ভারত থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন ১২ বাংলাদেশি। বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাঁরা দেশে ফিরেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তাঁদের হস্তান্তর করে।

ফেরত আসাদের ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বিভিন্ন মামলার আসামি আছেন। এর মধ্যে একজন ২০২২ সালে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সামনে হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া মামলার আসামি।

দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিরা হলেন, গাজীপুরের সুমন সরকার (৩০), নরসিংদীর ওমর ফারুক (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিজান শেখ (২৮), খুলনার রিয়াজুল ইসলাম (২৫), মাদারীপুরের বেলাল মোল্যা (২৮), নড়াইলের রেজিনা খাতুন (২৫) ও সাগারি ফকির (২৮), বাগেরহাটের রবিউল হাওলাদার (২৫) ও মোকসেদ হাওলাদার (৩০), সাতক্ষীরার রুবেল গাজী (২৫), আশিকুর রহমান (২৫) ও খালিদ হোসেন (২৫)।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং বেনাপোল বন্দর থানা-পুলিশ জানায়, এসব নারী–পুরুষ ভালো রোজগারের আশায় দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পথে ভারতে যান। আর তিনজন দেশে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে অবৈধ পথে ভারতে যান। পরে সেখানে কাজ করার সময় সে দেশে অবৈধভাবে বসবাস করায় পুলিশ তাঁদের আটক করে কারাগারে পাঠায়। সেখান থেকে একটি প্রতিষ্ঠান তাঁদের ছাড়িয়ে এনে নিজস্ব আশ্রয়ে রাখে। গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে ভারত সরকারের দেওয়া বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁদের বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

ইব্রাহিম আহমেদ বলেন, বিশেষ ট্রাভেল পারমিটের মাধ্যমে তিন আসামিসহ ১২ জন বাংলাদেশি গতকাল বিকেলে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে ওমর ফারুক ২০২২ সালে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সামনে হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া মামলার আসামি। সুমন সরকারের বিরুদ্ধে মাদক আইনে এবং রিয়াজুল ইসলামের নামে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা আছে। ফেরত আসা এসব আসামি ও নারী-পুরুষদের গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বেনাপোল বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল মিয়া বলেন, ফেরত আসা তিন আসামিকে গতকাল রাতে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে পুলিশ এসে নিয়ে গেছেন। অন্যদের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদন: প্রতি বছর আয় প্রায় ২ কোটি

স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়। গত ৫ বছরে এ খাত থেকে ৮ কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার ৯৩৫ টাকা আয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এই বিশাল অঙ্কের আয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তাদের দাবি, বাংলাদেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক সিলেকশনের জন্য টাকা নেওয়া হয় না। শুধু রাবিতে এ পদ্ধতি চালু আছে। এ ফি নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শুধু টাকা আয়ের উদ্দেশ্যেই এই সিলেকশন পদ্ধতি। এর কোন যৌক্তিকতা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক আবেদন জমা পড়ে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০টি, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৪টি, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৩ লাখ ৯৮ হাজার, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৩ লাখ ৫ হাজার এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯০৩টি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৫৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করতে হয়।

ফলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক আবেদন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় হয় ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার ৭৭০ টাকা, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট জিপিএধারী শিক্ষার্থীদের প্রথমে ৫৫ টাকা দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করতে হয়। প্রাথমিক সিলেকশনের পর যারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন কেবলমাত্র তারাই ইউনিটভিত্তিক চূড়ান্ত আবেদন ফি জমা দিবেন। বিগত বছরগুলোতে প্রতি ইউনিটে ৭২ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতেন। তবে এ বছর এক ইউনিটে পরীক্ষা দিতে পারবেন ৯২ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রাথমিক আবেদন পড়ে তার তিন-চার গুন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও প্রায় লাখো শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ৫৫ টাকা করে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আহমিদুর রহমান তামিম বলেন, “অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে রাবিতে আবেদন ফি বেশি। তারপর আবার প্রাথমিক আবেদনে ৫৫ টাকা নেওয়ার কোনো মানেই হয় না। এর কোন যৌক্তিকতা নেই। আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এ নিয়ম নেই। এ পদ্ধতি তুলে দেওয়া উচিত।”

তামিমের বাবা মো. মমিনুর রহমান বলেন, “যেহেতু চূড়ান্ত সিলেকশন আছে, তাই প্রাথমিক সিলেকশন থাকার যৌক্তিকতা দেখছি না। এটা মূলত অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কৌশল।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক সিলেকশন পদ্ধতি আসলে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ার সক্ষমতা নেই। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ক্যাপাসিটি আছে। ফলে সিলেকশন রাখার বিকল্প নেই।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যদি কম আবেদন পড়ে তাহলে এটা সম্ভব। কিন্তু আমাদের আবেদন তো পড়ে অনেক। সেখান থেকে বাছাই করে নেওয়া হয়। জিপিএ এর যে লিমিট দেওয়া থাকে, সে পর্যন্ত কখনো যায় না।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মোহা. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “প্রাথমিক সিলেকশন ছাড়া তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে আসন সীমাবদ্ধ। প্রাথমিক আবেদন তুলে কতজন আবেদন করবে এটা তো বোঝা সম্ভব নয়। এছাড়া বারবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও সম্ভব না। এখন যে প্রক্রিয়ায় সিলেকশন করা হয়, সেটা আমার কাছে মনে হয় বেস্ট ওয়ে। তবে যে ফি নেওয়া হয় সে বিষয়ে কথা বলার জায়গা আছে। আমি এ বিষয়ে কথা বলব।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশে চতুর্থ রাবি
  • খুলনায় নভোথিয়েটার নির্মাণ থেকে পিছু হটছে মন্ত্রণালয়
  • মিয়ানমার থেকে এল দেড় হাজার বস্তা ডাল
  • চিকিৎসা ভিসায় ভারতে যাওয়ার সময় ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী ভাইসহ গ্রেপ্তার
  • ভর্তি পরীক্ষার প্রাথমিক আবেদনে ৫ বছরে আয় ৮ কোটি টাকা, যৌক্তিকতা ন
  • এইচএমপিভি’র সতর্কতা নেই নাকুগাঁও স্থলবন্দরে
  • রাবির ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিক আবেদন: প্রতি বছর আয় প্রায় ২ কোটি
  • ২০২৪ সালে কত আয় করেছেন অ্যাপল সিইও টিম কুক
  • বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত থেকে এলো ১০৫ মেট্রিকটন চাল