Prothomalo:
2025-05-15@10:54:31 GMT

ভারতের আচরণ বন্ধুসুলভ নয়

Published: 15th, May 2025 GMT

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এক দেশের নাগরিক আরেক দেশে ঢুকে পড়লে বা অবস্থান করলে তাদের ফেরত পাঠানোর যে রীতি আছে, সেটা কোনো
দেশ উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু ভারত চলতি মাসের প্রথম দিকে বেশ কিছু মানুষকে জোরপূর্বক বাংলাদেশের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নীতি ও ১৯৭৫ সালের যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রতিবাদ করেছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে। এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ভারতের ফেরত পাঠানো উচিত। ৭ ও ৮ মে পুশ ইন করার পর বাংলাদেশ ওই কূটনৈতিক পত্র পাঠায়। এই বার্তার মর্মার্থ দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা উপলব্ধি করবেন কি না, সেটাই বিচার্য বিষয়।

২০০ থেকে ৩০০ ব্যক্তিকে খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে বলে জানা গেছে; যাদের মধ্যে ৭৮ জনকে ৯ মে বিএসএফ একটি জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে গেছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক পত্রে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে পুশ ইন বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এভাবে রাতের আঁধারে এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষকে ঠেলে দেওয়া যায় না।

গত বছর বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে নানা বিষয়েই টানাপোড়েন চলছে; যদিও সেটি ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেকোনো দুই দেশের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই আন্তর্জাতিক রীতি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলের পর নয়াদিল্লির মনোভাব সহযোগিতামূলক, এটা বলা যাবে না। তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। 

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর আশা করা গিয়েছিল, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বরফ গলবে। বাস্তবে যে গলেনি, তার প্রমাণ সীমান্তে পুশ ইন চাপিয়ে দেওয়া। ভারতের পুশ ইন পদক্ষেপ এটাই প্রথম নয়। নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধেও তারা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল। এবার তারা এমন সময়ে পুশ ইন করল, যখন পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা চলছিল। ভারতের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের মানুষের উদ্বেগ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

প্রতিবেশী বৃহৎ দেশটি যদি বৈরিতা জিইয়ে রাখতে না চায়, তাদের উচিত হবে এসব উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমমর্যাদা এবং পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতকে এই বিষয় মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত—এই দুই প্রতিবেশী দেশের মানুষ যাতে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারে, একে অপরের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে দুই দেশকেই।

অতএব, পুশ ইনের মতো অমানবিক পদক্ষেপ থেকে ভারত বিরত থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদক ষ প প শ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

জানুয়ারি থেকে মার্চে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৭ জন নিহত

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে সারাদেশে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৩ জন করে নিহত হন। সর্বোচ্চ ৪১ জন মারা যান মার্চে। এ ছাড়া ১ হাজার ৯৯৯ জন সহিংসতায় আহত হয়েছেন।

গতকাল বুধবার মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীদের পাঠানো তথ্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই তিন মাসে নানা ধরনের সহিংসতায় ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া নিম্ন আদালত থেকে ২৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে আটটি। এর মধ্যে পিটিয়ে মারা হয় তিনজনকে, নির্যাতনে মারা যান দু’জন আর গুলিতে নিহত হন তিনজন। কারাগারে মারা যান ১৯ জন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ছয় বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চোর-ডাকাতসহ বিভিন্ন সন্দেহে ৩৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে ৬৪টি। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ৪৭ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন ১০ জন, আক্রমণ ও গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন করে। এ ছাড়া হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচজন। 

নারীর ওপর সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪ জন। এই ক’মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৫৭ নারী। তাদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১৫০ জন এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারী ৫৩ জন। বয়স জানা যায়নি ৫৩ নারীর। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২ নারী। 

প্রতিবেদনে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে– আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করা; নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ বাস্তবায়ন করাসহ নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপশনাল প্রোটোকল অনুমোদন করা; গুমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া; কারা কর্মকর্তাদের অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া; সর্বস্তরে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা; বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬, সন্ত্রাস দমন আইন, ২০০৯ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩সহ সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল; নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া এবং সীমান্তে বিএসএফের সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করাসহ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক মেনে চলা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জানুয়ারি থেকে মার্চে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৭ জন নিহত
  • উপদেষ্টা মাহফুজকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ন
  • হলের কক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার
  • জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা ছাত্র ইউনিয়নের
  • ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে অব্যাহত মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ
  • একটা ‘ঘৃণা নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ এখন সময়ের দাবি: সায়ান
  • ‘একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে বেশ্যা ডেকে কেন পার পাবেন?’
  • পুলিশ স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের বড়ি খাওয়ান, দেন আঙুর ফলও, এরপরে করেন হত্যা
  • ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’ সহ্য করবে না ভারত: নরেন্দ্র মোদি