গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে দরকার; বৈষম্যহীন শিক্ষা, কাজ ও সংস্কার' এই স্লোগানকে ধারণ করে শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি ও কার্যকর সংস্কারের দাবিতে শিক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৫ মে) সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে জেলা ডাকবাংলোর মিলনায়তনে  এ শিক্ষা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিক মুনার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সৃজয় সাহার সঞ্চালনায় শিক্ষক, গবেষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এ সংলাপের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান বৈষম্য হ্রাস, সকলের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষকের জীবনমান ও মানোন্নয়ন ভাবনা হাজিরকরণ।

সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড.

ফজলুল হক (রুম্মন রেজা), সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যাপক-লেখক শফিক ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ, জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড। 

আবুল হাসান রুবেল বলেন, 'শিক্ষক হিসেবে শেখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব প্রয়োজন বাংলাদেশে, শিক্ষকদের প্রয়োজন গবেষণামুখী হওয়া। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমলাতান্ত্রিক হলে শিক্ষার কোন অগ্রগতি হবে না। শিক্ষা বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষা গবেষণা কে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিতে হবে। দুর্নীতিমুখী বরাদ্দ বাদ দিয়ে শিক্ষামুখী বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রশ্নে সরকারকে পরিষ্কার অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।'

ড. ফজলুল হক (রুমন রেজা) বলেন, 'শিক্ষা ব্যবস্থা সনদ নির্ভর হয়ে আছে। সুস্থ কোন রোড ম্যাপ নেই। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে উৎসাহিত করা হয় না ফলে শিক্ষার কোন গুণগত পরিবর্তন হয় না। শিক্ষার্থীদের কেবল কাগজ দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না।'

শফিক ইসলাম বলেন, 'আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেখা যায় আমলাদের প্রশাসনিক ভবন এবং বাসভবন গুলোর জায়গা থেকে ছোট। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া থাকে তার মধ্যে দেখা যায় বৈষম্য। এই বৈষম্য কমিয়ে এনে বাজেটের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন শিক্ষা মূলত একটি রাজনৈতিক প্রকল্প আমরা কেমন মানুষ চাই তা নির্ভর করে তার শিক্ষার উপর। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে আমরা দক্ষ ও সচেতন মানুষ চাই নাকি বিভজিত মানুষ চাই।'

সংলাপে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ বলেন, 'তিনি ছাত্র ফেডারেশনের শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার সংকট ও সম্ভাবনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যুক্ত করলে প্রস্তাবনাটি জাতীয় মেনুফেস্টোতে রূপ দিতে পারে।

তিনি আদিবাসী শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। এছাড়া তিনি প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক্সট্রা কারিকুলাম ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানান, যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বিকাশে সহায়ক।'

তরিকুল সুজন বলেন, 'অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সামাজিক শিক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা অপরাধ প্রবণ হয়ে উঠে যা দীর্ঘ মেয়াদী সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করে দেয়। শক্তিশালী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে লাগবে সচেতন রাজনৈতিক জনশক্তি।'

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি ছাত্রনেতা মশিউর রহমান রিচার্ড বলেন, 'অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা জণগণ এক ভয়াবহ ফ্যাসিবাদি পরিস্থিতি অতিক্রম  করেছি। কিন্তু পুরোপুরি মুক্তি এখনো পাইনি।

এখানে যে মূলধারা শিক্ষা ব্যাবস্থা বিদ্যমান তার মধ্য দিয়ে সমাজে বিভক্তির তৈরী হচ্ছে, বিদ্যমান এই ব্যাবস্থার মধ্য দিয়ে ৩ ধারার মানুষ তৈরি হচ্ছে সমাজে। সমাজে এরকম অবস্থায় উপনীত হয়েছি আমরা যে, যার টাকা আছে সে শিক্ষা পাচ্ছে যার টাকা নাই তার কোন শিক্ষা নাই। 

সমাজ থেকে এই নীতি সমূল থেকে নিধন করতে হবে। যদিও এই সমস্যা নিধন করা সময় সাপেক্ষে, কিন্তু যদি এর পিছনে রাজনৈতিক আদর্শ থাকে তাহলে তা আমরা সহজেই এই সমস্যা দূর করতে পারবো।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন মনে করে জনগণের মুক্তির যাত্রায় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের বিকল্প নেই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের লক্ষ্যে বৈষম্যহীন শিক্ষা, কাজ ও সংস্কারকে সামনে রেখে আশু বাস্তবায়নযোগ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি করেছি।'

সভাপতির বক্তব্যে ছাত্রনেতা ফারহানা মানিক মুনা বলেন, 'শিক্ষা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি। কোনো দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং নাগরিকদের মুক্তচিন্তার ভিত্তি গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালী ও বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে এই উপলব্ধির যথাযথ প্রতিফলন এখনো দেখা যায় না।

আজও শিক্ষাকে ঘিরে নেই সুপরিকল্পিত, দায়িত্বশীল ও সময়োপযোগী রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনা। গণতন্ত্রের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর জরুরি।'

আমরা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বিশ্বাস করি— জনতার অভ্যুত্থান থেকে যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব যদি আমরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে পারি। 

এই লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা কাঠামোর সংস্কারের জন্য কিছু সুসংগঠিত প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। এর মধ্যে রয়েছে,কিছু আশু পদক্ষেপ, যা রাষ্ট্র চাইলে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে পারে; এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের রূপরেখা, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ও গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।'

শিক্ষা সংস্কারের দাবিতে আগামী ২৭ মে জেলা শিক্ষা অফিসার ও ২৯ মে কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। নারায়ণগঞ্জের আপামর শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হবার আহবান জানাই।

সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক কর্মী জহিরুল হক মিন্টু, জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান ও সৌরভ সেন, অর্থ সম্পাদক শাহীন মৃধা, রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মুক্ত শেখ, তোলারাম কলেজ আহ্বায়ক রাইসা ইসলাম, ভোলাইল আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক মাহাদি হাসান ও সম্পাদক স্বপ্নীল শোভন, নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার যুগ্ম সম্পাদক শেখ সাদীসহ জেলা ও শাখা কমিটির নেতৃবৃন্দ। 
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র জন ত ক ব যবস থ কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের ৪ জন

জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের চারজন গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। তারা হলেন- সোনারগাঁয়ের তুহিন মাহমুদ সিনিয়র যুগ্ম  আহ্বায়ক, রূপগঞ্জের ইয়াছিন আরাফাত সিনিয়র সংগঠক, ছাত্রনেতা নিরব রায়হান ও রূপগঞ্জের সাইফুল ইসলাম রোমান সংগঠক।

জুলাই বিপ্লবে নারায়ণগঞ্জে নেতৃত্ব দানকারী কবি নিরব রায়হানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। বিশেষ করে আমার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ কারণ এটিই আমার প্রথম কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া। বলতে পারি, আমার রাজনীতির সূচনা হলো এখান থেকেই।

 জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে৷ আমরা একটি মুক্ত স্বাধীন বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি৷ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের মতো যুবকরাই৷ 

আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত চারজনের মধ্যে আগে থেকেই বোঝাপড়া ভালো থাকায় আশা রাখছি আমরা নারায়ণগঞ্জের তরুণ যুবাদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাবো৷ আমরা পূর্বে যেমন যে যার জায়গা থেকে নিষ্ঠার সাথে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি, আগামীতেও আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততার সাথে পালন করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

উল্লেখ্য, গত ১৬ মে শুক্রবার গুলিস্তানের শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ হয়। জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ পায় সংগঠনটির। 

অ্যাডভোকেট মো: তারিকুল ইসলামকে নবগঠিত সংগঠনের আহ্বায়ক ও ডা. জাহেদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ১৩৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার
  • ২ দিনের রিমান্ডে সাবেক মেয়র আইভী  
  • নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর আ.লীগ নেত্রী রজনী আক্তার
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি ক্যানেল থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার
  • নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
  • নারায়ণগঞ্জে ওবায়দুল কাদের ও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
  • “শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন: শিক্ষা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয়” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
  • নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠি মিছিল
  • জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের ৪ জন