মেলায় ১০০ কেজির বাগাইড় মাছের দাম উঠল সাড়ে ৩ লাখ টাকা
Published: 13th, January 2025 GMT
পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষ্যে দেশের সর্ববৃহৎ মাছের মেলা কুশিয়ারা নদীর তীরে মৌলভীবাজারের শেরপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একদিনের এ মেলাকে ঘিরে সিলেট বিভাগের ৪টি উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করে।
গত রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় অন্তত সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাছসহ বিভিন্ন তৈজসসামগ্রী কেনা-বেচা হয়েছে। এবারের মেলায় ১০০ কেজির একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হেঁকেছেন বিক্রেতা।
জানা যায়, ২০০ বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের মনুমুখ বাজারে মাছের মেলার আয়োজন করতেন মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজন। দিন বদলের হাওয়ায় মেলা থেকে সম্প্রদায়গত বিভক্তি মুছে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এক পর্যায়ে সংক্রান্তির সঙ্গে নবান্ন উৎসব যুক্ত হয়। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মনুমুখ অস্থিত্ব সংকটে জৌলুস হারায়। ৭০ দশকে মেলাস্থল পরিবর্তন করে মৌলভীবাজারের শেরপুর মৌজার কুশিয়ারা তীরে আনা হয়। এরপর থেকে এই স্থানেই চলছে প্রতি বছর মেলার আয়োজন।
চাঁনপুর মৎস্য আড়তের মালিক ইকবাল হোসেন জানান, পদ্মা নদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাওর-বিল, নদী থেকে ৬০-৬৫ লাখ টাকার মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ কেজি ওজনের একটি বাগাইড় মাছ কেটে কেজি দরে এক লাখ ৬০ হাজার বিক্রি করেছেন।
ঢাকার যাত্রাবাড়ির সজীব দাস জানান, পদ্মানদীতে ধরা ১০-১২ লাখ টাকার রুই, কাতল, আইড়, বাগাইড় মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়।
মেঘনা মৎস্য আড়তের মালিক মিজানুর রহমান জানান, ১৯টি আড়তে অন্তত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার পাইকারি মাছ বিক্রি হয়েছে। এ মাছ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া খুচরা বাজারে আরও প্রচুর মাছ বিক্রি হয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ছনকাপন গ্রামের সমর মিয়া, মাশকান্দি গ্রামের আরবেশ মিয়া, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দিঘরব্রাহ্মণ গ্রামের ইয়াছিন মিয়াসহ অন্তত চার শতাধিক মেলায় খুচরা দোকানে মাছ বিক্রি করেছেন। আরবেশ মিয়া হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জে অংশে কুশিয়ারা নদীতে ধরা পড়া ৮০ ও একশ কেজি ওজনের দুটি বাগাইড় মাছসহ দেশীয় প্রজাতির বোয়াল, রুই, কাতলা, আইড় মাছের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। তিনি একটি বাগাইড় মাছের দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাঁকছিলেন।
মাছ বিক্রেতা ইয়াছিন জানান, দেশীয় বড় রুই-কাতল, আইড়, বোয়াল হাজার-বারো'শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি একটি ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ৩৫ হাজার হেঁকেছিলেন।
শেরপুর গ্রামের ক্রেতা গৌরাঙ্গ দাস জানান, সাড়ে ৮ কেজি ওজনের একটি মাশুর (গ্রাসকার্প জাতীয়) মাছ ৩২'শ টাকায় কিনেছেন।
মেলায় আসা কবি ইয়াছিন সেলিম জানান, দুই শতাধিক বছরের পুরানো মেলাটি স্থান সংকটের কারণে জৌলুস হারাচ্ছে। আগ্রহ নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে মাছ দেখেছি এবং পছন্দসই মাছ কিনেছি।
মেলা আয়োজক কমিটির সহ-সভাপতি আবুল হোসেন জানান, সিলেট বিভাগের সব হাওর-বিলের বড় আকৃতির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শেরপুরের মাছের মেলায় সমাগম ঘটান বিক্রেতারা। এ মেলায় সারা দেশের হাজার হাজার ক্রেতা-বিক্রেতার আগমন ঘটে। মেলায় মাছের পাশাপাশি খই, তিলুয়া, বাতাসা, খেলনা সামগ্রী, ইমিটেশনের দোকান, ফার্নিচার, সবজি, পোষক, পরিচ্ছদসহ ঘর-গৃহস্থালির সব তৈজসপত্রের দোকানিরা পসরা বসিয়ে বিক্রি করেছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল মানেই তো উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ। আর মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাতালোনিয়ার মন্টজুইকে যা দেখা গেল— তা যেন শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং ছয় গোলের অনির্দেশ্য গল্প। যেখানে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে একসঙ্গে রচনা করল রোমাঞ্চ আর বীরত্বের এক অপূর্ব মহাকাব্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ৩-৩ গোলে সমতা টানল কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচ শুরুই হলো যেন বজ্রপাত দিয়ে। সময়ের কাঁটায় মিনিটও পেরোয়নি। এর মধ্যেই ইন্টারের মার্কুস তুরাম এক চতুর ব্যাকহিল ফিনিশে বল ঠেলে দেন জালে। সেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো কাতালান রক্ষণভাগ। এরপর ২১ মিনিটে কর্নার থেকে ডেনজেল ডামফ্রিসের অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে যেন বার্সার হৃদয়েই ঘা লাগে, ইন্টারের লিড তখন ২-০ গোলে।
তবে ইতিহাস বলে— বার্সেলোনার যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ধারাতেই, ডানদিক থেকে দুরন্ত ছন্দে এগিয়ে এসে বক্সে ঢুকে বল জালে পাঠালেন কিশোর বিস্ময় লামিনে ইয়ামাল। ইন্টারের দ্বিতীয় গোলের মাত্র তিন মিনিট পর আসে এই গোল, যা এই ম্যাচে বার্সার ফেরার না বলা প্রতিশ্রুতি হয়ে উঠেছিল।
সেই ইয়ামাল পরে আরও একবার প্রায় গোল করে ফেলছিলেন। কিন্তু ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়। বল লাগে পোস্টে। তবে কাতালান আশা তখনও নষ্ট হয়নি। ৩৮ মিনিটে ফেরান তোরেস ডানদিক থেকে আসা পাসে ওয়ান-টাইম ফিনিশে বল জড়ান জালে, ফিরিয়ে আনেন সমতা। ম্যাচ তখন যেন টানটান থ্রিলারে রূপ নেয় এবং শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে বলের দখলে ও খেলার ছন্দে এগিয়ে থাকলেও ৬৪ মিনিটে আবারও হোঁচট খায় বার্সা। কর্নার থেকে হেডে ডামফ্রিস করেন তার দ্বিতীয় গোল। ইন্টার আবারও এগিয়ে যায়। কিন্তু বার্সা মানেই তো ক্ষণিকের বিশ্রামে আবার অগ্নি হয়ে ওঠা। দ্রুতই আসে জবাব। রাফিনহার দূরপাল্লার গর্জে ওঠা শট প্রথমে লাগে পোস্টে, এরপর ফিরে এসে লেগে যায় গোলরক্ষক ইয়ান সমারের পিঠে, এরপর বল ঢুকে পড়ে জালে। ম্যাচ আবারও ৩-৩। যদিও এটি আত্মঘাতী গোল হিসেবে গণ্য হয়, কাতালানদের জন্য তা যেন নবজন্মের এক চুম্বন।
শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুই দলই তীব্রভাবে চেষ্টা করেছে জয় ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন ছিল ভারসাম্যপন্থী।
এখন সব অপেক্ষা দ্বিতীয় লেগের। আগামী ৬ মে মিলানের ঐতিহাসিক সান সিরো স্টেডিয়ামে লেখা হবে এই নাটকের অন্তিম অঙ্ক। এক ম্যাচ, এক ফলাফল, এক জয়ী— আর সেই জয়ীর জন্য অপেক্ষা করছে মিউনিখের আলো-আড়ম্বরের রাত। ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে চূড়ান্ত পরীক্ষার দিন।
সান সিরোর আকাশে হয়তো আবার জ্বলে উঠবে এক নতুন রূপকথার তারা।
ঢাকা/আমিনুল