যুদ্ধ থামাতে কোনো সুরাহায় পৌঁছাতে পারছে না রাশিয়া ও ইউক্রেন। দুই দেশের মধ্যে শান্তি ফেরাতে কম চেষ্টা করছে না যুক্তরাষ্ট্রও। তাতেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আজ সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এই ফোনালাপের জেরে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি আসতে পারে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

ট্রাম্প-পুতিনের এই ফোনালাপের এক দিন আগেই তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে সরাসরি বৈঠক করেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর ৩ বছরের মধ্যে প্রথম আলোচনায় বসেন তাঁরা। সেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হলেও ১ হাজার করে বন্দী বিনিময়ে রাজি হয় দুই পক্ষ। পরে যুদ্ধবিরতির আশায় ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেন ইউরোপের নেতারাও।

গত শুক্রবার তুরস্কের ওই বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পুতিন নিজেই। বৈঠকে পুতিন অংশ নেবেন বলে বড় আশা করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে পুতিনের উপস্থিতি দেখা যায়নি। পরে জেলেনস্কি অভিযোগ করে বলেছিলেন, বৈঠকে রাশিয়া যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল, তাদের আসলে যুদ্ধবিরতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।

পুতিনের প্রতি নরম ট্রাম্প

পুতিনের সমালোচনায় জেলেনস্কি সরব হলেও ট্রাম্পকে বেশ সহানুভূতিশীল বলেই মনে হয়েছে। সম্প্রতি কাতার সফরের সময় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অংশ নেওয়া ছাড়া পুতিন উপস্থিত থাকবেন, এমন ভাবাটা অবাস্তব। এর কিছু সময় পর বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের আবার বলেন, ‘আমি ও পুতিন একসঙ্গে বসা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।’

পরে শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই যুদ্ধ থামাতে চান। আমাদের তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং যতটা সম্ভব সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’ এরই মধ্যে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে যে ফোনালাপ হবে, তা গতকাল রুশ বার্তা সংস্থাকে নিশ্চিত করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

আসলে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো নিয়ে চূড়ান্ত একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না মস্কো ও কিয়েভ। ইউক্রেন ৩০ দিনের শর্তহীন যুদ্ধবিরতি চায়। রাশিয়ার উদ্বেগ, নিজেদের অস্ত্র ও সেনায় সজ্জিত করার জন্য সময়টা কাজে লাগাবে ইউক্রেন। অপর দিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে রাশিয়া তাদের দখল করা অঞ্চলগুলো ছাড় দিতে বলছে কিয়েভকে। তবে এ শর্ত মানতে নারাজ জেলেনস্কি।

সামনে তিন পথ

জটিল এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প-পুতিন ফোনকল কোনো আশার আলো দেখাতে পারে কি না, তা নিয়ে কথা বলেছেন লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষাবিদ্যা বিভাগের গবেষক মারিনা মিরন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি সমঝোতায় আসতে এবং ওয়াশিংটন-মস্কো সম্পর্ক ঘিরে যে উদ্বেগ রয়েছে, তা সুরাহার জন্য এই ফোনকল উচ্চ আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।

মারিনা মিরনের মতে, এই ফোনকল থেকে তিনটি ফলাফল আসতে পারে। সেগুলো হলো, পুতিন ও ট্রাম্প কোনো এক ধরনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারেন। যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁরা ঐকমত্যে না-ও পৌঁছাতে পারেন। আর সম্ভাব্য তৃতীয় যে ঘটনা ঘটতে পারে তা হলো, মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকতে পারেন দুই দেশের প্রেসিডেন্ট। এটিই ঘটার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন মিরন।

কিংস কলেজের এই গবেষক বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে, রুশ পক্ষ আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বললেও, যুদ্ধবিরতির প্রস্তুতির কথা বললেও, তাদের বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। আমি মনে করি, এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউরোপের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। আর বিষয়টি পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনায় সুরাহা না হলে, তেমন কিছু করার নেই ইউক্রেনেরও।’

তবে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে মারিনা মিরনের। তিনি বলেন, হয় তাদের ইউক্রেনকে সব সহায়তা দেওয়া বন্ধ করতে হবে এবং একটি নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে হবে। অথবা তারা ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাবে, যেন রাশিয়ার সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুদ্ধক্ষেত্রেই সুরাহা করতে পারে কিয়েভ।

কোন অবস্থায় যুদ্ধ

যুদ্ধ শুরুর পর গতকাল রোববার ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির বিমানবাহিনী জানিয়েছে, এদিন সকালে ২৭৩টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে তারা। এতে অন্তত একজন নারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কিয়েভ। পরে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে হয়তো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা করছে মস্কো।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা যুদ্ধ থামানোর কথা বরাবরই বলে আসছেন ট্রাম্প। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর মার্কিন প্রতিনিধিরা আলাদাভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছেন। এতে তিন পক্ষই সাময়িক বিভিন্ন চুক্তি, কৃষ্ণসাগরে নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা না চালানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি চুক্তির পরই পুতিন-জেলেনস্কির বৈঠক সম্ভব: রাশিয়া১৭ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য এই ফ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককে শাস্তি দিতে পারি: বাউফলের ইউএনও

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির বাউফল উপজেলা সভাপতি ও কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেলকে জেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম। সোমবার বাউফল গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তিনি ওই হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি কারও ফোন ধরতে বাধ্য নই। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমরা প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর যে, মালিককেও জেলে ভরে শাস্তি দিতে পারি।’ তাঁর এমন কথায় সেখানে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েন।

ওই বিদ্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন পটুয়াখালী জেলা কার্যালয় ও বাউফল দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের দিন ছিল সোমবার। এ কমিটির সভাপতি ও কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি এমরান হাসান সোহেল জানান, বৃহস্পতিবার এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বৃহস্পতিবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথমে যাই। তিনি তখন অফিসে ছিলেন না। এরপর শনি ও রোববার একইভাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য প্রতিরোধ কমিটি তাঁর কার্যালয়ে গেলে তখনও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই তিনদিনই কমিটির সভাপতি তাঁকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যার পর তাঁকে ফোন দিলে তিনি ফোন কেটে দেন। এদিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম তাঁকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সোমবার অনুষ্ঠানস্থলে চলে আসেন। এসেই তিনি এমরান হাসান সোহেলকে দেখে রেগে যান। 

সোমবার বেলা ১২টার সময় বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে ওই বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। এ সময় তাঁকে আমন্ত্রণ না জানানোর কৈফিয়ত তলব করেন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির এমরান হাসাব সোহেলের কাছে। তাঁর প্রশ্নের জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, একাধিকবার আপনার কার্যালয়ে গিয়ে পাইনি। এমনকি আপনাকে তিনদিন বিভিন্ন সময় ফোন করেছি, আপনি রিসিভ করেননি। এতে হঠাৎ করে ইউএনও উত্তেজিত হন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার। ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে।’

এ সময় এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনাকে আমন্ত্রণের জন্য আপনার কমপ্লেক্সে তিনদিন যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনাকে পাইনি।’ জবাবে ইউএনও বলেন, ‘উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।’

এমন প্রশ্নের জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনার বাংলোতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জবাবে ইউএনও বলেন, ‘বাংলোতে যখন অ্যালাউ করবো তখন ঢুকবেন।’ 

তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরবো কেন?’ 

এ সময় সভাপতি এমরান হাসান সোহেল বলেন, ‘আপনি ফোনই ধরলেন না, তা হলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোন কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।’ এরপর ইউএনও আমিনুল আবার বলেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।’ তখন সভাপতি সোহেল বলেন, ‘ক্ষমতা আছে আপনি দেন শাস্তি।’

এ সময় ইউএনও খবরপত্রের সাংবাদিক এইচ বাবলুকে তাঁর পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতিও দেখান। ওই সাংবাদিককে দেখা করে সরি বলতে চাপ প্রয়োগ করেন ইউএনওর গাড়ি চালক।

এ বিষয়ে জানতে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসিয়াল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, ‘আমার কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য আসেনি। তথ্য পেলে মন্তব্য করতে পারবো।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ