দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে
Published: 14th, May 2025 GMT
আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি নতুন নয়। যতই অভিযান চালানো হোক, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হোক না হোক, দিন শেষে দেখা যায় পুরোনো চিত্র ফিরে এসেছে। গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়েই সেই সত্যতা মেলে। যে সেবা নাগরিক অধিকার হিসেবে সহজে পাওয়ার কথা, সেখানে তা আজও দালালদের হাতে জিম্মি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে সাধারণ মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আর দালালের মাধ্যমে আসা ব্যক্তি চটজলদি সেবা পেয়ে যান। শুধু ফরম পূরণ নয়, বয়স পরিবর্তন বা কাগজে জালিয়াতির মতো গুরুতর বিষয়ও টাকা দিয়ে সহজে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একজন দালাল খোলাখুলিই স্বীকার করছেন যে ৩২ হাজার টাকায় ভোটার আইডি ও পাসপোর্টে বয়স বাড়িয়ে দেওয়া যাবে। এতে কি বোঝা যায় না পাসপোর্ট অফিসের বাইরে শুধু দালাল নয়, ভেতরে থাকা কেউ না কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত?
পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক দাবি করছেন, দালালদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। অফিসের সামনে একটি কম্পিউটার দোকানসহ আশপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান, যেখান থেকে সরাসরি ‘কাজ’ করিয়ে নেওয়া যাচ্ছে। এসব দোকানে দিনের পর দিন দালাল চক্র কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে অথচ প্রশাসন কিছুই জানে না—এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং এটা স্পষ্ট যে পাসপোর্ট অফিসের ভেতর ও বাইরে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র কাজ করছে, যারা সাধারণ মানুষের দুর্বলতা ও নিরুপায় অবস্থাকে পুঁজি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতি আর কত দিন চলবে? পাসপোর্ট একটি আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র, এর তথ্য ও প্রক্রিয়া নিয়ে এত সহজে জালিয়াতি হলে তা শুধু নাগরিক নিরাপত্তার জন্য নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অবিলম্বে পাসপোর্ট কার্যালয়টি সম্পূর্ণ দালালমুক্ত করতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের দালালদের দোকান সরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে পাসপোর্ট কার্যালয় থেকেই একটি হেল্প ডেস্ক বসানো হোক সেবাগ্রহণকারীদের জন্য। এটি করা গেলে মানুষ আর বাইরের দোকানের ওপর নির্ভরশীল হবে না এবং সেখানে গিয়ে দালালের প্রলোভনেও পড়বে না। এ ছাড়া পাসপোর্ট কার্যালয়ের ভেতরে কে বা কারা এই চক্রকে সহায়তা করছেন, তা অনুসন্ধান করে যথাযথ শাস্তি দিতে হবে। এ জন্য পাসপোর্ট কার্যালয়টির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। আমরা আশা করব, অচিরেই গাজীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অফ স র
এছাড়াও পড়ুন:
চুল ঝরা কমাতে কী করবেন
বর্ষা ঋতুতে সতেজ এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেখা মিললেও, এটি আমাদের চুলের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময় চুল বেশি ঝরে। কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে বর্ষাকালে চুল পড়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
বাতাসের আর্দ্রতা চুলের স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে। অতিরিক্ত আর্দ্রতার ফলে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। ফলে ধুলাবালি ও জীবাণু জমে গিয়ে চুল পড়ার সমস্যা আরও বেড়ে যায়। প্রায়ই স্ক্যাল্পে বেশি ঘাম হয়। ফলে চুলের গোড়ার ছিদ্র বন্ধ হয়ে গোড়া দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও খুশকির কারণে চুল পড়া তীব্র আকার নিতে পারে।
বর্ষাকালে চুল পড়া কমাতে যা করতে পারেন–
বৃষ্টি ভেজা চুলের বিশেষ যত্ন
বৃষ্টির পানি যতটা বিশুদ্ধ মনে হয়, ততটা পরিষ্কার নয়। এতে প্রায়ই দূষণকারী এবং অ্যাসিডিক উপাদান থাকে, যা আপনার চুলকে ভঙ্গুর করে তুলতে পারে এবং ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। সঠিক যত্ন ছাড়াই বৃষ্টির পানির সংস্পর্শে আসার ফলে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাইরে বেরোনোর সময় স্কার্ফ বা ছাতা ব্যবহার করুন। বৃষ্টির পানিতে চুল ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃদু শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মাথার ত্বকের যত্ন
এ সময় পরিষ্কার এবং শুষ্ক মাথার ত্বক বজায় রাখুন। সপ্তাহে একবার বা দু’বার চুলে তেল লাগান। এতে চুল পুষ্টি পাবে এবং শুষ্কতা রোধ হবে। হালকা গরম তেল দিয়ে মাথার ত্বকে হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা আপনার চুলের গোড়ার পুষ্টি বাড়ায়। চুল ধোয়ার পর ভাঙা এড়াতে মাইক্রোফাইবার তোয়ালে দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন। চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এ সময় হিট স্টাইলিং সরঞ্জামের ব্যবহার কমিয়ে আনাও বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিদিন মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আলতো করে চুল আঁচড়ান। চেষ্টা করবেন কাঠের চিরুনি ব্যবহার করার।
শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার
এমন ফর্মুলেশনের শ্যাম্পু খুঁজুন যাতে ছত্রাকবিরোধী এবং খুশকিবিরোধী বৈশিষ্ট্য থাকে। অত্যধিক রাসায়নিক পদার্থ মেশানো শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন। এটি আপনার চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দিতে পারে। হাইড্রেটিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি আর্দ্রতার কারণে সৃষ্ট কুঁচকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার
চুলের স্বাস্থ্য সরাসরি আমাদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে যুক্ত। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন (ডাল, মাছ, ডিম), ভিটামিন এ, সি, ই এবং দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করুন।
হেয়ার মাস্ক
বর্ষায় চুল পড়া রোধে ঘরে তৈরি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
নারকেল ও লেবুর রস
এক কাপ নারকেল তেলে দুই চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে হালকা গরম করুন। তারপর স্ক্যাল্পে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। এটি খুশকি কমায়, চুল পড়া রোধ করে এবং স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে।
মেথির পেস্ট
রাতে দুই টেবিল চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পেস্ট বানিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান। ৩০-৪০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। মেথি চুল পড়া ও চুলের রুক্ষতা কমায়, চুলের গ্রোথ বাড়ায়।
অ্যালোভেরা জেল
পরিষ্কার অ্যালোভেরা পাতা থেকে জেল বের করে নিন। স্ক্যাল্প ও চুলে মেখে নিন। ৩০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু করুন। অ্যালোভেরা মাথার ত্বক ঠান্ডা রাখে, ফাঙ্গাল সমস্যা কমায় এবং চুল মসৃণ করে।
দই ও মধু
তিন টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলে প্রোটিন জোগায় ও ন্যাচারাল কন্ডিশনারের মতো কাজ করে।
পেঁয়াজের রস
একটি পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে রস বের করুন। তুলা দিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান, হালকা ম্যাসাজ করুন। ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করুন। পেঁয়াজের সালফার চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। v
মডেল: মার্শিয়া; ছবি: আর্কাইভ
তথ্যসূত্র: স্মিটেন, গ্ল্যামভেডা