আগামী এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে
Published: 17th, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ল না। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। উন্নয়ন বাজেটে এ দুই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ৬ মে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। আগামীকাল রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি পাস হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের খসড়া এডিপি অনুসারে, শিক্ষা খাতে ৯১টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।
অন্যদিকে শিক্ষা খাতের ৩৫টি প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা।
উন্নয়ন বাজেটে এ দুই খাত প্রত্যাশিত মনোযোগ পাচ্ছে না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অনেকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। আগামী বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার ইঙ্গিত নেই।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীর যে ১০টি দেশ অর্থনীতির আকারের তুলনায় শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়, বাংলাদেশ তার একটি। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে একজন বাংলাদেশির বছরে ৮৮ ডলার খরচ করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসা খাতে মাথাপিছু খরচ হয় ৫৮ ডলার, যার বড় অংশই নাগরিকেরা নিজেরা সংস্থান করেন।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার হবে, বরাদ্দ বাড়বে। সুযোগ ছিল পুরোনো বাজেট কাঠামো বাদ দিয়ে নতুন বাজেট কাঠামো তৈরি করার। কিন্তু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হলে তা হবে আশ্চর্য হওয়ার মতো। যাঁরা এখন নীতিনির্ধারকের দায়িত্বে, তাঁরা এত বছর বলে আসছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
সেলিম রায়হানের মতে, এবার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে এবং ঋণও কম আসছে। এসব কারণে হয়তো এডিপিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমেছে। এ ছাড়া খরচ করার সক্ষমতার অভাবও আছে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের টাকা খরচের সক্ষমতার অভাব আছে। তাই যৌক্তিকভাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যেন বরাদ্দের টাকা কার্যকরভাবে খরচ করা সম্ভব হয়।
এডিপির কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা
এবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ব্যাপক পরিমাণে কমানো হচ্ছে। এবার কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য পরে তা কমিয়ে আনা হয়।
আগামীকালের এনইসি সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এতে সভাপতিত্ব করার কথা আছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। আর প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে ১ হাজার ১৪২টি প্রকল্প।
কোন খাতে কত বরাদ্দ
নতুন খসড়া এডিপিতে বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা।
অন্য খাতগুলোর মধ্যে গৃহায়ণ খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা; স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি: স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি; কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা; পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি; শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ যাচ্ছে। প্রায় সব খাতেই চলতি এডিপিতে বরাদ্দ কমেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর দ দ র খ বর দ দ ব প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীরা ১০ থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত পাবেন অর্থসহায়তা, আবেদন শেষ কাল
দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের অর্থসহায়তা বা চিকিৎসা অনুদান দেয় সরকার। প্রতি দুই মাস পর প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে এ সহায়তা দেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের অর্থসহায়তার মে-জুন প্রান্তের আবেদন শুরু হয়েছে। এ অনুদান পেতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিটি উপজেলা মাধ্যমিক ও থানা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানানোর জন্য প্রকাশ করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা অনুদান দেবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। আহত, অসচ্ছল ও চিকিৎসাধীন মেধাবী ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ অনুদান পাবেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর-পিএইচডির সুযোগ১৭ মার্চ ২০২৫চিকিৎসা অনুদান প্রাপ্তির জন্য চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীকে ই-চিকিৎসা অনুদান ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের- এ লিংকে প্রবেশ করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী ওপরের লিংক ব্যবহার করে অনলাইনে তাঁর চিকিৎসা মেয়াদে একবার মাত্র চিকিৎসা অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সময় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অর্থবছর অথবা এক বছরের মধ্যে হতে হবে।
আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫চিকিৎসা অনুদানের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রমাণে জেলা পর্যায়ে সিভিল সার্জন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছ থেকে গুরুতর আহতর সমর্থনে প্রত্যয়ন করা শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সনদ, চিকিৎসা গ্রহণ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় রিপোর্ট ও নির্ধারিত ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন অনলাইনে আপলোড করতে হবে।
ই-চিকিৎসা অনুদান ব্যবহার নির্দেশিকা অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক ও সমমান শ্রেণির দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মে-জুন প্রান্তে আবেদন করতে পারছেন।
আবেদনের শেষ সময়—
৩০ জুন রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত।
আরও পড়ুনকম খরচ এবং সহজে ভিসার কারণে উচ্চশিক্ষায় বেছে নিতে পারেন এই ৫ দেশ০৮ মে ২০২৫