দেশের নাম পরিবর্তন, সংবিধানের চার মূলনীতি পরিবর্তন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন (এনসিসি), ভোটার ও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের বয়সসীমা কমানোসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবে দ্বিমত জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এ ছাড়া সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোটের আয়োজন, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কমানোর প্রস্তাবেও ভিন্নমত জানিয়েছে দলটি।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স)। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে আজ সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে বর্ধিত আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সিপিবির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে প্রথম পর্বের আলোচনা শেষ করার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশ কিছু প্রস্তাবে আমরা দ্বিমত পোষণ করেছি। আমরা মনে করি, মৌলিক সংস্কার শেষ করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি।’

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদীয় দলনেতা একজন হতে পারবে না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবকে যৌক্তিক বলে মনে করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, তবে যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন, তিনি একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না, ঐকমত্য কমিশনের এমন প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন তাঁরা।

মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি, এক ব্যক্তি পরপর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। ঐকমত্য কমিশনের এমন কয়েকটি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে সিপিবি।

রুহিন হোসেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের উপযুক্ত বিকেন্দ্রীকরণ, সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং সংস্কারে জনগণকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে দেশে স্থানীয় নির্বাচনের প্রয়োজন নেই; বরং বিগত সময়ে নির্বাচনব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, সেটার সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি।’

জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জায়গাগুলোতে সিপিবি জোর দিয়েছে বলে জানান রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আস্থা ভোট ও অর্থ বিল ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন তাঁরা।

দ্রুত সময় নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে জোর দিয়ে রুহিন হোসেন বলেন, সংস্কার বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন কোন বিষয়ে সংস্কার চায়। কোনো রাজনৈতিক দল কথা না রাখলে মানুষ আবারও তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের কাজ করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিদের মন্তব্য মাঝেমধ্যে সন্দেহ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, এনবিআরকে ভাগ করা, করিডর এবং বন্দর হস্তান্তরের মতো বিষয়ে সরকারের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়।

অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে না পারলে উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না উল্লেখ করে সিপিবির এই নেতা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে বেসরকারীকরণ কিংবা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া অনুচিত। আর ভূরাজনৈতিক কারণে রাখাইনে করিডর দিলে সেটা আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে। সরকার এসব কাজে পিছু না হটলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দ্বিতীয় দিনের বর্ধিত আলোচনা সভায় সিপিবি সঙ্গে বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার প্রসঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন।

এর আগে সিপিবির সঙ্গে আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, দুই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রথম ধাপ আজ শেষ হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্বের আলোচনা শিগগিরই তারা জনসমক্ষে তুলে ধরবেন।

সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে অনেক রাজনৈতিক দল অনানুষ্ঠানিক মতামতও দিয়েছে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদ তৈরির দিকে এগিয়ে যাবেন তাঁরা।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন ও লুনা নূর।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব সরক র র দ ব মত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার আর কোনো উদ্যোগ নেবে না বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, “এখন রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে। এজন্য এক সপ্তাহ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

‘হুক্কা’ প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেল জাগপা

সোমবার (৩ নভেম্বর) উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “সরকার এরই মধ্যে বহুবার আলোচনা আয়োজন করেছে। এখন আমরা চাই, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের উদ্যোগে বসে ঐকমত্যে পৌঁছাক। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই।”

তিনি আরো বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তারা গত ১৫ বছর একসঙ্গে সংগ্রাম করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমরা আশা করি, তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবেন।”

আসিফ নজরুল জানান, এরই মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে, সরকার সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছে তা সরকারকে জানাতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করব, এরপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো অ্যাক্ট করবে।”

এর আগে শুরুতে আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আজ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।”

“উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে, এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে; সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।”

উপদেষ্টা বলেন, “এ প্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।”

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীতে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় আটক ৬
  • সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
  • ভোট ছাড়া সমঝোতায় জুয়েলার্স সমিতির নতুন পর্ষদ, সভাপতি এনামুল হক খান
  • ঝিনাইদহে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫, এলাকায় উত্তেজনা
  • প্রথম আলোরও একটা ঐকমত্য সনদ আছে, আর তা আছে আমাদের হৃদয়ে
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে ৭ দিনের সময় দিলে সরকার
  • ছাত্রদলের কমিটি নেই ১৪ মাস, স্থবির কার্যক্রম
  • মামলায় ঝুলে গেছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন
  • গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করলেন সিলেট-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আদিবা হোসেন
  • সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি