পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাবি
Published: 4th, February 2025 GMT
প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। পূর্বের ন্যায় কোটা বহালের দাবিতে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। অন্যদিকে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ছেলেদের ১০টি আবাসিক হল ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এসময় তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান নেন। এতে আটকে পড়েন প্রশাসনিক ভবনে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পোষ্য কোটা মানেই অযোগ্যদের সুযোগ করে দেওয়া। পোষ্য কোটা নিয়ে গতকাল প্রশাসন সংস্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখান করে অবিলম্বে পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নিবিড় ভূইয়া বলেন, অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আমরা অবস্থান নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কারোরই পোষ্য কোটার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অজপাড়াগাঁয়ের একজন কৃষকের সন্তান যদি মেধার ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরে পড়াশোনা করতে পারে, তাহলে একজন শিক্ষার্থী যে জাহাঙ্গীরনগরের ছোট থেকে বড় হয়েছে, ভালো স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে তার কোনো ধরনের প্রিভিলেজ লাগবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে পূর্বের মতো পোষ্য কোটা বহালের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে পোষ্য কোটা বাতিল সংক্রান্ত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ আনেন শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রতিবাদ জানাতে এলে এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতি বলেন, পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরা গতকাল অনশন করেছি। আজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোটা বহালের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে আমাদের পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলেন। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দেন। আমি এ প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে, পৌষ্য কোটা সংক্রান্ত সব শর্ত বাতিল ও পুনরায় বহালের দাবিতে আগামীকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ঘোষণার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরাসরি ইন্ধন রয়েছে। পোষ্য কোটা বাতিল হোক, তা তারা চাচ্ছেন না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ ন ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা ও কৌশলে নতুন তালেবানের ভিন্ন এক শাসন
দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানের সীমান্ত প্রদেশ খোস্তের মানুষের এই মুহূর্তে নানা প্রশ্ন। তাঁদের প্রশ্নের কেন্দ্রে রয়েছেন একজন আফগান শরণার্থী—রহমানুল্লা লাকানয়াল। বলা হচ্ছে, খোস্তের লাকান জেলার বাসিন্দা রহমানুল্লা লাকানয়াল ওয়াশিংটনে দুই নিরাপত্তাকর্মীর ওপরে ২৬ নভেম্বর গুলি চালান। মৃত্যু হয় একজনের, আহত আরেকজন। আহত অবস্থায় হাসপাতালের বিছানা থেকে রহমানুল্লা লাকানয়াল জানিয়েছেন তিনি নির্দোষ।
কিন্তু মানুষ উদ্বিগ্ন। এর নানা কারণ আছে বলে মনে করেন খোস্ত শহরের বাসিন্দা এবং প্রদেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় শেখ জায়েদ ইউনিভার্সিটির ছাত্র আহসান উল্লাহ। আফগানিস্তানে আমার হোটেলে পরিচয় হয় আহসানের সঙ্গে। বিশ্বরাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে গড়পড়তা আফগানের থেকে অনেক বেশি জানেন আহসান।
ওয়াশিংটনের ঘটনার কী প্রভাব খোস্তের ওপরে পড়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আহসান ডিসেম্বরের গোড়ায় ফোনে বললেন, ‘একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি। যে লোকটা (লাকানয়াল) গুলি চালাল, আমেরিকাই তাঁকে আফগানিস্তানে মানুষকে হত্যা করার প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এখন সে আমেরিকার রক্ষীদেরই মেরে বসল।’
আহসানের কথায়, এর ফলে বিপদে পড়ল সেই সব আফগান শরণার্থী, যাঁরা আমেরিকা বা ইউরোপে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তাঁদের যেকোনো সময় ফেরত পাঠানো হতে পারে। তিনি আরও বললেন, ‘একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে আমেরিকা যদি পেশাদার হত্যাকারী তৈরি না করত তাহলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। ফলে সব মিলিয়ে আফগানরা বিভ্রান্ত, একধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।’
হিংসা অবশ্য আফগানিস্তানে বিশ বছরের যুদ্ধের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, যা তালেবানের পক্ষেই যায়। ওয়াশিংটনে গুলি চললে যেমন বিষয়টি তালেবানের পক্ষের আখ্যান হিসেবে দাঁড় করানো যায়, পাকিস্তান কাবুলের ওপরে বোমা ফেললেও তেমনই যায়। এটা বুঝেছে নতুন তালেবান।
এটা স্পষ্ট যে নতুন তালেবান অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলের মতোই যেকোনো হিংসার ঘটনা নিয়ে একটা ‘ন্যারেটিভ’ বা আখ্যান নির্মাণের গুরুত্ব বুঝেছে।অতীতের মুজাহিদরা বুঝেছেন, যুদ্ধের বা হিংসার স্মৃতি ফিরলে বা যুদ্ধ শুরু হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান–বিরোধিতার হাওয়া গতি হারায়। তাই তাঁরা বারবার বলছেন, ওয়াশিংটনের ঘটনার জন্য আদতে দায়ী আমেরিকাই। এমনকি তালেবান-বিরোধীদেরও অনেকটা সেই মত। তালেবানের অন্যতম সমালোচক এবং সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সাবেক উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, লাকানয়ালের মতো মানুষের এ পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে দায় আমেরিকার।
ফলে এটা স্পষ্ট যে নতুন তালেবান অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক দলের মতোই যেকোনো হিংসার ঘটনা নিয়ে একটা ‘ন্যারেটিভ’ বা আখ্যান নির্মাণের গুরুত্ব বুঝেছে। এটাকে তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বা বৈশিষ্ট্য বলে মনে করছেন অনেকে।
অধ্যাপক ফয়েজ জালান্দ