বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব উপাচার্যের একই দশা
Published: 15th, May 2025 GMT
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে দায়িত্ব পালন করা পাঁচজন উপাচার্যের সবাইকে আন্দোলনের মুখে পড়তে হয়েছে। এর জেরে তাঁদের কয়েকজনকে অব্যাহতি বা ছুটিতে পাঠানো, নইলে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে অধ্যাপক শুচিতা শরমিন এবং সহ-উপাচার্যের পদ থেকে গোলাম রব্বানি ও কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে মামুনুর রশিদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ তিনজনকে এভাবে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম।
নিয়োগের প্রায় আট মাসের মাথায় এভাবে উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় হতাশ বলে জানালেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক আশা-আকাঙক্ষা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলাম; কিন্তু এখন আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও আশাহত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পাঁচজন উপাচার্যকেই বিক্ষোভ–আন্দোলন ও অপমান-অপদস্থের মুখোমুখি হতে হয়েছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক হারুন অর রশিদ। তাঁর চার বছরের মেয়াদে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে দুই দফা আন্দোলন হয়েছিল। দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এস এম ইনামুল হক সবচেয়ে বেশি আন্দোলনের মুখো পড়েন। শিক্ষকদের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। দুই দফায় তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনে একবার ১৫ দিন ও আরেকবার টানা ৪৪ দিন বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হয়েছিল। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে ইনামুল হককে তিন মাসের ছুটিতে পাঠায়। ছুটিতে থাকাকালেই তাঁর মেয়াদ পূর্ণ হয়।
শুচিতা শরমিন দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র নারী উপাচার্য হয়েও টিকতে পারেননি। তাঁকে অপমান-অপদস্থ করে বিদায় করা হলো। তাঁকে সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি।অধ্যাপক শাহ সাজেদা, সভাপতি, বরিশাল মহিলা পরিষদবিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান মো.
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শুচিতা শরমিন। তিনি যোগদানের পর প্রথম বিক্ষোভের মুখোমুখি হন গত ২৬ নভেম্বর। ওই দিন আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিলে শিক্ষকদের একটি অংশ তাঁকে আওয়ামী লীগের দোসর অ্যাখ্যা দিয়ে নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশও যোগ দেয়। দ্বিতীয় দফায় গত ১৩ ফ্রেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় আন্দোলন শুরু হয় গত ২৭ এপ্রিল। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ চার দফা দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের এসব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শুচিতা শরমিন ৪ মে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁর পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করেন, উপাচার্যরা যে আন্দোলনের মুখে পড়েছেন, এর পেছনে আছে স্থানীয় রাজনীতি ও শিক্ষকদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এ সময় এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরাও।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন বরিশাল মহিলা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, উপাচার্যদের বিরুদ্ধে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ নিহিত ছিল না। পুরোটাই স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিকদের স্বার্থ ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত স্বার্থ।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইমামুল হকের মতো একজন বরেণ্য শিক্ষাবিদকেও অপমান-অপদস্থের শিকার হয়ে ছুটিতে থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। শুচিতা শরমিন দেশের ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র নারী উপাচার্য হয়েও টিকতে পারেননি। তাঁকে অপমান-অপদস্থ করে বিদায় করা হলো। তাঁর মতো একজন শিক্ষককে সরকার উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল, তাঁকে সুরক্ষার দায়িত্বও সরকারের ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি।
তবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের অন্যতম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ মনে করেন, এই আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়নি; বরং এটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মর্যাদার বিষয়। কারণ, তাঁরা উপাচার্যদের কাছ থেকে সব সময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আশা করেছেন। যখন পাননি, তখন প্রতিবাদ করেছেন।
আরও পড়ুনশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে অব্যাহতি১৩ মে ২০২৫শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মনে করেন, উপাচার্যরা যে আন্দোলনের মুখে পড়েছেন, এর পেছনে আছে স্থানীয় রাজনীতি ও শিক্ষকদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এ সময় এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৪ জন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব ঘটনায় তাঁরা বিব্রত। বারবার আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত ১১ জন শিক্ষার্থী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যত আন্দোলন হয়েছে, বেশির ভাগের নেপথ্যে ছিল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও দ্বন্দ্ব। সেখানে নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের কোনো লাভ হয়নি; বরং ক্ষতি হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র একট উপ চ র য হ স ব উপ চ র য র শ ক ষকদ র দ বন দ ব র পর প শরম ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ইস্টার্ন রিফাইনারিতে রেকর্ড জ্বালানি তেল পরিশোধন
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করেছে। ৫৭ বছরের ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ তেল পরিশোধন করল সংস্থাটি। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় শোধনাগারটির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইআরএল বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার। এখানে বিপিসির মাধ্যমে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন, এলপিজি, ফার্নেস অয়েলসহ ১৪ ধরনের জ্বালানি উৎপন্ন হয়। সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন ইআরএল পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান, বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা ও ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত।
ইআরএলের চেয়ারম্যান নাসিমুল গনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি তেল শোধন সম্ভব হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার শোধন কার্যক্রমে বড় অগ্রগতি হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শোধিত হয়েছিল ১২ লাখ ৭৯ হাজার টন; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৭৭ হাজার টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৩ হাজার টন শোধন হয়েছিল, যা এত দিন ছিল সর্বোচ্চ।
বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এ ছাড়া মহেশখালীতে ১০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন শোধনাগার এবং পায়রা বন্দরে আরেকটি শোধনাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে মহেশখালীর জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল শোধন করতে পারে ইআরএল। দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ করা গেলে শোধন ক্ষমতা বেড়ে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত বলেন, বর্তমানে পরিশোধন ক্ষমতা যথেষ্ট না হওয়ায় প্রতিবছর ডিজেলসহ বিভিন্ন জ্বালানি আমদানি করতে হয়। এতে সরকারকে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয়। ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়িত হলে বছরে প্রায় ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।