পেপার ও পেপার বোর্ড আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ চান ব্যবসায়ীরা
Published: 27th, March 2025 GMT
উন্নতমানের পেপার ও পেপার বোর্ড আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এ দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ বেলাল।
চিঠিতে তিনি বলেন, ডুপ্লেক্স বোর্ড, ফোল্ডিং বক্স বোর্ড, আর্ট পেপার ও আর্ট কার্ড জাতীয় পণ্যগুলো সাধারণত ওষুধ শিল্প, বহুমুখী রপ্তানি শিল্পসহ দৈনন্দিন ব্যবহৃত সব ধরনের মুদ্রণ ও প্যাকেজিং শিল্পে প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। এসব পণ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বন্ড লাইসেন্সধারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্সের সুযোগ নিয়ে এসব পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে তারা বন্ডের অপব্যবহার করেন। এতে স্বচ্ছ আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই আমদানি করা এসব কাঁচামালে প্লাস্টিক শিল্পের ন্যায় শুল্ক হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনুরোধ করা হলো। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যে শৃঙ্খলা ফিরবে, সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে এসব কাঁচামাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ১৫, অগ্রিম কর ৫ এবং অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ রয়েছে। আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও মোট করভার দাঁড়াবে ৩১ শতাংশ।
এ বিষয়ে সংগঠনটির সহসভাপতি মোহাম্মদ বেলাল সমকালকে বলেন, বিশেষ করে দেশের কয়েকটি ইপিজেডের মাধ্যমে এসব কাঁচামাল আমদানি করে তা খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এসব অনিয়ম হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে বন্ডের অপব্যবহার ও দুর্নীতি রোধ করতে শুল্কহার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা দরকার।
এতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে বলে মনে করে কাগজ আমদানিকারকরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমদ ন শ ল ক ক আমদ ন আমদ ন ব যবস ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
সেমিনার: ১৫ বছরে গুম শিবিরের ২৫৫ জন, সাতজন ফেরেননি এখনো
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ২৫৫ জন নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছে সংগঠনটির মানবাধিকার বিভাগ।
ছাত্রশিবির বলছে, গুমের শিকার সাতজন এখনো ফেরেননি।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি
হেভিওয়েটদের বিপক্ষে এনসিপির প্রার্থী হচ্ছেন যারা
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিভাগের আয়োজনে এক সেমিনারে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে ছাত্রশিবির জানায়, গত ১৫ বছরে তাদের ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩১২ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়েছিল। মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৫টি, যার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৬৬ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে রিমান্ডে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৯ হাজার ৭২২ জন; তারা মোট রিমান্ডে ছিলেন ২৯ হাজার ৯৭১ দিন। আহত হয়েছিলো ৩১ হাজার ৭১৫ নেতাকর্মী, পঙ্গু হয়েছেন ৩২৪ জন, আর নিহত হয়েছেন ১০৩ জন।
সেমিনারে বলা হয়, গুমের শিকার হন ২৫৫ নেতাকর্মী, যাদের মধ্যে সাতজন এখনো ফেরেনি। সেই সাতজন হলেন মোহাম্মদ ওয়ালীউল্লাহ, মুহাম্মদ মুকাদ্দাস আলী, হাফেজ জাকির হোসাইন, জয়নুল আবেদীন, মো. কামারুজ্জামান, মো. রেজওয়ান ও শফিকুল ইসলাম।
ছাত্রশিবিরের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরে ছাত্রশিবির বলছে, ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরবচ্ছিন্ন পথচলার সূচনা। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সংগঠনটির যাত্রা ছিল বাধা-বিপত্তিতে পরিপূর্ণ। বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত বিপ্লব পর্যন্ত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
সংগঠনটির অভিযোগ, ছাত্রশিবিরের অফিস, মেস, সম্পদ সবকিছু থেকেই তাদের উৎখাত করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এবং শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেপ্তার করে দিনের পর দিন রিমান্ড নিয়ে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়। সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলামকে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ছাত্রলীগ চরমভাবে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
সেমিনারে শিবির জানায়, ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী বুয়েটের শহীদ আবরার ফাহাদকে সারারাত নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও একটি করুণ উদাহরণ। এ রকম হাজারো আবরার ফাহাদের মতো ছাত্রদের শুধু ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতো। ঝিনাইদহের শহীদ সোহানকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু হত্যাই নয়, তার দু-চোখ পর্যন্ত উপড়ে ফেলা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত বিগত ১৬ বছরে ছাত্রশিবিরের মোট ১০৩ জনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে শহীদ করা হয়। সাবেক ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি ইবনুল পারভেজ, সাবেক সাতক্ষীরা শহর সেক্রেটারি আমিনুর রহমানসহ সারাদেশে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষী প্রায় ৮৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ বাহিনী।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, “একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তার বিপরীতে গুম করেছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। শুধু একটি ছাত্রসংগঠনের ওপর কী নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা ছাত্রশিবিরের দিকে তাকালে বোঝা যায়। বিগত সময়ে সরকার দল ছাড়া বিরোধী দল ও মতের প্রায় সকলেরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।”
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, “স্বাধীনতার পরপরই আওয়ামী লীগ কর্তৃক দেশের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে থাকে। রক্ষীবাহিনী থেকে শুরু করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছিল। দুর্নীতি, দুঃশাসনের পর দেশকে দুর্ভিক্ষের রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।”
তিনি বলেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ইসলামী ছাত্রশিবির একক সংগঠন হিসেবে ৩১ শতাংশ গুমের শিকার হয়েছিল। এখনো সাতজন নেতাকর্মী গুম অবস্থায় রয়েছেন। গত ১৫ বছরে ন্যূনতম মানবাধিকার ছাত্রশিবিরের ছিল না। কোনো বিরোধী দল বা মতের মানুষের মানবাধিকার ছিল না।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হাসিনুর রহমান এবং গবেষক আলী আহমেদ মাবরুর প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল