তিন দফা দাবিতে ঢাকার কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ চলছে। আজ শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজের পর বেলা সোয়া ২টার দিকে এই সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাইরাও যোগ দিয়েছেন।

সমাবেশ কর্মসূচি আজ সকাল ১০টায় হওয়ার কথা ছিল। পরে ঘোষণা দিয়ে সমাবেশের সময় দেড় ঘণ্টা পিছিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্‌দীন। এরও পরে সমাবেশ শুরু হয়।

সমাবেশে বক্তারা তিন দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাঁরা বলছেন, এই তিন দফা দাবি যৌক্তিক। অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুত এ তিন দফা দাবি মেনে নেওয়া উচিত। দাবিগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নের ঘোষণা যতক্ষণ না দেওয়া হবে, ততক্ষণ এ আন্দোলন চলবে। এ সময় বক্তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও বিচারের দাবি জানান।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক শিক্ষার্থী মাকসুদুর রহমান বলেন, তিন দফা দাবির সবগুলোই যৌক্তিক। এ দাবিগুলো আজকের নতুন কোনো দাবি নয়। অনেক দিন ধরেই শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় এসব দাবি জানিয়ে আসছেন। তাই দাবিগুলোর পুরোটাই মেনে নিতে হবে।

সাবেক শিক্ষার্থী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাসদ মার্ক্সবাদীর নেতা মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি সরকারকে মেনে নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের হামলার বিচার করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর আমির শাহীন আহমেদ খান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। নয়তো সাবেক-বর্তমান সব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।

সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান, সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাইরা অংশ নেন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এক কলসি পানির জন্য যেতে হয় দেড় কিলোমিটার

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নে বনঘেঁষা খলচন্দা গ্রামে ৫০টি কোচ পরিবারের পাঁচ শতাধিক সদস্যের বসবাস। শুকনো মৌসুমে এখানে পানির সংকট পুরোনো। এবার সেই সংকট আরও বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার চলছে। পাহাড়ি টিলার ওপর একটি মাত্র গভীর নলকূপের পানিই তাদের ভরসা।

গ্রামের শেষ মাথায় পানি সংগ্রহে এসেছেন এ গ্রামের চিত্রা রানী কোচ। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘সারা গেরামে একটা টিউবয়েল। তাও বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে হয়। বৃদ্ধ বয়সে এ কষ্ট সহ্য হয় না।’

এ সময় চিত্রা রানীর সঙ্গে ছিলেন গ্রামের আরও কয়েকজন নারী। তারাও এসেছেন পানি নিতে। তারা জানান, পাহাড়ে প্রায় প্রতিটি ঘরে এখন বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির জন্য হাহাকার চলছে। গোসল, কাপড় ধোয়া, ও গৃহস্থালি কাজে বাড়ির পাশে চেল্লাখালী নদীর পানি ব্যাবহার করেন। বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ে নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে। বৃষ্টির সময় আবার সেই পানি ঘোলাটে হয়ে যায়। গোসলই করা যায় না। খাওয়া দূরের কথা। পানির জন্য অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। 

শুধু চিত্রা রানি কোচ নয়, আদিবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলার কালাপনি ও বুরুঙ্গা গ্রামের গারো, কোচ ও বানাই সম্প্রদায়ের সবার মুখে শুধুই পানি সংকটের কথা। পাহাড়ি উঁচুনিচু পথ বেয়ে পরিবারের সদস্যরা একবারে এক কলসি করে পানি আনতে পারেন। সেই পানি মেপে মেপে খরচ করতে হয় তাদের।

আদিবাসী অধ্যুষিত এ এলাকার কালাপনি ও বুরুঙ্গা গ্রামে ৪০ পরিবারের ৩০০ সদস্যের বসবাস। পানির জন্য চারটি মাটির কূপ তাদের ভরসা। কালাপনি গ্রামের সবিতা নকরেক বলেন, স্বামী, দুই ছেলে ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। কূপের পানিতে গৃহস্থালির কাজ সারেন। খাওয়ার জন্য সকাল ও বিকেল টিলা খাল পাড়ি দিয়ে আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে গভীর নলকূপের পানি আনতে হয়। বর্ষাকালে বাধ্য হয়ে কূপের ঘোলা পানিই খেতে হয়।

উত্তর আন্ধারুপাড়া গ্রামের গৃহিণী জোসনা বেগম বলেন, ‘কল (অগভীর নলকূপ) আছে; কিন্তু কলে পানি নেই। ঘরের কাজে সবাই নদীর ময়লা পানি ব্যবহার করে। খাওয়ার জন্য এক কিলোমিটার দূর থাইকা পানি লইয়া আসি।’

এ গ্রামের কয়েকজন বলছেন, পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় মাটির নিচে পাথর; তাই নলকূপ স্থাপন করা যায় না। তবে সাবমার্সিবল বসানো সম্ভব। কিন্তু ত বসানোর সামর্থ্য তাদের নেই। এতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে গ্রামবাসীকে কূপের ময়লা পানির ওপরই নির্ভর করতে হয়। 

উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা নূপুর আক্তার বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে। সংকট এলাকার চেয়ারম্যান আবেদন করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ