যুদ্ধবিরতির জেরে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই বন্ধ হলেও থামছে না বাগ্‌যুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি হুমকির মধ্যে এবার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে দুই দেশ। বিপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো নজরদারিতে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তাঁরা। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ১৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা বন্ধে ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। এরপর বৃহস্পতিবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি পরিদর্শনে যান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রে জাতিসংঘের নজরদারির কথা তোলেন তিনি।

পাকিস্তানকে ‘দুর্বৃত্ত’ রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি বিশ্বের সামনে একটি প্রশ্ন করতে চাই। তা হলো, পাকিস্তানের মতো দুর্বৃত্ত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র কি নিরাপদ? আমার মনে হয়, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আইএইএর (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা) নজরদারিতে আনা উচিত।’

ভারতের মন্ত্রীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাতে বলা হয়, পাকিস্তানের বদলে আইএইএর উচিত হবে ভারতে যে ‘পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদান-সংক্রান্ত চুরি ও পাচারের ঘটনাগুলো’ ঘটছে, সেগুলো তদন্ত করা।

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আইএইএর সদস্য। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার-সংক্রান্ত নিয়মনীতি প্রণয়ন করে থাকে সংস্থাটি। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কাছে ১৩০ থেকে ১৪০টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার আহ্বান

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব ১৯৪৭ সালে দেশ দুটির জন্মের পর থেকেই। উপত্যকাটির মালিকানা নিয়ে সবশেষ তাদের যুদ্ধটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। এর পর থেকে এবারই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হলো। পেহেলগাম হামলা ঘিরে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি কিছু পদক্ষেপও নেয়। এর মধ্যে আলোচিত ছিল ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা।

সংবাদমাধ্যম ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এবার কাশ্মীর ও পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বুধবার শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাস পরিদর্শনের সময় এমন আহ্বান জানান তিনি। এ সময় ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সময় পাকিস্তানের ‘সফলতা’ তুলে ধরে সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি।

এর আগে সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করে আবার হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার মোদিকে সতর্ক করে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘যদি আবার আমাদের ওপর হামলা চালান, তবে সবকিছু হারাবেন। আমরা যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত, আবার সংলাপের জন্যও। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।’

ভারতের রিপাবলিক ডের কুচকাওয়াজে অগ্নি–৪ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ের নিরাপত্তায় বসছে এআই নজরদারি

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেবল ক্যামেরার চোখে নয়, এবার নিরাপত্তা দিতে যোগ হবে আধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)।

প্রথম ধাপে বসানো হবে ৬২৪টি ক্যামেরা।এর মধ্যে আছে ৪৩টি ফেস ডিটেকশন ক্যামেরা–মুখ শনাক্তে পারদর্শী।২০টি বুলেট ক্যামেরা–দূরপাল্লার নজরদারিতে ব্যবহার।৪টি পিটিজেড (PTZ) ক্যামেরা–ঘুরে ঘুরে পূর্ণাঙ্গ চিত্র ধারণে দক্ষ ৭টি ড্রন ক্যামেরা।

আগুন ও অব্যবস্থাপনার আলোড়ন
২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন ছিল গোটা প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে চেতনায় নাড়া দেওয়া একটি ঘটনা। তদন্তে উঠে আসে-অধিকাংশ ক্যামেরা কাজ করছিল না, ব্যাগেজ স্ক্যানার ছিল অকেজো।

আরো পড়ুন:

নয়নের পরিবারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘিরে উদ্বেগ আর ‘সন্দেহ’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য দ্রুত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ভবনের প্রতিটি প্রবেশমুখ, সীমানা ও গুরুত্বপূর্ণ করিডোরে।

প্রযুক্তিবিদদের কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইয়েদ মাহমুদ উল্লা বলেন, “বর্তমান বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি ইনফ্রারেড সেন্সর যুক্ত ক্যামেরা। অন্ধকারে যেমন কাজ করে, তেমনি মানুষের শরীরের তাপমাত্রা শনাক্ত করতে পারে। এমনকি ছোট প্রাণীও ধরা পড়ে এই ক্যামেরায়। এসব প্রযুক্তি ভালোভাবে ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে অন্তত ৮ থেকে ১০ বছর কার্যকর থাকে।”

পুলিশের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “প্রশাসনিক সচেতনতার অভাব আমাদের নিরাপত্তাকে দুর্বল করে রেখেছে। সচিবালয়ের মতো স্থানে এমন দুর্বলতা অনভিপ্রেত। নিরাপত্তা কেবল যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি একটি কৌশলগত সংস্কৃতিও। পরিকল্পনায় নজরদারির বিষয়টি যতটা গুরুত্ব পায়, বাস্তবায়নে তা পায় না। এটাই বড় দুর্বলতা।”

বাজেট 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ পেলে ক্যামেরা কেনা শুরু হবে। প্রকল্পটি ‘সচিবালয় নিরাপত্তা আধুনিকীকরণ’ নামে কার্যক্রম শুরু করবে।”

তিনি বলেন, “প্রকল্পে ভবিষ্যতে বায়োমেট্রিক এক্সেস কন্ট্রোল, ভিজিটর ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ফায়ার অ্যালার্ম ইন্টিগ্রেশন এবং স্বয়ংক্রিয় প্রবেশগেট সিস্টেম সংযুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে।”

প্রযুক্তির ছায়ায় নিরাপত্তার ছাদ
সম্প্রতি সরকার সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তা দেশে সরকারি ভবন পর্যায়ে নজরদারির ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরাগুলোর বিশেষত্ব হলো-এগুলো শুধুমাত্র ভিডিও ধারণ করে না, বরং চেহারা শনাক্ত, গাড়ির নম্বর চিহ্নিত এবং সন্দেহজনক আচরণ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।

একটি অজানা মুখ যদি সীমান্ত অতিক্রম করে সচিবালয়ে প্রবেশ করে বা অনুমোদনহীন গাড়ি গেট পেরোতে চায়, সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং রুমে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সচিবালয়ের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মডেল অনুসরণ করে প্রযুক্তির প্রয়োগ হবে। গাফিলতির সুযোগ আর থাকবে না।”

সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “সচিবালয়ে প্রযুক্তির নতুন যাত্রা কেবল একটি প্রকল্প নয় বরং একটি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সূচনা। যেখানে নিরাপত্তা মানে কেবল প্রহরী নয় বরং তথ্য, বিশ্লেষণ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সমন্বয়।একদিকে বিদেশি প্রযুক্তি, অন্যদিকে প্রশাসনিক সদিচ্ছা-দুইয়ের মিলনে যদি বাস্তবায়ন হয় পরিকল্পনা, তবে এ উদ্যোগ হতে পারে গোটা দেশের সরকারি ভবনগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি টেমপ্লেট।”

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৩৩ সিসি ক্যামেরায় বাড়ল পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা
  • ডলারের দাম বাজারের হাতে, থাকবে নজরদারি
  • অ্যাপলের তৈরি ইয়ারপডসের মাধ্যমে কি নজরদারি করা সম্ভব
  • সচিবালয়ের নিরাপত্তায় বসছে এআই নজরদারি