ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপে কি ইউক্রেন যুদ্ধ থামবে
Published: 19th, May 2025 GMT
যুদ্ধ থামাতে কোনো সুরাহায় পৌঁছাতে পারছে না রাশিয়া ও ইউক্রেন। দুই দেশের মধ্যে শান্তি ফেরাতে কম চেষ্টা করছে না যুক্তরাষ্ট্রও। তাতেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আজ সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এই ফোনালাপের জেরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি আসতে পারে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ট্রাম্প-পুতিনের এই ফোনালাপের এক দিন আগেই তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সরাসরি বৈঠক করেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর ৩ বছরের মধ্যে প্রথম আলোচনায় বসেন তাঁরা। সেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও ১ হাজার করে বন্দী বিনিময়ে রাজি হয় দুই পক্ষ। পরে যুদ্ধবিরতির আশায় ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন ইউরোপের নেতারাও।
গত শুক্রবার তুরস্কের ওই বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুতিন নিজেই। বৈঠকে পুতিন অংশ নেবেন বলে বড় আশা করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে পুতিনের উপস্থিতি দেখা যায়নি। পরে জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেছিলেন, বৈঠকে রাশিয়া যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল, তাদের আসলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।
পুতিনের প্রতি নরম ট্রাম্পপুতিনের সমালোচনায় জেলেনস্কি সরব হলেও ট্রাম্পকে বেশ সহানুভূতিশীল বলেই মনে হয়েছে। সম্প্রতি কাতার সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অংশ নেওয়া ছাড়া পুতিন উপস্থিত থাকবেন, এমন ভাবাটা অবাস্তব। এর কিছু সময় পর বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের আবার বলেন, ‘আমি ও পুতিন একসঙ্গে বসা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।’
পরে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই যুদ্ধ থামাতে চান। আমাদের তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং যতটা সম্ভব সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ এরই মধ্যে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে যে ফোনালাপ হবে, তা গতকাল রুশ বার্তা সংস্থাকে নিশ্চিত করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
আসলে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো নিয়ে চূড়ান্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না মস্কো ও কিয়েভ। ইউক্রেন ৩০ দিনের শর্তহীন যুদ্ধবিরতি চায়। রাশিয়ার উদ্বেগ, নিজেদের অস্ত্র ও সেনায় সজ্জিত করার জন্য সময়টা কাজে লাগাবে ইউক্রেন। অপর দিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে রাশিয়া তাদের দখল করা অঞ্চলগুলো ছাড় দিতে বলছে কিয়েভকে। তবে এ শর্ত মানতে নারাজ জেলেনস্কি।
সামনে তিন পথজটিল এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প-পুতিন ফোনকল কোনো আশার আলো দেখাতে পারে কি না, তা নিয়ে কথা বলেছেন লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষাবিদ্যা বিভাগের গবেষক মারিনা মিরন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে এবং ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ক ঘিরে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা সুরাহার জন্য এই ফোনকল উচ্চ আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।
মারিনা মিরনের মতে, এই ফোনকল থেকে তিনটি ফলাফল আসতে পারে। সেগুলো হলো, পুতিন ও ট্রাম্প কোনো এক ধরনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁরা ঐকমত্যে না-ও পৌঁছাতে পারেন। আর সম্ভাব্য তৃতীয় যে ঘটনা ঘটতে পারে তা হলো, মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকতে পারেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। এটিই ঘটার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মিরন।
কিংস কলেজের এই গবেষক বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, রুশ পক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বললেও, যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতির কথা বললেও, তাদের বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। আমি মনে করি, এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউরোপের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। আর বিষয়টি পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনায় সুরাহা না হলে, তেমন কিছু করার নেই ইউক্রেনেরও।’
তবে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মারিনা মিরনের। তিনি বলেন, হয় তাদের ইউক্রেনকে সব সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং একটি নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে হবে। অথবা তারা ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাবে, যেন রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুদ্ধক্ষেত্রেই সুরাহা করতে পারে কিয়েভ।
কোন অবস্থায় যুদ্ধযুদ্ধ শুরুর পর গতকাল রোববার ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এদিন সকালে ২৭৩টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। এতে অন্তত একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কিয়েভ। পরে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে হয়তো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছে মস্কো।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা যুদ্ধ থামানোর কথা বরাবরই বলে আসছেন ট্রাম্প। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর মার্কিন প্রতিনিধিরা আলাদাভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন। এতে তিন পক্ষই সাময়িক বিভিন্ন চুক্তি, কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা না চালানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি চুক্তির পরই পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক সম্ভব: রাশিয়া১৭ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য এই ফ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক