দৃশ্যটার সাথে বহুদিনের পরিচয় নাজিমের, এটা সেই দৃশ্য যেটা নিজের রক্ত বদল করে নতুন রক্ত ভরে নিয়ে প্রতিনিয়ত ভুলতে চায় সে। এমনও হয়েছে অনেকবার, দিনে কততমবারের মতো মনে পড়েছে দৃশ্যটা গুনত একসময়—যতবার মনে পড়ত সাথে সাথে এটা মাথা থেকে সরানোর জন্য করেছে মেডিটেশন; ওয়েস্টার্ন ইয়োগার ধারা—গুরুবাদী চর্চা থেকে শুরু করে এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সাথে তাহাজ্জুদ পর্যন্ত রপ্ত করেছে। ভুলবার এই ধারাবাহিকতায় দিনে একবারে যখন নেমে এল দৃশ্যটা মনে পড়া, সেটা তাও বছর চারেকের একটা ফেজ—তারপর আর গুনত না সে। আজ কতবার মনে পড়ল এটা মনে রাখতে গিয়েই যেন ভোলা হচ্ছিল না আর। একসময় আর মনে পড়ত না। আর তখন থেকেই নিজের ভিতরের দানবটা কীভাবে পা থেকে মাথা অব্দি গিলে নিয়েছিল তাকে, সে সম্পর্কেও আর কোনো ধেয়ান রইল না তার।
আজ আবার দেড় বছর পর, একুশ বছর আগের দৃশ্যটা তরতাজা হয়ে গেল চোখের সামনে। বাড়ি ভরতি মানুষ, পুলিশ, উঠানে কাপড়ে ঢাকা লাশ আর মহিলাদের সুর করে কান্নার শব্দ, সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল নাজিমের। বাচ্চাটার বয়স চার কি পাঁচ–বাড়ির একমাত্র পুরুষটির বড় স্যান্ডেলগুলো পরে উঠানময় হাঁটাহাঁটি করছে। স্যান্ডেলগুলো চিনতে পারে নাজিম, আলামত হিসেবে এগুলো জব্দ করেছে পুলিশ; কোনো এক ফাঁকে এগুলো হাতে পেয়ে গেছে শিশুটি। বাবা যেহেতু লাশ হয়ে শুয়ে আছে, মা কাঁদছে, পুলিশ নানাজনকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যস্ত—শিশুটির দিকে কারোর নজর নেই। মাঘী শীতের সকালে একটা পাতলা শার্ট গায়ে, ন্যাংটা একটি শিশু আপন মনে হাঁটছে তার মৃত বাবার স্যান্ডেলগুলো পরে।
নাজিম তার কানে কিছুই শুনছিল না আর, চোখে সেই শিশুটি ছাড়া আর কিছু দেখছিলও না, তবে মরাবাড়ির তীব্র গন্ধটা খুব লাগছিল নাকে; এটাই কি কুয়াশার গন্ধ? নাজিম সম্বিৎ ফিরে পেল যখন আকবর ভাই তাকে ঘরের পেছনে নিয়ে সপাটে একটা চড় দিল তার গালে, টিনের বেড়ায় ধরে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রাখল সে। আকবর ভাই দাঁত মুখ খিচিয়ে গালি দিল তাকে, শুয়োরের বাচ্চা! আবেগ মারানোর জায়গা পাস না? নাজিম খেয়াল করে তার চোখ গড়িয়ে পড়া পানিতে নাকমুখ ভেজা; সে কাঁদছিল বাবা হারানো শিশুটির আপন মনে হাঁটা দেখে! আকবর ভাই পকেট থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বের করে নাজিমের হাতে পুরে দিতে দিতে বলে, এক্ষুনি তুই ঢাকা যাবি, পিছনে ফিরে তাকাবি না, মুরগি কোথাকার!
বাচ্চাটির বয়স এখন কত হবে? পঁচিশ বা ছাব্বিশ? তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তন্বীর বড় দুই ভাইয়ের ছোটটার বয়স এমনই। খাবার টেবিলে প্লেট-চামচের শব্দ, আর ওর শ্বশুরবাড়ির সকল সদস্যের গল্প-গুজব নাজিমের কাছে স্তব্ধ হয়ে গেল–তন্বীর বড় ভাইয়ার চার বছরের ছেলে নাজিমের স্যান্ডেল পরে হাঁটছিল যখন। নাজিম একবার বাচ্চাটিকে আর আরেকবার দেখছিল তন্বীর ছোট ভাইয়া আহনাফকে। আহনাফের বয়সী হবে এখন ওই বাচ্চাটা, যার বাবা উঠানে লাশ হয়ে শুয়ে ছিল, যে বাচ্চাটা জানত না তার বাবা গত রাতে কাদের হাতে যেন জবাই হয়ে গেছে। ওইদিন বাসে চেপে যশোর ছেড়ে এসেছিল নাজিম ঠিকই, কিন্তু তার জীবন আটকে পড়েছিল সেদিনে, বা তার আগের রাতে। মাংস খেতে পারেনি কয়েক বছর, আজ আবার সেই দৃশ্যে—খাবার ছেড়ে সে উঠে গেল। শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দাওয়াতে এসেছে সে। টেবিলে আস্ত খাসির রোস্ট। বাথরুমে গিয়ে বমি করে, চোরের মতো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল নাজিম।
নাজিমের প্রথম বিয়েটা টেকেনি। তন্বী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আলিম পাস করেছে বছর তিনেক আগে, করোনার কারণে আর ভর্তি হয়নি কোথাও, তার বাবাও চায়নি আর পড়ালেখা করুক সে। নাজিমের সাথে তার স্ত্রীর বয়সের পার্থক্য প্রায় ২৫ বছরের। বিয়ের ঘটক তন্বীর বাবার বন্ধু, আর নাজিমেরও সিনিয়র বন্ধু। আগে নাস্তিক ছিল নাজিম, বিশ্বাস করত বামপন্থী আদর্শে; হালে আল্লাহওয়ালা হয়েছে। হয়েছে নতুন বন্ধু-সার্কেল আর সেই সূত্রেই বিয়ে। বলা যায় নতুন জীবন কাটাচ্ছে নাজিম এখন। আগের জীবনের আদর্শ সংশ্লিষ্ট গাঁদ, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আর চামড়ার নিচে অহংকার ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই–আর সেই দৃশ্য। বুকে চাপ দিয়ে ধরা কী ভয়ানক সেই দৃশ্য! নাজিম বিছানায় শুয়ে কঁকিয়ে ওঠে। শুয়ে থাকতে পারে না আর। উঠে বসে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে ক্যামেরাটা অন করে; দেখে নিজের চেহারা। তন্বীকে বিয়ে করার পর থেকে তার চেহারার উজ্জলতা বেড়েছে। বিয়ে করলে স্বাস্থ্য ভালো হবে, ঈমান আরও পোক্ত হবে এমনটা বলেছিল তার নতুন সার্কেলের লোকজন, কথাটা মিথ্যা নয়। বিয়ের মাস গড়াতেই তন্বী গর্ভবতীও হয়েছে।
নাজিমের এখন সুখের সময়। আগের স্ত্রীর সাথে যদিও আট বছর সংসার করেছে নাজিম, কিন্তু তাদের বাচ্চাকাচা হয়নি। আসলে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাচ্চা নেয়নি। নাজিম তখন লালনের মাজারে যাতায়াত করে, যদিও ফকিরি নেয়নি তবু জন্ম না দেওয়ার পক্ষে ছিল, আর তার স্ত্রী ফিগার খারাপ হয়ে যাবে তাই বাচ্চাটা আর কিছুদিন পর নিতে চেয়েছিল। সেই পর আর আসলো কই! নাজিমের নানান মেয়েদের সাথে নানান সময় নানান জায়গায় নানান রকম পরিচয়-পরিণতির চাপে পড়ে তার স্ত্রী একদিন বেরিয়ে গেল। মামলাও করল নারী নির্যাতনের। কোথায় নাজিমের খুনের মামলার আসামী হওয়ার কথা সে হলো নারী নির্যাতনকারী–তাও সে টাকা-পয়সা খরচ করেই সমাধান করে ফেলেছিল। নারীসুলভ শরীর ছাড়া আর কিছুই তো ছিল না তার প্রথম স্ত্রীর, মায়া-মমতার জন্য সে কেন অন্য নারীর কাছে যাবে না? এখনকার আলাপ ভিন্ন, তখন তো নাজিম মুক্ত সম্পর্ক চর্চায় বিশ্বাস করত। তার এখনকার স্ত্রী মনে-মগজে-শরীরে সব দিক দিয়েই নারী, সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা মুখে মুখে তর্ক করে না, নাজিমের সব কথাকেই, সব মিথ্যামাখা, বোকা বোকা, আজগুবি ও অ্যাবনরমাল কথাই তন্বী চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে, শুধু বিশ্বাস না, কথাগুলোকে সে লালন পালন করে এবং নাজিমকে নিয়ে তাঁর গর্বেরও কোনো শেষ নেই।
তন্বী ঘরে ঢুকে দেখল নাজিম মোবাইল হাতে বসে আছে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, নাজিম কোনো মানুষ না, পাথরের মূর্তি। চোখগুলোতে কোনো প্রাণ নেই, ত্বক থেকে যেন মিশমিশে অন্ধকার বের হচ্ছে। তন্বীর খুব অস্বস্তি হলো, কিছুদিন ধরেই খুব অদ্ভুত সব অনুভূতি হচ্ছে ওর, বিশেষ করে নাজিমের আশেপাশে থাকলেই মনে হচ্ছে চারপাশ যেন চেপে আসছে তার, খুব চাপ হচ্ছে কিন্তু নাজিমকে সে এগুলো বুঝতে দিচ্ছে না। তন্বী আয়াতুল কুরসি পড়ে নেয় মনে মনে। আর সুরা নাস পড়ে বুকে ফুঁ দেয়। আর তখনই নাজিম মোবাইল রেখে তন্বীর দিকে তাকায়। তন্বী চিন্তিত গলায় বলে, আপনার শরীর খারাপ? খাইলেন না যে? নাজিম বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে। মুখে কিছু বলে না।
কিছু একটা সমস্যা তো আছেই, নাজিম কখনোই খোলাসা করে বলে না, তার আগের জীবনের কথা; শুধু নামাজের পর মাঝেমাঝে আল্লাহ তাকে বড় বাঁচা বাচিয়েছে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেছে, হেদায়েত করেছে—এসব বলে শুকরিয়া আদায় করে। তন্বীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে সে কত খুশি, কত ভাগ্যবান এসবও বলে। প্রথম প্রথম তন্বীর ব্যাপারটা ভালোই লাগত, কিন্তু যত দিন গেল, নাজিমের এই একই রকম শুকরিয়া আদায় আর তন্বীর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ, অ্যাবনরমাল লাগতে শুরু হলো তন্বীর। আরও বড় যে সমস্যাটা করেছে নাজিম তা হলো, বিয়ের পর তন্বীকে বাবার বাড়ি আসতে দেয়নি। নাজিম সারাদিন ব্যাবসার কাজে, আর সারা সন্ধ্যা ধর্মীয় আলোচনায় কাটিয়ে রাত দশটায় বাসায় ফিরে, সাড়ে দশটায় বিছানায় চলে আসে। একদম বিয়ের পরদিন থেকেই এই রুটিন চলছে। তন্বীদের বাসা থেকে বারবার দাওয়াত দেওয়ার পরও নাজিমকে রাজি করানো যায়নি, তন্বীদের বাসায় যেতে, বা তন্বীকে যেতে দিতে।
সারাদিন তন্বীকে বাসায় একাই থাকতে হয়, মাঝে একবার বুয়া এসে রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করে দিয়ে যায়, এ পর্যন্তই; এছাড়া কেনাকাটা বা বাসার নিচের দোকানে যাওয়াও অঘোষিতভাবে নিষেধ ওর। তন্বী প্রেগন্যান্ট হওয়ার প্রায় দুই মাস পর আজ প্রথম শ্বশুরবাড়ি এল তন্বীকে নিয়ে। আর প্রথম দিনই খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে চলে এল। তন্বীর বাবার সামনে নাজিমকে নিয়ে কিছু বলা না গেলেও, ওকে নিয়ে নানান কানাঘুষা চলছে অন্দরমহলে। তন্বীর মা, ভাবী নানা রকম প্রশ্নও করেছে তন্বীকে। নাজিম কেন এতদিনেও শ্বশুরবাড়ি এল না, আর কেনই বা তন্বীকে আসতে দেয় না, এমন অনেক প্রশ্ন ওদের। তন্বী এসব প্রশ্নের কী জবাব দেবে বুঝতে পারে না। বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে ওর সারাক্ষণই ক্লান্ত লাগে, আর কেমন যেন ভয় কাজ করে। সবসময় মনে হয় এই বুঝি কী একটা হয়ে গেল! নাজিমের দিকে ওর তাকাতেও ইচ্ছা করে না, মনে হয় নাজিম কিছু একটা করে বসবে, বা খারাপ কিছু ঘটবে।
নাজিম চুপচাপ শুয়ে আছে। হুট করেই বলে, আচ্ছা শোনো… তন্বী না তাকিয়েই বলে, জি বলেন। নাজিম বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তন্বীও কিছু বলে না। নাজিম নিজেকে বলছে বা কাউকেই বলছে না কিংবা অহেতুক বলছে এমন করে বলে শেষমেশ, তুমি যশোর গেছ কখনো? তন্বী অবাক হয়ে তাকায় নাজিমের দিকে, আর নাজিম তাকিয়ে আছে সিলিং-এর দিকে। তন্বী আস্তে করে বলে, না। নাজিম বলে, আচ্ছা তোমাকে নিয়ে যাব। ওখানে একটা ছেলে আছে। আকবর ভাই ওর বাবাকে জবাই করে মেরে ফেলেছিল। কথা শেষ হওয়ার আগেই তন্বী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। নাজিম চুপ করে যায়, সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকে। তন্বী বলে, আকবর ভাই মানে নাটোরের আকবর ভাই, গত সপ্তাহে যে আমাদের বাসায় আসছিল? নাজিম স্থির, সিলিং-এর দিকেই তাকিয়ে আছে। তন্বীর বুক ধড়ফড় করা শুরু হয়ে গেছে, এটা কী শুনল সে? আর কেনইবা নাজিম এসব বলছে তাকে? তন্বী বুঝতে পারছে, এর সাথে নাজিমের কোনো যোগসূত্র আছে। সে প্রশ্নটা করেই ফেলল, আকবর ভাইয়ের সাথে আপনিও ছিলেন? নাজিম সিলিং থেকে চোখ না সরিয়েই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।
তন্বীর মনে হলো ওর পায়ের নিচে আর মাটি নাই, মাটিগুলো কেমন যেন সরে সরে যাচ্ছে। কী যেন খারাপ ঘটবে ভাবত তন্বী। এখন বুঝতে পারছে, ওর মরণ তাহলে এই খুনির হাতেই হবে; এটাই ঘটার ছিল! তন্বী তার ভিতরে সব ভয় আর ঘৃণা একসাথে করে নিচু গলায় যে শব্দটা উচ্চারণ করল, ভালোমতো খেয়াল করলে শোনা যাবে, খুনি! নাজিম তন্বীর দিকে তাকাল, যেন যমদূত দেখেছে এমন করে ধপ করে উঠে বসে পড়ল বিছানায়, সাথে সাথে তন্বী বিশাল এক লাফ দিয়ে পেছাতে গেল আর তিন মাসের গর্ভবতী তন্বীর শরীরটা প্রথমে সোফার হাতলে বাড়ি খেলো তারপর চিৎ হয়ে সাদা টাইলসের ফ্লোরে পড়ে গেল।
তন্বী নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে কিন্তু তার চোখ খোলা, ওর চোখের সামনেই আস্তে আস্তে নাজিমের চেহারাটা বীভৎস রূপ নিল; পচে গলে গেল নাজিমের নাক-মুখ আর সেখানে লাশ খাওয়ার পোকারা ঘোরাফেরা শুরু করল, পোকারা ঝরে ঝরে পড়তে থাকল। তন্বী চিৎকার করতে চাইল কিন্তু এটা বুঝি কোনো দুঃস্বপ্ন, গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হলো না। আর নাজিম দেখল ঘরের মধ্যে হুট করে রাত নেমে গেল, আর কোথা থেকে যেন মাঘ মাসের হিম বাতাস আর কুয়াশা ঢুকল ভুরভুরিয়ে। নাজিম সেই রাতের মতোই গাঁজা টানা লাল টকটকে চোখ নিয়ে বিছানা থেকে নিনজার মতো ঝাপিয়ে পড়ে তন্বীর মাথাটা চেপে ধরল, তন্বী একটা অস্ফুট শব্দ করল শুধু তারপর চোখগুলো বন্ধ হয়ে গেল।
নাজিম দেখে, আরে ওই তো কমরেড আকবর ভাই ধারালো ছুরি হাতে শ্রেণীশত্রু খতমে এগিয়ে আসছে। আর অন্ধকারে ডুবে থাকা জনা পাঁচেক মানুষ, চারদিক থেকে ফ্লোরের সাথে চেপে ধরল তন্বীর পোয়াতি শরীর। এত শক্ত, এত কষ্ট একটা মানুষকে জবাই করা? নাজিম সারা শরীরের শক্তি দিয়ে তন্বীর মাথাটা চেপে ধরে আছে। নাজিমের বামপাশে কারো একটা ছায়া দেখা গেল, নাজিম ফিরে তাকিয়ে দেখল, মাথাহীন একটা শরীর দাঁড়িয়ে আছে। নাজিম আঁতকে উঠে তন্বীর মাথাটা ছেড়ে দিয়ে দুই হাত দূরে ওর পায়ের কাছে গিয়ে ছিটকে পড়ল আর আধখোলা চোখে দেখল, চার দেয়ালে চারটি এলইডি বাল্বের আলো জ্বলছে, অনেক আলো, সাদা পর্দার ঘর—সাদা টাইলস বেয়ে রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে তন্বীর পায়ের ফাঁক গলে। তন্বী হাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে নাজিমকে। আর নাজিম দেখছে, ওই রক্তের ধারার রেড কার্পেটে কড়ে আঙুলের সমান শিশুরা একে একে হেঁটে আসছে ওভারসাইজড স্যান্ডেল পায়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আকবর ভ ই আর ন জ ম প রথম র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করুন: আকবর খান
ঢাকা-৮ আসনে দ্রুত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান। তিনি বলেন, “ভোটের অধিকার জনগণের পবিত্র আমানত, এটি সচেতনভাবে প্রয়োগ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা জননেতা সাইফুল হক-এর ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।
গণসংযোগের শুরুতে ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাকের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা হয়।
সেখানে আকবর খান বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে অবিলম্বে ভোটের গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে—২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে—ঢাকা-৮ আসনের বহু নাগরিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। যে তরুণের এখন বয়স ২৫ বা ২৬, তারা কখনো ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তা জানে না- এটি গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “গত ১৬-১৭ বছর ধরে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমাদের নেতা সাইফুল হক জনগণের ভোটাধিকারের আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করে আসছেন। এর জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি থেমে থাকেননি। ভোটাধিকার গণমানুষের দীর্ঘ লড়াই ও ত্যাগের ফসল। এই অধিকার ভুল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।”
আকবর খান বলেন, “জননেতা সাইফুল হক গণমানুষের পরীক্ষিত নেতা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের জনগণ যেন তাকে ভোট দিয়ে নিজেদের সুখ-দুঃখ, চাওয়া-পাওয়ার কথা ও দীর্ঘ বঞ্চনার ইতিহাস সংসদে তুলে ধরার সুযোগ করে দেন- এটাই আমাদের আহ্বান।”
গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ কর্মসূচি বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকা থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল, কমলাপুর, ফকিরাপুল, কালভার্ট রোড হয়ে বিজয়নগরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সিকদার হারুন মাহমুদ, মীর রেজাউল আলম, কবি জামাল সিকদার, ফাইজুর রহমান মুনির, বাবর চৌধুরী, মহানগর নেতা যুবরান আলী জুয়েল, সালাউদ্দিন, রিয়েল মাতবর, আরিফুল ইসলাম, মুজিবুল হক চুন্নু, গোলাম রাজিব, মাহমুদুল হাসান খান, ফয়েজ ইবনে জাফর, নান্টু দাস, শিবু মহন্ত ও হুমায়ুন কবির প্রমুখ।
ঢাকা/এএএম/এস