মেঘনার মুক্তি চেয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি ২৭ বিশিষ্ট নারীর
Published: 21st, April 2025 GMT
মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তাঁর মুক্তির দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্মারকলিপি দিয়েছেন আইনজীবী, অধিকারকর্মী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার ২৭ বিশিষ্ট নারী। গতকাল রোববার স্মারকলিপিটি ই-মেইলে পাঠানো হয়।
এতে মেঘনাকে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাতে তাঁর মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্মারকলিপিতে বলা হয়, মেঘনা আলমকে গত ৯ এপ্রিল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ও ভাটারা থানার কর্মকর্তারা তাঁর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন ও আদালতের নির্দেশ অবমাননা করে আটক করেন। তাকে বাসা থেকে কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আটক করা হয়। সে সময় মেঘনার ফেসবুক লাইভ থেকে বিষয়টি জেনে কয়েক নারী অধিকারকর্মী ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার প্রায় ৩০ কর্মকর্তা মেঘনাকে আটকের জন্য এসেছেন। তাঁকে আদালতে তোলা হয় আটকের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে মেঘনাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় সরকারের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেন এই নারীরা। স্মারকলিপিতে তাঁরা বলেন, এই ঘটনায় গুরুতর মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তাঁরা মেঘনা আলমের মুক্তি এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন।
স্মারকলিপিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী ও অধিকারকর্মী ইশরাত জাহান, তাবাসসুম মেহেনাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মীর্জা তাসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ, সংগীতশিল্পী ও গীতিকার ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, আলোকচিত্রী পদ্মিনী চাকমা, লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ম রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
সারা হোসেনের প্রশ্ন, ‘পুলিশ কি পুরোনো নিপীড়ন বন্ধ করবে’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেনের প্রশ্ন, পুলিশ কি পুরোনো নিপীড়ন বন্ধ করবে? আইনের অপব্যবহার হলে পুলিশ কি জবাবদিহির মুখোমুখি হবে? আদালত কি সাহস দেখাবেন?
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন–সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ: ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা’বিষয়ক এক আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে সারা হোসেন এসব প্রশ্ন তোলেন। আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৫’ সম্মেলনের তৃতীয় দিনের একটি পর্বে এই আলোচনা হয়।
গত এক বছরে সাংবাদিকদের নির্বিচার গ্রেপ্তারের ধরন কমেছে বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন। একে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু আদালতের ভূমিকা আরও বিশ্লেষণ করা দরকার। গবেষণায় বিচারিক আদেশগুলো বিশ্লেষণের পরামর্শ দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ জবাবদিহিহীন ছিল। একইভাবে বিচারব্যবস্থাও কতটা স্বাধীন ছিল, তা দেখা দরকার।
এখনো সাংবাদিকেরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, অর্থাৎ সমস্যা শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ), সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) নয়। সমস্যা হলো বৃহত্তর মতপ্রকাশের স্বাধীনতায়।
সারা হোসেন বলেন, শুধু সাইবার আইন না, এখন যে অবস্থা, তাতে দেখা যাচ্ছে, আবার নতুন করে অনেকে বিশেষ আমলের দণ্ডবিধিকে আবিষ্কার করছে। সাইবার সুরক্ষা আইনের বাইরে গিয়ে নানা দিকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে মব চলছে। মব দিয়ে মামলাটা যাতে ঠিকমতো না চলতে পারে, আইন নিজের মতো যাতে না চলতে পারে, জোরজবরদস্তির কারণে অন্যদিকে যাতে চলে যায়, সেই অবস্থা সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, পুরোনো আইনগুলো কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি দেখা দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের অনুমোদন ছাড়া এখন ম্যাজিস্ট্রেট মামলা নিয়ে নিচ্ছে। পুলিশও ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রেস কাউন্সিল যথাযথভাবে কাজ করছে না বলে মন্তব্য করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, তাই গণমাধ্যম কমিশনের যে সুপারিশ এসেছে, তা ভালো। পাশাপাশি এই মুহূর্তে মানবাধিকার ও তথ্য কমিশনকে সক্রিয় করা প্রয়োজন, যাতে সবকিছু আদালতে না গিয়ে এসব কমিশনে সমাধান আসে।
সারা হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছিল, তা কখনোই বিচার শেষ করার জন্য ছিল না; বরং কথা বলা বন্ধ করার জন্য, লেখা বন্ধ করার জন্য করা হয়েছিল।
এখন আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে সারা হোসেন বলেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের গাইডলাইন এখন সিআরপিসি সংশোধনীতে যুক্ত হয়েছে। এটা বড় অগ্রগতি; কিন্তু বাস্তবায়ন এখনো দুর্বল।
সিজিএসের গবেষণা সহযোগী রোমান উদ্দিনের সঞ্চালনায় এই পর্বে আরও বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, ট্রায়াল ওয়াচের জ্যেষ্ঠ প্রোগ্রাম ম্যানেজার মানেকা খান্না।
আরও পড়ুনআকাশের অনেক তারার মতো সাংবাদিক নিবর্তনেরও অনেক ধারা: অ্যাটর্নি জেনারেল১ ঘণ্টা আগে