গুটি ও পোকা উৎপাদন বন্ধ, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রে সবজি চাষ!
Published: 25th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের জমিতে বছরের পর বছর ধরে বীজ ও রেশম পোকার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এ কার্যালয়ের ৪৮ বিঘার বিশাল জমিতে মাত্র তিন বিঘায় এ বছরে তুঁতের চাষ হচ্ছে। বাকি অংশ লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি চাষ করছেন বহিরাগতরা।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকায় ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়টি। কাগজে কলমে সেখানে দুজন কর্মকর্তা থাকলেও ভেতরের জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে বছরের পর বছর ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের মধ্যে কয়েকটি ছোট ছোট কোয়াটার রয়েছে, সেখানে কয়েকটি পরিবার বাস করেন। সহকারী পরিচালকের রুমের সামনে পশ্চিম পাশে তালাবদ্ধ পোকা উৎপাদনের ভবনটি। বহু বছর ধরে পোকা উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
কেন্দ্রের সামনের বিশাল অংশ জুড়ে ফসলের মাঠের মতো আইল দিয়ে ভাগ করা। ছোট বড় বিভিন্ন আয়তনে ভাগ করা জমিতে বিভিন্ন সবজি লাগানো হয়েছে। লাল শাক, পালং শাক, পাট শাক, ঢেঁড়স, বেগুন, কলমি শাক, ঝিঙে চিচিঙ্গাসহ নানা জাতের সবজি। এসব ক্ষেতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন কৃষি শ্রমিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুঁত গাছ রোপন না করা এবং রেশম পোকা ও গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বিধায় এসব জমি সবজি চাষাবাদের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। রেশম উৎপাদন কেন্দ্রের ভেতরের কর্মচারি ও বহিরাগতদের কাছে বর্গা দিয়েছেন কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক মো.
অভিযোগ রয়েছে, লোকবল কম ও জবাবদিহিতা না থাকায় এসব করছেন সহকারী পরিচালক। বলা হচ্ছে, গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের আশপাশে দুটি কারখানা থাকায় পোকা উৎপাদন করা যায় না। কারখানার ধোঁয়ায় রেশম পোকা মারা যায় এবং গুটিও তৈরি করতে পারে না।
একসময় ভারতীয় উপমহাদেশসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রেশম বস্ত্রের বেশ কদর ছিল। রেশমের পুরনো ঐতিহ্য, গুণগত মান ও জনপ্রিয়তার কারণে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রেশম কাপড়ের চাহিদা এখনো রয়েছে। হতদরিদ্র মানুষদের রেশম চাষের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে বাড়বে কর্মসংস্থান।
তবে গাজীপুরের এই জোনাল কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। বিঘার পর বিঘা জমি পড়ে রয়েছে, অথচ সেখানে উৎপাদন নেই। বর্গা দিয়ে সবজি চাষ হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
দায়িত্বশীলরা জানান, তুঁত গাছের পাতা রেশম গুটি পোকার প্রিয় খাবার। তবে কারখানার শব্দ, ধোঁয়াসহ বিভিন্ন কারণে এখানে পোকা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জায়গাগুলো সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।
কোনাবাড়ি এলাকার স্থানীয় আলাল বলেন, “ওই কার্যালয় থেকে সবজি এনে লোকজন বিক্রি করে। সবজি ছাড়া কিছু উৎপাদন হয় কিনা আমাদের জানা নেই। শুনি এখানে রেশম চাষ হয়। তবে কোনদিন সেসব কার্যক্রম হতে দেখিনি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্গাচাষী বলেন, “১০ হাজার টাকা দিয়ে এখানে অল্প একটু জমি নিয়েছি। সেখানে আমি সবজি চাষ করি। এছাড়া কর্মকর্তাদেরও সবজি দিতে হয়। আমার মতো অনেকেই এখানে জমি নিয়ে চাষ করে।”
অপর এক চাষী বলেন, “আমরা ভেতরেই থাকি। অনেক যায়গা ফাঁকা রয়েছে, সেখানে চাষবাস করি। যখন তাদের কাজ থাকে, করে দেই। বাকি সময় বাইরে কাজ করি। কয়েক বছর ধরে ভেতরেই পরিবার নিয়ে থাকি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয় ও কোনাবাড়ি রেশম বীজাগারের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘‘আমাদের লোকবল সংকট। আমরা মাত্র দুজন কর্মকর্তা রয়েছি। তাও দেশের বিভিন্ন যায়গায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। আমাদের যখন শ্রমিক দরকার হয়, তখন পাওয়া যায় না। এজন্য কয়েকটি পরিবারকে থাকতে দিয়েছি।”
সবজি চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যায়গা পতিত না রাখতে। এরপর থেকেই সবজি চাষ করতে দিচ্ছি। চাষ করে দুই ভাগ চাষি নেয়, একভাগ আমাদের দেয়। তবে অনেকেই ঠিকমতো সবজি দেয় না। এজন্য এককালীন টাকা নিয়ে বর্গা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ওই টাকা অফিসের কাজেই ব্যবহার করি।”
রেশম চাষের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “এখানে অনেক আগে গুটি উৎপাদন হতো। তবে আশপাশে থাকা বিভিন্ন কারখানার ধোঁয়ার কারণে পোকা মরে যায়। এজন্য এখন রেশম গুটি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এখন আমাদের যেটুকু দরকার হয়, সেটুকু যায়গায় তুঁত গাছ লাগিয়েছি। ৪৮ বিঘার মধ্যে এবার তিন বিঘায় তুঁত চাষ করা হয়েছে।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত আম দ র চ ষ কর পর ব র সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি প্রতিষ্ঠান— ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল (টিডিএস) পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, শুধু মিটফোর্ড নয়, সারা দেশে সংঘটিত এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে, মিটফোর্ডের ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক৷ একটা সভ্য দেশে এমন ঘটনা কখনোই আশা করা যায় না৷ এ ঘটনায় দায়ী পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার পরপরই সেখান থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে র্যাব অস্ত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রাতেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবির টিমও কাজ করছে৷
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা জাতি হিসেবে খুব অসহিষ্ণু হয়ে গেছি৷ এই অসহিষ্ণুতা আমাদের সবাই মিলে কমিয়ে আনতে হবে৷ এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের নীতিনির্ধারক, অভিভাবক, শিক্ষক, চিকিৎসক সবাইকে এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মোদ্দাকথা, এ বিষয়ে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়৷ কোনো ঘটনা ঘটলে, সেটা যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানানো হয়৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন কঠোর হচ্ছে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হলে পাঁচজনকে কিভাবে গ্রেপ্তার করা হলো?
তিনি বলেন, গতকাল কাঠমান্ডুগামী বিমানের ফ্লাইট ফেরত নিয়ে আসার ঘটনায় যে মহিলা টেলিফোন করেছিল, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাকে যে পরামর্শ দিয়েছে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ চাঁদপুরের ঘটনাতেও দোষীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অবস্থা মোটেও নির্লিপ্ততা নয়৷ অনেক সময় দু-এক জায়গায় কোনো কারণে একটু হয়ত দেরি হতে পারে৷ তবে, এ সমস্ত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাথে সাথে অ্যাকশনে যাচ্ছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম, স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. গোলাম রসুল, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা এর আগে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন আয়োজিত বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও তা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক