শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও একটি সুস্থ, স্বাভাবিক ও পরিপূর্ণ জীবনের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য এখনো উপেক্ষিত একটি বিষয়, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এর ব্যতিক্রম নন। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার যে ঘাটতি রয়েছে, তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ক্ষেত্রেও স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।

নিয়মিত ক্লাস, ল্যাব ও পরীক্ষার চাপে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। এর পাশাপাশি পারিবারিক ও আর্থিক চাপ, আবাসনসংকট, পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে বাধ্য করছে।

অনেক সময় এই চাপ থেকে প্যানিক অ্যাটাক, বিষণ্নতা, উদ্বেগ বা আরও গুরুতর মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়, যা কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। পরীক্ষার সময় মানসিক চাপে পড়ে অনেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, যা ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য একধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে (হেলথকেয়ার) কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কোনো ব্যবস্থাও নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতে হয়, যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়া সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের মনে দ্বিধা ও সংকোচ তৈরি করে। অনেকে সমস্যা প্রকাশে দ্বিধা বোধ করেন, কেউ কেউ আবার বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ক্যাম্পাসে মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।

তাহমিনা সোনিয়া

শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল: ভুক্তভোগীর পরিবারের মামলা না নেওয়ার অভিযোগ

চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে আছেন এক ব্যক্তি। ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ একজন তাঁর হাত ধরে রেখেছেন। বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছেন তিনি। জানালার পাশে বসা কয়েক যাত্রী মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করছেন। লোকটিকে ছেড়ে দিতে বলছেন কেউ কেউ। এক পর্যায়ে ট্রেন একটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। এ সময় হাত ছেড়ে দিলে তিনি রেললাইনে পড়ে যান। কয়েক যাত্রী এ দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন।

ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, রোববার দুপুরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর রেলস্টেশন এলাকায় বগুড়া থেকে সান্তাহারগামী একটি কমিউটার ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মাথা ও হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের বাসিন্দা মতিউর। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গতকাল তিনি বাড়ি ফিরেছেন। ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তাঁর পরিবার।

ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, মতিউর পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। দুই বছর ধরে দূতাবাস ও এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন তিনি। ১৫ দিন আগে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠান মতিউর। সৌদিতে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা সাত-আট দিন আগে মতিউরের বাড়িতে যান। সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব ও শ্যালকরা মিলে চোর-ছিনতাইকারী অপবাদ দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এ ছাড়া তাঁর কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে মতিউরের পরিবারের অভিযোগ। 

মতিউর জানান, রোববার আলতাফনগর স্টেশনে ট্রেন থেকে যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মাস্ক পরা ছয় থেকে সাতজন তাঁকে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অপবাদ দিয়ে মারধর করে। এর পর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।

ভুক্তভোগীর ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘ঘটনার পর আদমদীঘি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তারা আমার অভিযোগ নিতে চাননি। সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা করতে গেলে বলা হয়, আপনার বাবা জীবিত আছে। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত।’

এ বিষয়ে সজীবের বাবা হেলাল বলেন, ‘সজীবের শ্যালকরা ট্রেন থেকে তাঁকে ফেলে দেয়। তবে রাকিব সেখানে কিছুই করেনি।’

সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) হাবিবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীর স্বজনরা প্রথমে আদমদীঘি থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়। তখন আমাদের থানায় এলে তাদের নাকি আবার আদমদীঘি থানা থেকে ফোন করা হয়। এ কারণে তারা সেখানে চলে যান। পরে আর এখানে আসেননি। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ