শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পোপ নির্বাচনের বিষয়টি শুধু ধর্মীয় বিষয় হিসেবে চালু ছিল না; বরং এটি একধরনের কূটনৈতিক লড়াইও ছিল। প্রাচীন ইতালির বড় নগররাষ্ট্রগুলো (যেমন মিলান, ফ্লোরেন্স ও নেপলস এবং পরে ইউরোপের বড় শক্তিগুলো, যেমন স্পেন, ফ্রান্স ও পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য) এই নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করত এবং নিজেদের পছন্দের একজন পোপ বসাতে চাইত।

তবে এই পুরো প্রক্রিয়ার আড়ম্বর, গোপনীয়তা ও রহস্যময়তা (যা ২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কনক্লিভ’ সিনেমায় দেখানো হয়েছে) এমনভাবে বার্তা দেয় যেন এখানে কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে না; যেন ঈশ্বরের ইচ্ছাই এখানে কাজ করছে।

বিশ্বের পরিস্থিতি যতই বদলাক, বিশ শতকে এসে দেশগুলো আর সরাসরি তাদের নিজস্ব পোপ বসানোর জন্য প্রচারণা চালায়নি। তবে এই নিয়ে রাজনীতি তখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে টিকে ছিল। শেষবার কোনো রাজনৈতিক নেতা সরাসরি কোনো পোপ পদপ্রার্থীকে ভেটো দিয়েছিলেন ১৯০৩ সালে। তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরির জার (এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের শেষ প্রতীক) প্রবীণ সম্রাট ফ্রানৎস যোসেফ শীর্ষ প্রার্থীকে আটকে দিয়েছিলেন।

যদিও এরপর সরাসরি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আর হয়নি, তবু নির্বাচিত পোপ শুধু ধর্মতত্ত্বের দিক থেকে নয়, বরং বিশ্বের পরিস্থিতি প্রতিফলিত করে—এমন একজন হিসেবেই বিবেচিত হয়েছেন।

উদাহরণ হিসেবে পঞ্চদশ বেঞ্জামিনের কথা ধরা যাক। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পরপরই নির্বাচিত হন। যদিও তিনি ভার্সাই চুক্তির আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি, তবে তিনি ‘পোপের শান্তির’ ডাক দিয়েছিলেন। এর ফলে ভ্যাটিকান সরাসরি ফ্রানৎস যোসেফের উত্তরসূরির সঙ্গে আলোচনায় বসে। তাঁর উত্তরসূরি অ্যামব্রোজিও রাত্তি (যিনি তখন পোল্যান্ডে ভ্যাটিকানের দূত বা নুনসিও হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন) ৯২০ সালের পোল্যান্ড-সোভিয়েত যুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ ওয়ারশ শহর ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। জাতীয়তাবাদ ও একনায়কতন্ত্র যখন বাড়ছিল, তখন রাত্তি নিজেকে দক্ষ কূটনীতিক হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন এবং পরে ১৯২২ সালে পায়াস একাদশ হিসেবে নির্বাচিত হন।

একাদশ পায়াসের পরবর্তী উত্তরসূরি ইউজেনিও পাচেল্লির ক্ষেত্রে বিষয়টি ছিল আরও জোরালো। ১৯৩০-এর দশকে নাৎসি জার্মানি যখন সভ্যতা ও খ্রিষ্টধর্মের জন্য একটি গভীর হুমকি হয়ে উঠছিল, তখন পাচেল্লি ছিলেন জার্মানির একজন গভীর শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। তিনি ১৯১৯ সালে বাভারিয়ায় একটি কমিউনিস্ট বিপ্লবের সময় ভ্যাটিকানের দূত ছিলেন এবং পরে নাৎসিদের উত্থান প্রত্যক্ষ করেন। পরে তিনি পায়াস দ্বাদশ নামে পোপ হয়ে জার্মান সমস্যার মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দেয়।

অনেকের মতে, তিনি মনে করেছিলেন, প্রকাশ্যে নাৎসি মতাদর্শের বিরুদ্ধে মুখ খুললে ইউরোপজুড়ে ক্যাথলিকদের রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই ভাবনা থেকেই তিনি চুপ থেকেছিলেন। এর ফলাফল ছিল একটি গভীর বিতর্কিত উত্তরাধিকার।

২০২৫ সালে যদি কেউ পোপ নির্বাচন নিয়ে ভাবেন, বিশেষ করে এর সঙ্গে জড়িত বড় অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে তাঁর মনে হতে পারে, আফ্রিকাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। কারণ, এ মহাদেশেই এখন সবচেয়ে দ্রুত হারে মানুষ বাড়ছে, আর এখানেই ক্যাথলিক ধর্ম সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হচ্ছে।

যেমন কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে যখন এক বড় মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয়, তখন অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, সে দেশের কার্ডিনাল ফ্রিডোলিন আমবঙ্গো বেসুংগুই হয়তো পরবর্তী পোপ হতে পারেন। তাঁকে তখন ‘পোপ হওয়ার সম্ভাব্য ব্যক্তি’, মানে ‘পাপাবিলে’ হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—একজন মার্কিন নাগরিককে পোপ বানানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন ও সি চিন পিংয়ের যুগে শান্তি ও সামাজিক ঐক্যের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য পথ তৈরি করতে হলে রেনেসাঁ যুগের রাজনীতিভিত্তিক বাস্তববাদের মতো ব্যাপক কৌশল লাগবে। তবে ভালো খবর হলো, অনেক সময় ভ্যাটিকানের কূটনীতি অসাধারণ সফলতা আনতে পারে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত যিনি পোপ নির্বাচিত হলেন, তাঁর নির্বাচন কি সত্যিই পবিত্র আত্মার ইচ্ছায় হলো, নাকি বাস্তব রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে? মনে হলো, এ সময়ের সবচেয়ে বড় বিপদ আফ্রিকায় নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, সেখানে এমন এক ধরনের খ্রিষ্টধর্ম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা আসলে খ্রিষ্টধর্মের প্রকৃত শিক্ষা থেকে অনেক দূরে। তারা বলে, এটা মৌলিক খ্রিষ্টধর্ম, কিন্তু আসলে এটা চরমভাবে বর্ণবাদী (অন্য জাতিকে ছোট করে দেখা) আর ভোগবাদী (ধনসম্পদ ও বিলাসিতার প্রতি আসক্ত)। তারা এমন এক ‘সমৃদ্ধির বাণী’ প্রচার করে, যেখানে বলা হয়, খ্রিষ্টান হলে ধনী হওয়া উচিত—যা বাইবেলের নতুন নিয়ম বা শিক্ষা একেবারেই সমর্থন করে না।

এ পরিস্থিতিতে গির্জা কীভাবে শান্তির কথা বলবে, যখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি হয়ে উঠেছে স্বার্থপর আর কেবল লেনদেনের হিসাব-নিকাশে গড়া?

এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে খ্রিষ্টধর্ম বিকৃত হচ্ছে, তা কি থামানো যাবে? পোপ নির্বাচনের মাধ্যমে গির্জা এর জবাব দিয়েছে। নতুন পোপ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে কার্ডিনাল রবার্ট প্রেভোস্টকে। তিনি আমেরিকান, কিন্তু জীবনের অনেক সময় পেরুতে মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন, এরপর ভ্যাটিকানে উচ্চপদেও ছিলেন। এখন তিনি পোপ ফ্রান্সিসের জায়গায় পোপ লিও চতুর্দশ হয়েছেন।

আগের পোপ ফ্রান্সিসের মতোই নতুন পোপ লিও চতুর্দশও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের বক্তব্যের কড়া বিরোধিতা করেছেন। ভ্যান্স কিছুদিন আগে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন এবং তিনি বলেন, যিশুর ভালোবাসা সবার জন্য সমান নয়। তিনি আরও বলেন, কাকে আগে, কাকে পরে ভালোবাসা উচিত, সেটা ঠিক করা দরকার।

পোপ প্রেভোস্ট গত ফেব্রুয়ারিতে লিখেছেন, ‘ভ্যান্স ভুল বলছেন। যিশু কখনো বলেননি, আমরা কাকে আগে বা পরে ভালোবাসব।’

লিও চতুর্দশ নিজের নাম নির্বাচন করেই যেন ফিরে গেলেন লিও ত্রয়োদশের সময়ের দিকে। লিও ত্রয়োদশ ১৮৯১ সালে একটি বিখ্যাত চিঠি লিখেছিলেন, যেটি গরিব মানুষ, শ্রমজীবী শ্রেণি এবং সমাজে ন্যায়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছিল। পোপ ফ্রান্সিসের ভাবনায়ও এ চিঠির প্রভাব ছিল। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে যে বিপ্লবী পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তা অব্যাহত আছে। তখনকার শিল্প আর বিশ্বায়নের যুগে লিও ত্রয়োদশ বলেছিলেন, সবার সামাজিক অধিকার আর ব্যক্তিগত মর্যাদা থাকতে হবে এবং ধনী আর শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, লিও চতুর্দশ কি বোঝাতে চাইছেন, আমরা সেই বিপ্লবেরই নতুন এক পর্বে প্রবেশ করেছি?

লিও চতুর্দশের আরেক নামজুড়ে থাকা রেফারেন্স হলো পাঁচ শতকের পোপ লিও দ্য গ্রেট। তিনি রাজনৈতিক কোন্দলের মধ্যে পোপদের কর্তৃত্বকে কেন্দ্রীভূত করেছিলেন এবং বলা হয়ে থাকে, কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে তিনি হুন নেতা আতিলাকে রোম দখল করতে বাধা দেন।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—একজন মার্কিন নাগরিককে পোপ বানানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভ্লাদিমির পুতিন ও সি চিন পিংয়ের যুগে শান্তি ও সামাজিক ঐক্যের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য পথ তৈরি করতে হলে রেনেসাঁ যুগের রাজনীতিভিত্তিক বাস্তববাদের মতো ব্যাপক কৌশল লাগবে। তবে ভালো খবর হলো, অনেক সময় ভ্যাটিকানের কূটনীতি অসাধারণ সফলতা আনতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ১৯৭০-এর দশকের কথা ধরা যায়, যখন সোভিয়েত শাসনের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ছিল। ধর্ম একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের কারণ হয়ে ওঠে। মধ্য এশিয়া ও ককেশাস অঞ্চলে ইসলাম পুনর্জাগরণের পাশাপাশি আফগানিস্তানে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান ঘটে। এই ইসলামি উত্থানকে হুমকি মনে করে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করে, কিন্তু পরে তারা এক ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে একধরনের অসন্তোষ বেড়ে উঠছিল। এর পূর্বাভাস ছিল ১৯৫৬ সালের হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লব ও ১৯৬৮ সালের প্রাগ বসন্ত আন্দোলনে সোভিয়েত দমন অভিযানে। এ পরিস্থিতি থেকে পোল্যান্ডে ধর্মঘট ও ‘সলিডারিটি’ আন্দোলনের উত্থান ঘটে। পোপ নির্বাচন সাড়া দেয় এভাবে, তারা ক্রাকোভের আর্চবিশপ কারোল ভয়টিউয়াকে পোপ হিসেবে নির্বাচন করে। তিনি ছিলেন জন পল দ্বিতীয়। তাঁর নির্বাচন যেন হঠাৎ করে এক আলো এনে দেয়: শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ এখনো সম্ভব।

লিও চতুর্দশ তাঁর পোপ হিসেবে প্রথম যে কথা বলেন, তা ছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে শান্তি থাকুক।’ প্রথম মার্কিন পোপ তাঁর এই প্রতিশ্রুতির চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করেন, তা আগামী বছরগুলোয় আমরা জানতে পারব।

হ্যারল্ড জেমস প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও মন্টাগু জেমস ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাসের পিএইচডি শিক্ষার্থী

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক পর স থ ত র জন য ক টন ত সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

আরিফ-মুক্তাদিরের আসনে জোবাইদার পোস্টার

সিলেট-১ আসনে দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারা দু’জন আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদিকে ‘ডা. জোবাইদা রহমানকে সাংসদ হিসাবে দেখতে চাই’ লেখা পোস্টার নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। অনেকে বলছেন, সিলেটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এটি বেনামি পোস্টার। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই।  

গত মঙ্গলবার রাত ১১টার পর হঠাৎ নগরীতে দেখা মেলে ডা. জোবাইদা রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার। এতে জোবাইদা রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি আছে। এতে লেখা রয়েছে– ‘বাংলাদেশের অহংকার সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জোবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই’। নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার, শাহি ঈদগাহ, সোবহানীঘাট, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এই পোস্টার। 
গত বুধবার পোস্টার সাঁটানোর সময় নগরীর শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে আটক করা হয় চা দোকানি আব্দুল কাদিরকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব   কাদির দীর্ঘদিন ধরে পোস্টার সাঁটানোর কাজ করে আসছিলেন। তাঁকে আটক করে নগর ছাত্রদলের কিছু নেতা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। এমনকি কাদিরের ভাষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আপলোড করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রদলের একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। তবে কে বা কারা পোস্টারটি করেছে, তা জানা যায়নি। 

এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় এই পোস্টার দেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। কারা হঠাৎ এসব পোস্টার সাঁটাল, তাদের খুঁজতে থাকেন বিএনপির লোকজন। এখানে নির্বাচন করার জন্য মুক্তাদির ও আরিফুলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। অনেকের ধারণা, সিলেট বিএনপিতে বিভক্তি থাকায় জিয়া পরিবারের বাইরে কেউ এই আসনে নির্বাচন করলে পরাজয়ের আশঙ্কা আছে। 
আরিফুল হক সম্প্রতি লন্ডন সফরে যান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে, মুক্তাদির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডন যাবেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।  
ডা. জোবাইদার পোস্টার নগরীজুড়ে সাঁটানোর পর অনেকেই ফেসবুকে তাঁকে সিলেটের অভিভাবক হিসেবে  আখ্যায়িত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ডা. জোবাইদা সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করলে ঐক্যবদ্ধ হবে সিলেটের বিএনপি। 

আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন থেকে আসার পর নিজ বাসায় নেতাকর্মীকে বলেন, ‘তারেক রহমান সিলেটের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আগামী নির্বাচনে দলকে সিলেটের ১৯ আসন উপহার দিতে চাই। এ জন্য সিলেটের একজন অভিভাবক দরকার। আমি নেতার কাছে দাবি করেছি, এমন একজন নেতা দরকার, যাকে ঘিরে সিলেটে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সিলেট বিভাগের মানুষ আশার আলো দেখবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাউকে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি। এতে সিলেটবাসীর ১৭ বছরের বঞ্চনার অবসান হবে।’
পোস্টার প্রসঙ্গে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ডা. জোবাইদা রহমান সিলেটের কৃতীসন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসা, নির্বাচন করা অথবা সিলেট-১ আসন চাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু পরিচয়বিহীন পোস্টার লাগিয়ে তাঁকে প্রার্থী করার দাবি জানানোর প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট। নগরীজুড়ে সাঁটানো পোস্টারগুলো বেনামি। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সিলেট বিএনপি এই মুহূর্তে দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আরেক পক্ষে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তারা দু’জনেই হাল ধরে আছেন বিএনপির। একজন দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। আরেকজন ছিলেন দু’বারের মেয়র। এ অবস্থায় তাদের প্রকাশ্য বিরোধ থামাতে হলে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে সিলেটের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটা পাল্টে যাবে। সিলেট হবে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দেখেন ২২৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়
  • নৃত্যশিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • সাহিত্যের এক দিকপাল ও দিশারি
  • খুলনায় মাহিন্দ্র-লরির সংঘর্ষে নিহত ৩
  • কেন ফুটবলাররা হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন
  • মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড, তিনজন খালাস
  • মৃত সন্তানকে নিয়ে গুলতেকিন খানের আবেগঘন পোস্ট
  • ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যা: কিছু প্রশ্ন ও প্রস্তাব
  • আরিফ-মুক্তাদিরের আসনে জোবাইদার পোস্টার