নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা ৪৫ রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে আটক করা হয়েছে। সোমবার তাদের আটক করা হয়। ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দুপুরে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী পশ্চিম এলাকা দিয়ে তারা লোকালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশকে খবর দেন। বিকেলে পুলিশ এসে তাদের নিয়ে যায়।

এর আগে গত ৩ মে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় ৩৫ রোহিঙ্গাকে পতেঙ্গা সৈকত এলাকা থেকে আটক করে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর টিম।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার বলেন, দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা চার নারী, ২৩ শিশুসহ ৪৫ রোহিঙ্গা ভাটিয়ারীতে পরিত্যক্ত একটি শিপইয়ার্ড দিয়ে প্রবেশের সময় স্থানীয় লোকজন তাদের আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। তিনি জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের দুপুরের খাবার, নাশতা ও পানির ব্যবস্থা করেন স্থানীয়রা। এ ছাড়া তাদের থানায় নিতে একটি বাসও ভাড়া করে দেন।

আটক নুর কাসেম, সফি আহমেদ, কাদের, ছাবিতা, শাহানুরসহ একাধিক রোহিঙ্গা জানান, ভাসানচরে তারা খাবারের অভাবে কষ্টে দিনযাপন করছেন। বাধ্য হয়ে দালালের মাধ্যমে জনপ্রতি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকার চুক্তিতে পালিয়ে এসেছেন। দালালরা গত রোববার গভীর রাতে চারটি নৌকায় করে তাদের নিয়ে রওনা হয়। দুপুরে ভাটিয়ারী সাগর উপকূলে এলাকাবাসী তাদের আটক করলে দালালরা পালিয়ে যায়। তারা টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে ফিরতে চান।

সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

ফখরুল ইসলাম বলেন, ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গারা চারটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ নামক স্থানে যাচ্ছিল। সেখান থেকে টেকনাফ ক্যাম্পে তাদের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। পথে একটি নৌকা বিকল হলে দালালরা ভাটিয়ারীতে পরিত্যক্ত একটি শিপইয়ার্ড এলাকায় তাদের নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের আটক করেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। পরিত্যক্ত ইয়ার্ডগুলো পুলিশের নজরদারিতে আছে।

ঘটনাস্থলে থাকা থানার এসআই বিল্লাল হোসেন বলেন, ৪৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আটক ৪৫ র হ ঙ গ ভ স নচর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ মঙ্গলবার চার দিনের মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। এই সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একাধিক বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। ট্রাম্প এমন সময় এই সফর করছেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই সফরে গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, বাণিজ্য ও তেলের দাম কমানো নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। এসব দেশে তাঁর সন্তানদের একাধিক ব্যবসা ও আবাসন প্রকল্প আছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে দুটি দেশ সৌদি আরবে বৈঠকে বসেছে। এ কারণে সৌদি আরব ওয়াশিংটনের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় সংক্রান্ত আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার।

ট্রাম্পের সফরের প্রথম দিনেই সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ ফোরাম অনুষ্ঠিত হবে। চলতি সপ্তাহেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে ব্ল্যাকরকের সিইও ল্যারি ফিঙ্ক, প্যালান্টিয়রের সিইও অ্যালেক্স কার্প এবং সিটি গ্রুপ, আইবিএম, কোয়ালকম, অ্যালফাবেট ও ফ্রাঙ্কলিন টেম্পলটনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। এ ছাড়া হোয়াইট হাউসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্রিপ্টোবিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকসও এই ফোরামে অংশ নেবেন।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ঘিরে বৈশ্বিক কেন্দ্র হতে চাইছে। এ জন্য তারা এআই অবকাঠামোতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এ কারণে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সেমিকন্ডাক্টর কিনতে চাইছে। বাইডেনের আমলে এ বিষয়ে আইনি জটিলতা থাকলও ট্রাম্প প্রশাসন সে বিষয়টি সহজ করতে চাইছে।

পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজস্ব বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে চায়। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ও সহায়তা চেয়েছে দেশটি।

ইসরায়েল-গাজা আলোচনা

ট্রাম্পের সফরের আরেকটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ। তিনি এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে গাজা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যও করেছেন তিনি। সম্প্রতি বলেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, তিনি গাজাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ আবাসন প্রকল্প’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।’

তেলের দাম এবং অর্থনীতি

সিরিয়ার নতুন সরকারের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয় নিয়েও এই সফরে আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ব্রাঞ্চ। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসন পারস্য উপসাগরের নাম পাল্টে ‘আরব উপসাগর’ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। আরব দেশগুলো নতুন নাম উত্সাহের সঙ্গে গ্রহণ করলেও ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।

তেলের দাম নিয়ে আলোচনাও গুরুত্ব পাবে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে (ওপেক) তেলের উৎপাদন বাড়াতে চাপ দিয়ে আসছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের জন্য দাম কমানো যায়। তাই এই সফরে তেলের উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ