মুন্সিগঞ্জে জঙ্গল থেকে শিশুর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার, ধর্ষণের অভিযোগে তরুণ আটক
Published: 25th, May 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় সাত বছরের একটি শিশুর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ রোববার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার ধীপুর ইউনিয়নে একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ছেলেশিশুটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গত শুক্রবার বিকেলে শিশুটি নিখোঁজ হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, প্রতিবেশী এক তরুণ (২০) শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছেন। পরে লাশ গুম করতে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে খেলাধুলা করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় শিশুটি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও সে বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন স্বজনেরা। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, প্রতিবেশী তরুণের সাইকেলে ঘুরতে দেখা গেছে শিশুটিকে। শিশুটির বাবা লোকজন নিয়ে ওই তরুণের বাড়িতে যান। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে গতকাল রাত দেড়টার দিকে ওই তরুণ জানান, শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেছেন তিনি।
খবর পেয়ে পুলিশ আজ সকালে অভিযুক্ত তরুণকে আটক করে। তাঁর দেখানো জায়গা থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শিশুর চাচা অভিযোগ করেন, প্রতিবেশী তরুণের চরিত্র তেমন ভালো ছিল না। তিনি ছোট ছোট ছেলেদের দেখলেই ধর্ষণের চেষ্টা করতেন। এর আগেও তাঁদের গ্রামে একটি ছেলেকে তিনি ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। তখন তিনি ওই তরুণকে শাসন করেছিলেন।
টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিদুল ইসলাম আজ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে অভিযুক্ত তরুণকে আটক করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধীপুর ইউনিয়নের পলাশপুর এলাকার একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাফর পানাহি প্রমাণ করলেন রাষ্ট্র শিল্পীর শরীরকে আটকাতে পারে চিন্তাকে নয়
সিনেমা তৈরির অপরাধে রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী তিনি। নিজের দেশেই গৃহবন্দী, নিষিদ্ধ, নিঃসঙ্গ। তবুও জাফর পানাহি থেমে যাননি। থামাননি ক্যামেরা। তার কাছে সিনেমা ছিল অস্ত্র, ছিল ভাষা, ছিল প্রতিরোধ। সেই সাহসী চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম জাফর পানাহি । যিনি এবারের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘It Was Just an Accident’ ছবির জন্য জিতে নিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বর্ণপাম (Palme d’Or)।
২০১০ সালে “শাসকের বিরুদ্ধে প্রচারণা”র অভিযোগে ইরানি সরকার তাকে ২০ বছরের জন্য সিনেমা নির্মাণে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাকে দেওয়া হয় গৃহবন্দীত্বের শাস্তি। বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু পানাহি হার মানেননি। বরং নিজের ঘরকে বানিয়ে ফেলেন স্টুডিও, নিজের জীবনকে বানিয়ে ফেলেন কাহিনি।
২০১১ সালে তিনি গোপনে নির্মাণ করেন "This Is Not a Film", একটি অর্ধ-ডকুমেন্টারি যেখানে নিজের অবস্থান ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে জানান দেন বিশ্বকে। ছবিটি একটি পেনড্রাইভে করে একটি কেকের ভেতরে লুকিয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানো হয়। সেখানেই এটি প্রদর্শিত হয় — একটি নীরব বিদ্রোহের জয়গান হয়ে।
সেই সাহসিকতা এবং অনমনীয়তা পানাহিকে করে তুলেছে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। তার চলচ্চিত্রগুলোতে বারবার উঠে এসেছে ইরানি সমাজের কঠোর বাস্তবতা, নাগরিক স্বাধীনতা, নারীর অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ।
২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "It Was Just an Accident" — তার সর্বশেষ ছবিতে তিনি তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এক ভিন্নধর্মী চিত্র। পাঁচ বন্দি, যারা নিজেদের নির্যাতকের মুখ মনে রাখেন না — এ গল্পে ফুটে উঠেছে বাস্তবতার রূপক। ছবিটি যেমন তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক, তেমনি মানবিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং সাহসী।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি বলেন, “ভিন্নমতের ইরানিদের প্রতি আমার অনুরোধ, চলুন আমাদের মতপার্থক্য ভুলে যাই, কারণ স্বাধীন ইরানই সবার আগে।” তার এ আহ্বান ছিল শুধু চলচ্চিত্রকারের না, ছিল একজন সংগ্রামী নাগরিকের কণ্ঠস্বর।
জাফর পানাহি প্রমাণ করে দিয়েছেন—একটি রাষ্ট্র হয়তো শরীরকে আটকে রাখতে পারে, কিন্তু একজন শিল্পীর চিন্তাকে নয়। সিনেমা যেমন তার প্রতিবাদ, তেমনি তার মুক্তির পথ।