বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বীজ ও রেশম পোকার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কার্যালয়ের ৪৮ বিঘার বিশাল জমিতে মাত্র তিন বিঘায় এ বছরে তুঁতের চাষ হচ্ছে। বাকি অংশ লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষ করছেন বহিরাগতরা। 

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি। কাগজে কলমে সেখানে দুজন কর্মকর্তা থাকলেও ভেতরের জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে আসছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি ছোট ছোট কোয়াটার রয়েছে, সেখানে কয়েকটি পরিবার বাস করেন। সহকারী পরিচালকের রুমের সামনে পশ্চিম পাশে তালাবদ্ধ পোকা উৎপাদনের ভবনটি। বহু বছর ধরে পোকা উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

কেন্দ্রের সামনের বিশাল অংশ জুড়ে ফসলের মাঠের মতো আইল দিয়ে ভাগ করা। ছোট বড় বিভিন্ন আয়তনে ভাগ করা জমিতে বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। লাল শাক, পালং শাক, পাট শাক, ঢেঁড়স, বেগুন, কলমি শাক, ঝিঙে চিচিঙ্গাসহ নানা জাতের সবজি। এসব ক্ষেতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন কৃষি শ্রমিক। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুঁত গাছ রোপন না করা এবং রেশম পোকা ও গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বিধায় এসব জমি সবজি চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেশম উৎপাদন কেন্দ্রের ভেতরের কর্মচারি ও বহিরাগতদের কাছে বর্গা দিয়েছেন কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো.

আব্দুল মালেক। কারো কাছে তিন ভাগের একভাগ সবজি এবং কারো কাছ থেকে এককালীন টাকা নিয়ে বর্গা দিয়েছেন তিনি। 

অভিযোগ রয়েছে, লোকবল কম ও জবাবদিহিতা না থাকায় এসব করছেন সহকারী পরিচালক। বলা হচ্ছে, গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের আশপাশে দুটি কারখানা থাকায় পোকা উৎপাদন করা যায় না। কারখানার ধোঁয়ায় রেশম পোকা মারা যায় এবং গুটিও তৈরি করতে পারে না।

 একসময় ভারতীয় উপমহাদেশসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রেশম বস্ত্রের বেশ কদর ছিল। রেশমের পুরনো ঐতিহ্য, গুণগত মান ও জনপ্রিয়তার কারণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রেশম কাপড়ের চাহিদা এখনো রয়েছে। হতদরিদ্র মানুষদের রেশম চাষের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে বাড়বে কর্মসংস্থান। 

তবে গাজীপুরের এই জোনাল কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিঘার পর বিঘা জমি পড়ে রয়েছে, অথচ সেখানে উৎপাদন নেই। বর্গা দিয়ে সবজি চাষ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

দায়িত্বশীলরা জানান, তুঁত গাছের পাতা রেশম গুটি পোকার প্রিয় খাবার। তবে কারখানার শব্দ, ধোঁয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখানে পোকা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জায়গাগুলো সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।

 কোনাবাড়ি এলাকার স্থানীয় আলাল বলেন, “ওই কার্যালয় থেকে সবজি এনে লোকজন বিক্রি করে। সবজি ছাড়া কিছু উৎপাদন হয় কিনা আমাদের জানা নেই। শুনি এখানে রেশম চাষ হয়। তবে কোনদিন সেসব কার্যক্রম হতে দেখিনি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্গাচাষী বলেন, “১০ হাজার টাকা দিয়ে এখানে অল্প একটু জমি নিয়েছি। সেখানে আমি সবজি চাষ করি। এছাড়া কর্মকর্তাদেরও সবজি দিতে হয়। আমার মতো অনেকেই এখানে জমি নিয়ে চাষ করে।” 

অপর এক চাষী বলেন, “আমরা ভেতরেই থাকি। অনেক যায়গা ফাঁকা রয়েছে, সেখানে চাষবাস করি। যখন তাদের কাজ থাকে, করে দেই। বাকি সময় বাইরে কাজ করি। কয়েক বছর ধরে ভেতরেই পরিবার নিয়ে থাকি।” 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘আমাদের লোকবল সংকট। আমরা মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছি। তাও দেশের বিভিন্ন যায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের যখন শ্রমিক দরকার হয়, তখন পাওয়া যায় না। এজন্য কয়েকটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছি।” 

সবজি চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যায়গা পতিত না রাখতে। এরপর থেকেই সবজি চাষ করতে দিচ্ছি। চাষ করে দুই ভাগ চাষি নেয়, একভাগ আমাদের দেয়। তবে অনেকেই ঠিকমতো সবজি দেয় না। এজন্য এককালীন টাকা নিয়ে বর্গা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ওই টাকা অফিসের কাজেই ব্যবহার করি।” 

রেশম চাষের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “এখানে অনেক আগে গুটি উৎপাদন হতো। তবে আশপাশে থাকা বিভিন্ন কারখানার ধোঁয়ার কারণে পোকা মরে যায়। এজন্য এখন রেশম গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন আমাদের যেটুকু দরকার হয়, সেটুকু যায়গায় তুঁত গাছ লাগিয়েছি। ৪৮ বিঘার মধ্যে এবার তিন বিঘায় তুঁত চাষ করা হয়েছে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত আম দ র চ ষ কর পর ব র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হবে কোরবানির বর্জ্য: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এবার কোরবানি শেষ হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

রোববার আসন্ন ঈদ উল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট ও কাঁচা চামড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা এবং আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রতিবারই অনেক চামড়া নষ্ট হয়। আমরা চাই, বিক্রেতারা চামড়ার নায্য মূল্য পাক। চামড়ার নায্যমূল্য গরিবের হক। চামড়াগুলো বিভিন্ন গরিব মানুষকে, এতিমখানায়, মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এটার নায্যমূল্য পান না। এবার তারা যাতে নায্যমূল্য পায়, সেটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর আমরা চেষ্টা করছিলাম হাসিলটা কমানো যায় কিনা। তাদের সঙ্গে আমরা বসে আলোচনা করে বলেছি, ৫ শতাংশ হাসিল অনেক বেশি। এটা কমানো যায় কিনা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও হাসিল কমাতে পারিনি। আগামীবার হয়তো আমরা থাকবো না, কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি আগামীবার থেকে হাসিল যাতে ৩ শতাংশের বেশি না হয়। এবার দুই দিকে ২০টি হাটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব হাটে যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা পশুর হাটে চিকিৎসক এর ব্যবস্থা করেছি। কোনো অসুস্থ গরু যেন বিক্রি হতে না পারে। এছাড়া অনেকেই গরুর হাটে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে; তাদের জন্যও চিকিৎসক থাকবে। প্রতিটি হাটের দায়িত্বশীলরা এটার বন্দোবস্ত করবে। প্রতিটি হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যেক আনসার সদস্য থাকবে।’

উপদেষ্টা বলেন, প্রায় তিনদিন কোরবানি চলবে। প্রথম দিনের প্রায় ৯০ শতাংশ গরু কোরবানি করা হয়ে যায়। এরপর ২ দিন কিছু কিছু করে কোরবানি হয়। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যেন অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রশাসকরা আমাদের কথা দিয়েছেন ১২ ঘণ্টার মধ্যে সকল বর্জ্য অপসারণ করা হবে। এজন্য সকল প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। এজন্য আমি প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ