কিছুদিন যাবৎ একাদিকক্রমে আন্দোলনের কারণে কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম যেইভাবে অচল হইয়া পড়িতেছে, উহা শিক্ষানুরাগী প্রত্যেক মানুষকেই ভাবাইয়া তুলিবার কথা। এই অচলাবস্থা প্রথমে সূচিত হয় খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটে, গত ফেব্রুয়ারিতে যখন শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্র ধরিয়া কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। ক্যাম্পাস বন্ধের মধ্যেই ঘটনাপরম্পরায় গত এপ্রিলে শুরু হয় কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। তাহার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকার কুয়েট উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে। অন্যদিকে সরকারের এহেন সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করিয়া কুয়েটের শিক্ষক সমিতি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করিয়া দেয়, যাহা অদ্যাবধি চলমান। এইদিকে কুয়েটের দুর্ভাগ্যজনক অচলাবস্থার মধ্যেই গত সোমবার হইতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হইয়া গিয়াছে। তথায় উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলিয়া তাঁহার পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন চালাইতেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সেই আন্দোলনে শিক্ষকরাও যুক্ত হইয়াছেন। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ সকল দপ্তর তালাবদ্ধ করিয়া প্রশাসনিক শাটডাউনের ঘোষণা প্রদান করা হইয়াছে। উপাচার্যের বাসভবন তালাবদ্ধ, তৎসহিত বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিয়াছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু উক্ত দুই বিশ্ববিদ্যালয়ই নহে; একই দিনে প্রকাশিত সমকালের আরেক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ‘উত্তাল’ হইয়া উঠে। এমনকি কয়েক ঘণ্টার জন্য উপাচার্যকে অভ্যন্তরে রাখিয়াই উপাচার্য ভবন তালাবদ্ধ করা হয়।

যেই সকল আন্দোলনের কারণে উক্ত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বা অস্থিরতার সৃষ্টি হইয়াছে, সেইগুলির যৌক্তিকতা লইয়া হয়তো প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নাই। কিন্তু দিনের পর দিন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হইবার কুফল বিশেষত শিক্ষার্থীদেরই ভোগ করিতে হয়, ইহাতেও কোনো সন্দেহ নাই। এহেন পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অহেতুক প্রলম্বিত হইলে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে প্রবেশ যদ্রূপ অসম্ভব হয়, তদ্রূপ তাহাদের পরিবারের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যয়ের বোঝা চাপে। স্মরণে রাখিতে হইবে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারভুক্ত। এই সকল প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকিনির্ভর বলিয়া প্রলম্বিত শিক্ষাজীবন রাষ্ট্রের উপরেও অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি করে। সর্বোপরি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। যাহার নেতিবাচক ফল ভোগ করিতে হয় বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। অন্য দেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক চর্চায়ও ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িবার শঙ্কা থাকে। এই কথাটি না বলিলেই নহে, গত বৎসরের জুলাই হইতে একদিকে শিক্ষক আন্দোলন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অচল হইয়া পড়ে। আশা করা হইয়াছিল, শিক্ষার্থীদের ঐ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের পরিণতি হিসাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়া আসিবে। কিন্তু দুঃখজনক হইলেও সত্য, উক্ত প্রত্যাশা অদ্যাবধি সর্বাংশে পূরণ হয় নাই। অন্তত দেশের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে এত মাস পরও প্রায়ই অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কোনো কারণে অস্থির হইয়া উঠিতে দেখা যায়। 

এহেন পরিস্থিতির অবসানে সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সকল অংশীজনেরই ইতিবাচক ভূমিকা সন্দেহাতীতভাবে জরুরি। তবে বিদ্যমান সমস্যার প্রাথমিক কারণ প্রতিষ্ঠানগুলিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি বলিয়াই অনুমিত। যেই কারণে সরকারের শিক্ষা বিভাগের আত্মসমীক্ষাও আবশ্যক। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ শীর্ষ পদগুলি পূরণের পদ্ধতি লইয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো বটেই, জনমনেও প্রশ্ন বিস্তর। সকল অংশীজনের মতামত লইয়া সরকারকে তাই দ্রুত এমন প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করিতে হইবে, যাহার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাইবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকামুখী সড়ক অবরোধ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর ও ভাঙ্গার নেতাকর্মীরা। শুক্রবার ভাঙ্গা টোলপ্লাজা সংলগ্ন ফ্লাইওভার ব্রিজের ওপরে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেন তারা। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার সকালে ঢাকায় কর্মসূচি চলছিল। এ কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত ও বেগবান করার লক্ষ্যে রাত সাড়ে ১২টার পরে দক্ষিণ বঙ্গ থেকে ঢাকায় যাতায়াতের পথ অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর ও ভাঙ্গার নেতৃবৃন্দ। পরে মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা টোলপ্লাজায় অবস্থান নেয় তারা।

এ সময় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।

ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে আমরা এখানে অবস্থান করছি। যেই পর্যন্ত আমাদের দাবি না মেনে নেওয়া হবে, সেই পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ