পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ মাছের মেলা কুশিয়ারা নদীর তীরে মৌলভীবাজারের শেরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একদিনের এ মেলাকে ঘিরে সিলেট বিভাগের ৪টি উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করে।

গত রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাছসহ বিভিন্ন তৈজসসামগ্রী কেনা-বেচা হয়েছে। এবারের মেলায় ১০০ কেজির একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হেঁকেছেন বিক্রেতা।

জানা যায়, ২০০ বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের মনুমুখ বাজারে মাছের মেলার আয়োজন করতেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন। দিন বদলের হাওয়ায় মেলা থেকে সম্প্রদায়গত বিভক্তি মুছে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

এক পর্যায়ে সংক্রান্তির সঙ্গে নবান্ন উৎসব যুক্ত হয়। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মনুমুখ অস্থিত্ব সংকটে জৌলুস হারায়। ৭০ দশকে মেলাস্থল পরিবর্তন করে মৌলভীবাজারের শেরপুর মৌজার কুশিয়ারা তীরে আনা হয়। এরপর থেকে এই স্থানেই চলছে প্রতি বছর মেলার আয়োজন।

চাঁনপুর মৎস্য আড়তের মালিক ইকবাল হোসেন জানান, পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর-বিল, নদী থেকে ৬০-৬৫ লাখ টাকার মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ কেজি ওজনের একটি বাগাইড় মাছ কেটে কেজি দরে এক লাখ ৬০ হাজার বিক্রি করেছেন।

ঢাকার যাত্রাবাড়ির সজীব দাস জানান, পদ্মানদীতে ধরা ১০-১২ লাখ টাকার রুই, কাতল, আইড়, বাগাইড় মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। 

মেঘনা মৎস্য আড়তের মালিক মিজানুর রহমান জানান, ১৯টি আড়তে অন্তত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার পাইকারি মাছ বিক্রি হয়েছে। এ মাছ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া খুচরা বাজারে আরও প্রচুর মাছ বিক্রি হয়েছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ছনকাপন গ্রামের সমর মিয়া, মাশকান্দি গ্রামের আরবেশ মিয়া, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘরব্রাহ্মণ গ্রামের ইয়াছিন মিয়াসহ অন্তত চার শতাধিক মেলায় খুচরা দোকানে মাছ বিক্রি করেছেন। আরবেশ মিয়া হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে অংশে কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়া ৮০ ও একশ কেজি ওজনের দুটি বাগাইড় মাছসহ দেশীয় প্রজাতির বোয়াল, রুই, কাতলা, আইড় মাছের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। তিনি একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাঁকছিলেন।

মাছ বিক্রেতা ইয়াছিন জানান, দেশীয় বড় রুই-কাতল, আইড়, বোয়াল হাজার-বারো'শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি একটি ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ৩৫ হাজার হেঁকেছিলেন।

শেরপুর গ্রামের ক্রেতা গৌরাঙ্গ দাস জানান, সাড়ে ৮ কেজি ওজনের একটি মাশুর (গ্রাসকার্প জাতীয়) মাছ ৩২'শ টাকায় কিনেছেন।

মেলায় আসা কবি ইয়াছিন সেলিম জানান, দুই শতাধিক বছরের পুরানো মেলাটি স্থান সংকটের কারণে জৌলুস হারাচ্ছে। আগ্রহ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে মাছ দেখেছি এবং পছন্দসই মাছ কিনেছি।

মেলা আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন জানান, সিলেট বিভাগের সব হাওর-বিলের বড় আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শেরপুরের মাছের মেলায় সমাগম ঘটান বিক্রেতারা। এ মেলায় সারা দেশের হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার আগমন ঘটে। মেলায় মাছের পাশাপাশি খই, তিলুয়া, বাতাসা, খেলনা সামগ্রী, ইমিটেশনের দোকান, ফার্নিচার, সবজি, পোষক, পরিচ্ছদসহ ঘর-গৃহস্থালির সব তৈজসপত্রের দোকানিরা পসরা বসিয়ে বিক্রি করেছেন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন ৩ বন্ধু, দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের

বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের ফুলবাড়ী বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছেন।

নিহত দুজন হলেন গাড়িদহ ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের মেহেদী হাসান (২০) এবং শেরপুর পৌর শহরের গোঁসাইপাড়া মহল্লার সাহাবুল হাসান (২০)। আহত হয়েছেন একই এলাকার উৎসব চক্রবর্তী (২০)।

প্রত্যক্ষদর্শী দুজন জানান, তিন বন্ধু একটি মোটরসাইকেলে করে রামেশ্বরপুর গ্রামের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে মোটরসাইকেলের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি রাস্তার পাশে একটি দোকানের শাটারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় মেহেদী হাসান ও সাহাবুল হাসান গুরুতর জখম হন। তাঁদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত অপরজন উৎসব চক্রবর্তী স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনজনই বন্ধু ছিলেন। মোটরসাইকেলের চালক ছিলেন সাহাবুল হাসান।

আহত উৎসব চক্রবর্তী বলেন, গতকাল রাতে মেহেদী হাসানকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনজনই এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

বগুড়া সদর থানার ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) লাল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত ১০টা থেকে সোয়া ১০টার মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাহাবুল হাসান ও মেহেদী হাসান মারা যান।

শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নুল আবেদীন বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে দুজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রান্তিক মানুষের অন্তর্ভুক্তি গণতন্ত্রের বড় চ্যালেঞ্জ: হোসেন জিল্লুর রহমান
  • ‘ফিরে চল মাটির টানে’ স্লোগানে প্রথমবার ব্রজমোহন কলেজে নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত
  • চীনে বাংলাদেশের গোল উৎসব চলছেই
  • সাতক্ষীরায় খাদ্যে বিষক্রিয়ায় শিশুসহ ১১ জন অসুস্থ
  • খুলনা পর্বের বর্ণিল উদ্বোধন করলেন বিপ্লব ভট্টাচার্য
  • বগুড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ বন্ধু নিহত
  • খাসিয়াদের উৎসব ‘সেং কুটস্নেম’
  • বগুড়ার শেরপুরে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন ৩ বন্ধু, দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের