Samakal:
2025-07-13@05:25:32 GMT

মানবতার ‘জলধারা’ মিরসরাইয়ে

Published: 24th, May 2025 GMT

মানবতার ‘জলধারা’ মিরসরাইয়ে

এক কলস পানি ভর্তি করতে প্রায় ঘণ্টাখানেক নলকূপ চাপতে হতো মনোয়ারাদের। এখন মুহূর্তে পানিতে ভর্তি হচ্ছে কলস। মিরসরাইয়ে করেরহাট আজিজনগরে সৌরবিদ্যুৎচালিত একটি গভীর নলকূপ বসানোর সুফল পাচ্ছে ৪০টি পরিবার। আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতা ও অর্থায়নে এই নলকূপ বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, আজিজনগর গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির অভাবে ভুগছিলেন। অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত না। এলাকার ৪০টি পরিবারের অন্তত ২০০ মানুষ মাটি খনন করে ৩০ ফুট গভীরে স্থাপন করা একটি নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নলকূপটির পানিও শুকিয়ে যেত, বর্ষাকালে নলকূপটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যেত। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিত। আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এলাকার সুপেয় পানির সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়, আজিজনগর গ্রামে সৌরবিদ্যুৎচালিত একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে। 
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, গভীর নলকূপের পাশে লোহার অ্যাঙ্গল দিয়ে বসানো হয়েছে ৫০০ লিটারের একটি পানির ট্যাঙ্ক। পাশে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের সোলার। ট্যাঙ্কের পানি শেষ হলে দ্রুত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার পানি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এ সময় কথা হয় পানি নিতে আসা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তীব্র পানির সংকটে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সারাটা বছর পানির জন্য কষ্ট করতে হতো। 

টানা কয়েক দিন গোসল করা হয়নি এমনও সময় গেছে। আজ সেই সমস্যা নেই, আমরা দারুণ খুশি।’ সাবিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় বসানা যায়নি। পরে আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আমাদের জন্য সৌরবিদ্যুৎ চালিত একটি গভীর নলকূপের বসিয়ে দিয়েছে। এ নলকূপ থেকে আমরা নিয়মিত পানি পাচ্ছি।’
আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সুপার স্টার গ্রুপের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ওই ট্রাস্টের ‘জলধারা’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। । মূলত ‘জলধারা’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে কাজ করে ট্রাস্ট।
সুপার স্টার গ্রুপের কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, ‘‘আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দেশের যে সকল স্থানে পানির তীব্র সংকট রয়েছে ‘জলধারা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই সকল স্থানে গভীর নলকূপ বসিয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজিজনগর গ্রামে একটি সৌরবিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি সংকট নিরসন করা হয়েছে।’
আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের জলধারা প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘গণমাধ্যমে আজিজনগর গ্রামের সুপেয় পানি সংকটের বিষয়টি নজরে এলে সুপার স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের উদ্যোগে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে গভীর নলকূপটি স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গভীর নলকূপটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা জলধারা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় ১১৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। এটি শুধু পানি সরবরাহ নয়, এটি একটি মানবিক দায়বদ্ধতা।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স রব দ য ৎ প রকল প র

এছাড়াও পড়ুন:

৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারে চট্টগ্রামে পাউবো’র অভিযান 

চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় আজ উচ্ছেদ অভিযান চলবে। 

অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিন টানা চলবে উচ্ছেদ অভিযান।

২ জুন সমকালের শেষের পাতায় ‘৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা। 

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

সরকারি জায়গা যাদের দখলে
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন। 

এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ