পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
Published: 15th, May 2025 GMT
যুদ্ধবিরতির জেরে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই বন্ধ হলেও থামছে না বাগ্যুদ্ধ। পাল্টাপাল্টি হুমকির মধ্যে এবার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে দুই দেশ। বিপক্ষের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো নজরদারিতে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তাঁরা। এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ১৮ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার জেরে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা বন্ধে ১০ মে যুদ্ধবিরতিতে একমত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। এরপর বৃহস্পতিবার ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটি পরিদর্শনে যান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রে জাতিসংঘের নজরদারির কথা তোলেন তিনি।
পাকিস্তানকে ‘দুর্বৃত্ত’ রাষ্ট্র আখ্যা দিয়ে রাজনাথ সিং বলেন, ‘আমি বিশ্বের সামনে একটি প্রশ্ন করতে চাই। তা হলো, পাকিস্তানের মতো দুর্বৃত্ত ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র কি নিরাপদ? আমার মনে হয়, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রগুলো আইএইএর (জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা) নজরদারিতে আনা উচিত।’
ভারতের মন্ত্রীর বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাতে বলা হয়, পাকিস্তানের বদলে আইএইএর উচিত হবে ভারতে যে ‘পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় উপাদান-সংক্রান্ত চুরি ও পাচারের ঘটনাগুলো’ ঘটছে, সেগুলো তদন্ত করা।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই আইএইএর সদস্য। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার-সংক্রান্ত নিয়মনীতি প্রণয়ন করে থাকে সংস্থাটি। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের কাছে ১৩০ থেকে ১৪০টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৪০ থেকে ১৫০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার আহ্বান
কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব ১৯৪৭ সালে দেশ দুটির জন্মের পর থেকেই। উপত্যকাটির মালিকানা নিয়ে সবশেষ তাদের যুদ্ধটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। এর পর থেকে এবারই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হলো। পেহেলগাম হামলা ঘিরে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি কিছু পদক্ষেপও নেয়। এর মধ্যে আলোচিত ছিল ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করা।
সংবাদমাধ্যম ডন-এর খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এবার কাশ্মীর ও পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বুধবার শিয়ালকোটের পাসরুর সেনানিবাস পরিদর্শনের সময় এমন আহ্বান জানান তিনি। এ সময় ভারতের সঙ্গে সংঘাতের সময় পাকিস্তানের ‘সফলতা’ তুলে ধরে সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি।
এর আগে সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাকিস্তানের প্রতি ইঙ্গিত করে আবার হামলা চালানোর হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুধবার মোদিকে সতর্ক করে শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘যদি আবার আমাদের ওপর হামলা চালান, তবে সবকিছু হারাবেন। আমরা যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুত, আবার সংলাপের জন্যও। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।’
ভারতের রিপাবলিক ডের কুচকাওয়াজে অগ্নি–৪ ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় আইএইএকে তদন্তের আহ্বান ইরানের
পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইরান। দেশটির এসএনএন নিউজ নেটওয়ার্কের বরাতে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
এসএনএন নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসিকে চিঠি লিখেছেন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান মোহাম্মদ এসলামি। চিঠিতে তিনি গতকাল শনিবার রাতে মার্কিন হামলার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
মোহাম্মদ এসলামি মার্কিন পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আইএইএর প্রধানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি রাফায়েল গ্রোসির ‘নিষ্ক্রিয়তা এবং দুষ্কর্মে সহায়তার’ জন্য সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ইরানের পক্ষ থেকে ‘যথাযথ আইনি ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।
এর আগে রাফায়েল গ্রোসি আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ইরানের জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামীকাল সোমবার আইএইএ’র বোর্ড অব গভর্নররা জরুরি বৈঠকে বসবেন।