৪০০ ব্যাগের ও বেশি রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। নিজে রক্ত দিয়েছেন ১৩ বার। রাত-দিন নেই। যে কারও রক্তের প্রয়োজনে ছুটে যান। রক্তদাতার জন্য হাসপাতালে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এসেছে টের পাননি। কখনও বা বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়েছেন রাত। টগবগে এই তরুণ বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাশাপাশি রক্ত সংগ্রহে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
১৩ অক্টোবর ২০২১। পরিচিত এক লোক ফোন করে বলেন তাঁর মায়ের জন্য রক্ত প্রয়োজন। রোগীর অবস্থা ভালো ছিল না। রক্তের খুবই প্রয়োজন ছিল। জলীল দ্রুত গিয়ে রক্ত দেন। যদিও রক্তদান বলতে তিনি নারাজ। তাঁর ভাষায়, এটি হলো লাল ভালোবাসা। এভাবে রক্তদানের শুরু। একই বছর বরিশালে এক রোগীর ও নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন। জলীল খবর পেয়ে পটুয়াখালী থেকে রক্তদাতা এনে রক্তের ব্যবস্থা করেন। এটি হলো তাঁর রক্তদাতা সংগ্রহের প্রথম কাজ। তবে বেশ গোছালোভাবে তাঁর রক্তদাতা সংগ্রহের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বরিশাল ব্লাড ডোনার্স ক্লাবে যোগ দেওয়ার পরে। এই সংগঠনে যুক্ত হয়ে রক্তদাতা সংগ্রহে ও যোগাযোগ দক্ষতায় অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ বিবিডিসির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন। ওই দিন জলীলকে সর্বোচ্চ রক্তদাতা সংগ্রহকারীর অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পান সেরা স্বেচ্ছাসেবক অ্যাওয়ার্ডও।
মানুষের উপকার করার চিন্তা জলীলের ছোটবেলা থেকে। ছোটবেলায় কঠিন রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন অন্যের সহযোগিতায় তাঁর চিকিৎসা সম্পন্ন হয়। জলীলের ভাষায়, ‘অন্যের উপকারে যদি আমি বেঁচে যেতে পারি তাহলে আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অন্য মানুষদের কেন উপকার করব না? আর রক্তদান এবং রক্তদাতা সংগ্রহে তো কোনো ক্ষতি নেই। অন্য দশটা কাজের পাশাপাশি এসব করা যায়।’
জলীলের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার ৬নম্বর জাগুয়া ইউনিয়নের আস্তাকাঠী গ্রামে। তিনি নিজে এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ১৩ বার। শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর রক্ত সংগ্রহ ১০০০ ব্যাগ ছাড়িয়েছে। রক্তদাতা সংগ্রহে ভালো-মন্দ দুই ধরনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ জলীল। তবে নিজেকে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে মনে করেন তিনি।