এক কলস পানি ভর্তি করতে প্রায় ঘণ্টাখানেক নলকূপ চাপতে হতো মনোয়ারাদের। এখন মুহূর্তে পানিতে ভর্তি হচ্ছে কলস। মিরসরাইয়ে করেরহাট আজিজনগরে সৌরবিদ্যুৎচালিত একটি গভীর নলকূপ বসানোর সুফল পাচ্ছে ৪০টি পরিবার। আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতা ও অর্থায়নে এই নলকূপ বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, আজিজনগর গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির অভাবে ভুগছিলেন। অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যেত না। এলাকার ৪০টি পরিবারের অন্তত ২০০ মানুষ মাটি খনন করে ৩০ ফুট গভীরে স্থাপন করা একটি নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতেন। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নলকূপটির পানিও শুকিয়ে যেত, বর্ষাকালে নলকূপটি বৃষ্টির পানিতে ডুবে যেত। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিত। আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এলাকার সুপেয় পানির সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেয়, আজিজনগর গ্রামে সৌরবিদ্যুৎচালিত একটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে।
গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, গভীর নলকূপের পাশে লোহার অ্যাঙ্গল দিয়ে বসানো হয়েছে ৫০০ লিটারের একটি পানির ট্যাঙ্ক। পাশে স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের সোলার। ট্যাঙ্কের পানি শেষ হলে দ্রুত স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার পানি ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এ সময় কথা হয় পানি নিতে আসা মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তীব্র পানির সংকটে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। সারাটা বছর পানির জন্য কষ্ট করতে হতো।
টানা কয়েক দিন গোসল করা হয়নি এমনও সময় গেছে। আজ সেই সমস্যা নেই, আমরা দারুণ খুশি।’ সাবিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি গভীর নলকূপ বসানোর চেষ্টা করা হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় বসানা যায়নি। পরে আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আমাদের জন্য সৌরবিদ্যুৎ চালিত একটি গভীর নলকূপের বসিয়ে দিয়েছে। এ নলকূপ থেকে আমরা নিয়মিত পানি পাচ্ছি।’
আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট সুপার স্টার গ্রুপের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। ওই ট্রাস্টের ‘জলধারা’ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। । মূলত ‘জলধারা’ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুপেয় পানির সংকট নিরসনে কাজ করে ট্রাস্ট।
সুপার স্টার গ্রুপের কর্মকর্তা রবিউল হাসান বলেন, ‘‘আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দেশের যে সকল স্থানে পানির তীব্র সংকট রয়েছে ‘জলধারা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ওই সকল স্থানে গভীর নলকূপ বসিয়ে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় আজিজনগর গ্রামে একটি সৌরবিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি সংকট নিরসন করা হয়েছে।’
আব্দুর রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের জলধারা প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘গণমাধ্যমে আজিজনগর গ্রামের সুপেয় পানি সংকটের বিষয়টি নজরে এলে সুপার স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের উদ্যোগে প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যায়ে গভীর নলকূপটি স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গভীর নলকূপটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আমরা জলধারা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলায় ১১৪টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছি। এটি শুধু পানি সরবরাহ নয়, এটি একটি মানবিক দায়বদ্ধতা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স রব দ য ৎ প রকল প র
এছাড়াও পড়ুন:
সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পেলো পশুর হাট, বাড়ল রাজস্ব আয়
সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পেলো মৌলভীবাজার রাজনগরের ঐতিহ্যবাহী টেংরাবাজার পশুর হাট। ফিরে এলো বড় অঙ্কের রাজস্ব। হাটটি খাস কালেকশনের দুরভিসন্ধি থেকে মুক্ত হলো।
৮ম বারের টেন্ডারে হাটের ইজারা মূল্য দাঁড়ায় ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ইজারা নিয়েছেন মনসুর তরফদার নামে জনৈক ব্যক্তি।
এর আগে অর্ধেক মূল্যে সিন্ডিকেটের কবলে ইজারা বন্দোবস্ত হওয়ায় সম্ভাবনা ছিল। এতে বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাতো এই টেংরাবাজার পশুর হাট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন মহলের নিকট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফের টেন্ডার আহবান করে ওই পশুর হাটটি ইজারায় বন্দোবস্ত দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
জানা যায়, সপ্তম বারের মত টেন্ডার আহবান করার পরও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরাবাজারের পশুরহাট সরকারি মূল্যের অর্ধেক থেকে কম মূল্যে ইজারা বন্দোবস্ত নিতে চেষ্টা করে একটি চক্র। এতে ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে এ পশুর হাটটি ইজারা দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে পহেলা বৈশাখ থেকে টেংরাবাজারের পশুরহাটের খাসকালেকশন পরিচালনায় একটি কমিটি গঠন করে দেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা প্রশাসন এ কমিটিতে স্থানীয় ভূমিসহকারী অফিসারসহ ৩ জনকে খাসকালেকশনে জন্য নিয়োগ দেয়। তারা বর্তমান সরকারি ও পূর্ববর্তী ইজারা মূল্য থেকে অর্ধেক টাকা আদায় করতে না পারায় বড় অঙ্কের রাজস্ব হারানোর শঙ্কা দেখা দেয়। ফলে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে খাস কালেকশনে সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে লিখিত দরখাস্ত দেন।
ফের টেন্ডার আহবান করে উপজেলা প্রশাসন। ৪টি সিডিউল ক্রয় করে তিনটি জমা দেন তিন আগ্রহী ব্যক্তি। ২০ মে টেন্ডারবাক্স খোলা হয়। এতে ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ইজারা মূল্য দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হোন মনসুর তরফদার। তার সাথে ২৫% আয়কর ও ভ্যাট এ আরও ২৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ টাকা যোগ হবে। এতে সব মিলিয়ে ইজারা মূল্যের পরিমাণ এক কোটি ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ টাকা। এতে সপ্তাহে ইজারা মূল্য হবে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার।
অন্যদিকে খাস কালেকশন থেকে প্রতি সপ্তাহে আদায় দেখানো হয়েছে ৮৭ হাজার থেকে এক ২০ হাজার টাকা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গেছে, বছরের শুরুতে যে কয়দিন খাস কালেকশন করা হয়েছে তা বাদ দিয়ে ইজারার টাকা নেওয়া হবে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, ‘‘একজন ইজারাদার যেভাবে কালেকশন করতে পারেন সে ভাবে অনভিজ্ঞতার কারণে খাসকালেকশন আদায় করা সম্ভব হয়না। ফলে সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে ফের টেন্ডার আহবান করার পর সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা মূল্য জমা দিয়ে টেংরাবাজারের পশুরহাট বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’
ঢাকা/আজিজ/টিপু