যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে
Published: 27th, May 2025 GMT
‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসা থেকে আটক করা হয়। তার সঙ্গে আরেক ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মোল্লা মাসুদসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী।
তিনি বলেন, “আজ ভোর ৫টা থেকে শুরু হওয়া কুষ্টিয়া ও হাতিরঝিলে পরিচালিত সাঁড়াশি অভিযানে ৪৬ স্বতন্ত্র ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের একটি ইউনিট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সফলভাবে দুই জন শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং তাদের দুই জন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।”
আরো পড়ুন:
মশা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত হবে না সেনাবাহিনী
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ গ্রেপ্তার ৪
‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’ কাছে মিলল অস্ত্র, গুলি ও স্যাটেলাইট ফোন
সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে কুষ্টিয়ার সোনার বাংলা রোডের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন- দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ এবং দুজন শুটার আরাফাত ও গাড়িচালক শরীফ। এই দুই শুটার আরাফাত ও গাড়িচালক শরীফ সুব্রত বাইনের সহযোগী।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি ও ১টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
আইএসপিআরের পরিচালক বলেন, “এই চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যা, চাঁদাবাজি ও নাশকতা চালিয়ে আসছিল। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ হলো তালিকাভুক্ত ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী দলের অন্যতম নেতা এবং সেভেন স্টার চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী।”
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী
“এই অভিযান ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতা ও পরিকল্পনার ফসল। অপারেশনটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা সংঘর্ষ ছাড়াই পরিচালিত হয়, যা আমাদের বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় ও সহায়তা দিয়েছে সেনা সদরের সামরিক অপারেশন পরিদপ্তর, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন, ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার বিগ্রেড, ৭১ মেকানাইজ বিগ্রেড ও এনএসআই।”
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা চৌধুরী বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশের জনগণকে জানাতে চাই-যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড কিংবা সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত তথ্য অনুগ্রহ করে নিকটস্থ সেনাক্যাম্প অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করুন।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আবারও দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই-সেনাবাহিনী প্রধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনার আলোকে, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং জনগণের জানমালের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।”
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পর্দায় আড়াল করা নীতি থেকে সরে আসুন
বিদেশি অতিথিরা এসে যাতে জনগণের দারিদ্র্য-মালিন্য দেখতে না পান, সে জন্য ‘রাজপথের ধারেকাছে দারিদ্র্যের যত চিহ্ন আছে’ সব আড়াল করার চল এ অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই চালু আছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন সড়কে যাওয়ার পর সেখানে সেই ধরনের দৃশ্যপট দেখা গেছে। দেখা গেছে, উপদেষ্টা আসবেন বলে প্রধান সড়কের পাশের আবর্জনা পর্দা দিয়ে আড়াল করা হলো। আবর্জনা চোখের আড়ালে গেলেও দুর্গন্ধ রয়ে গেল। মানুষ নাক চেপে পার হলো। কিন্তু ছবিতে ধরা পড়ল ‘পরিচ্ছন্ন’ ভৈরব।
উপদেষ্টা নিশ্চিন্তে ফিরে গেলেন। পরের দিন পর্দা খুলে ফেলা হলো। একদিন পর সেখানে উঠল বেড়া। স্থায়ী আবরণে আবর্জনাকে চোখের আড়াল করা হলো। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসিঠাট্টা হয়েছে। তবে ঘটনাটি নিছক হাস্যকর নয়; কারণ এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কৃতির এক গভীর প্রতীকচিত্র।
এতে যে কারও মনে হতে পারে, আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি, যেখানে ‘পরিচ্ছন্নতা’ মানে ময়লা ও গন্ধ দূর করা নয়, বরং বিশেষ ও অভিজাত ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিসুখ নিশ্চিত করা। এখানে উন্নয়নকে দেখা হয় প্রলেপের মতো যার গভীরে থাকে পচন, ওপরে থাকে উজ্জ্বল রংচং। এই নান্দনিক প্রতারণার উদ্দেশ্য নাগরিককে সন্তুষ্ট করা নয়; বরং সেই বিশেষ ব্যক্তির সন্তুষ্টি অর্জন।
ইউএনওর যুক্তি ছিল, ঘরে মেহমান এলে যেমন গৃহস্থ ঘর গুছিয়ে রাখে, তেমনি উপদেষ্টার সম্মানে আবর্জনাকে সাময়িক আড়াল করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র নামক এই ঘরের মালিক উপদেষ্টা নন, জনগণ। আর উপদেষ্টা বা মন্ত্রীরা সেই ঘরের মেহমান নন। তাঁরা সেই ঘর গুছিয়ে রাখার কাজে নিয়োজিত বেতনভুক্ত পরিচারক।
সেই বিবেচনায় ভৈরবের আবর্জনার স্তূপ আড়াল না করে উল্টো উপদেষ্টাকে আরও ভালো করে তা দেখানো দরকার ছিল। এতে সরকার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা মাঠপর্যায়ের সত্যিকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন এবং সে অনুযায়ী তাঁরা সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে দিন শেষে তা নাগরিকের জন্যই কল্যাণকর হয়।
স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে বুঝতে হবে, আবর্জনা আড়াল না করে শহরের জন্য স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সময়মতো বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ জরুরি। এগুলো কোনো বিলাসিতা নয়, এগুলো নাগরিক জীবনের মৌলিক শর্ত। সেই আলোকে ভৈরব স্টেশন সড়কের বর্জ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি।