বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এক দেশের নাগরিক আরেক দেশে ঢুকে পড়লে বা অবস্থান করলে তাদের ফেরত পাঠানোর যে রীতি আছে, সেটা কোনো
দেশ উপেক্ষা করতে পারে না। কিন্তু ভারত চলতি মাসের প্রথম দিকে বেশ কিছু মানুষকে জোরপূর্বক বাংলাদেশের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নীতি ও ১৯৭৫ সালের যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এর প্রতিবাদ করেছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে। এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ভারতের ফেরত পাঠানো উচিত। ৭ ও ৮ মে পুশ ইন করার পর বাংলাদেশ ওই কূটনৈতিক পত্র পাঠায়। এই বার্তার মর্মার্থ দিল্লির নীতিনির্ধারকেরা উপলব্ধি করবেন কি না, সেটাই বিচার্য বিষয়।
২০০ থেকে ৩০০ ব্যক্তিকে খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে বলে জানা গেছে; যাদের মধ্যে ৭৮ জনকে ৯ মে বিএসএফ একটি জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে গেছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক পত্রে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে পুশ ইন বন্ধ করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এভাবে রাতের আঁধারে এক দেশ থেকে আরেক দেশে মানুষকে ঠেলে দেওয়া যায় না।
গত বছর বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলের পর ভারতের সঙ্গে নানা বিষয়েই টানাপোড়েন চলছে; যদিও সেটি ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেকোনো দুই দেশের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই আন্তর্জাতিক রীতি। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলের পর নয়াদিল্লির মনোভাব সহযোগিতামূলক, এটা বলা যাবে না। তারা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর আশা করা গিয়েছিল, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বরফ গলবে। বাস্তবে যে গলেনি, তার প্রমাণ সীমান্তে পুশ ইন চাপিয়ে দেওয়া। ভারতের পুশ ইন পদক্ষেপ এটাই প্রথম নয়। নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধেও তারা বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছিল। এবার তারা এমন সময়ে পুশ ইন করল, যখন পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা চলছিল। ভারতের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের মানুষের উদ্বেগ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
প্রতিবেশী বৃহৎ দেশটি যদি বৈরিতা জিইয়ে রাখতে না চায়, তাদের উচিত হবে এসব উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমমর্যাদা এবং পরস্পরের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতকে এই বিষয় মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত—এই দুই প্রতিবেশী দেশের মানুষ যাতে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারে, একে অপরের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে দুই দেশকেই।
অতএব, পুশ ইনের মতো অমানবিক পদক্ষেপ থেকে ভারত বিরত থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর সীমান্ত থেকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
ওই ব্যক্তির নাম বদরউদ্দীন (৩০)। তিনি জেলার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর গ্রামের স্কুল পাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে।
আরো পড়ুন:
পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ল শিশুটি, বিজিবির সহায়তায় জীবনরক্ষা
দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও মিলনমেলার প্রতীক: বিজিবির মহাপরিচালক
বুধবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ভারতের নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বদরউদ্দীন মানব পাচারে জড়িত। বুধবার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাঁচ থেকে ছয় জনকে ভারতে পাচার করছিলেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া করলে বদরউদ্দীনের সঙ্গে থাকা লোকজন পালিয়ে যায়। তবে, ধরা পড়েন তিনি। পরে বিএসএফ সদস্যরা তাকে নোনাগঞ্জ ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিএসএফ সদস্যরা এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিজিবি পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিএসএফ এক জনকে ধরে নিয়ে গেছে বলে লোকমুখে শুনেছি।’’
মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘‘অসমর্থিত সূত্রে জানতে পেরেছি, বিএসএফ এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।’’
ঢাকা/মামুন/রাজীব