এই সরকার আসার পর থেকে যে কাজই করতে যাচ্ছে, সে কাজেই বাধার মুখে পড়ছে। এমনকি সংস্কার প্রস্তাব দিতে গেলেও মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। সরকার সবারই যেন চক্ষুশূল।

তবে এই সরকার সব থেকে বেশি বাধা পাচ্ছে প্রশাসন থেকে। গদাই লস্করী চালে চলা এই প্রশাসনযন্ত্র প্রথম দিকে খুব ভয়ে থাকলেও যখন তারা দেখল আগের পাপের কোনো শাস্তি হচ্ছে না, তখন তারা সদর্পে মাঠে নেমে গেল।

জনপ্রশাসন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যখন প্রথম কথা উঠল, তখনই প্রশাসনযন্ত্রের নড়াচড়া শুরু হলো। তাদের দাপটে দেশ প্রায় অচল হলো। তবে ওই প্রস্তাবে যখন দেখা গেল দিন শেষে তাদের দিকটাই বেশি দেখেছে, তখন তারা একটু ঠান্ডা হলো।

ওই সংস্কার প্রস্তাবে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। যেমন ধরুন, কোটামুক্ত দেশে প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা প্রস্তাবনা দিয়ে রাখা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই আমরা যে মেরিটোক্রেসি চাই, তার সঙ্গে যায় না।

এখন দেশে দুটি আন্দোলন চলছে। প্রথমটি হলো ‘সরকারি চাকরির অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের জন্য। বাংলাদেশের সরকারি চাকরি বললেই প্রথম যে কথা হচ্ছে তা হলো, সরকারিতে ঢুকলে কখনোই চাকরি যায় না। তারপর এখন চালু আছে ‘টাইম বেজড প্রমোশন’। মানে আপনি যা–ই করেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রমোশন হবে, আপনার জন্য সিট থাকুক আর না–ই থাকুক। ফল হিসেবে এখন অ্যাডমিন ক্যাডারে সব পজিশনে পদের থেকে অতিরিক্ত মানুষ দেখা যাচ্ছে।

এখন তাঁরা কেন আন্দোলন করছেন? খসড়া অনুযায়ী, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়। সেগুলো হলো—যদি তাঁরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যার কারণে অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে; যদি তাঁরা অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; যদি তাঁরা অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তাঁর কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তাঁর কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যদি যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।
খসড়ায় এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, দোষী কর্মচারীকে নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।

আরও পড়ুনজনপ্রশাসন ঠিক হোক, তা ভেতরের লোকজনই চায় কি২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

এখানে লক্ষণীয় যে ‘সরকারি সেবা সময়মতো প্রদান করা’, যা মৌলিক অধিকার হিসেবে ২০১৮ সালের আইনের ২৫ নম্বর ধারাতে আছে, সেই জন্য কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এ ছাড়া পারফরম্যান্স বেজড ইভাল্যুশন চালু করা নিয়েও কোনো কথা নেই। পরপর তিন বছর ইভাল্যুশন খারাপ হলে কোনোভাবেই চাকরিতে থাকার যোগ্যতা থাকতে পারে না। অথচ সংস্কার প্রস্তাবে এটি নিয়েও কোনো কথা নেই।

এসব ধারা ১৯৭৯ সালের অধ্যাদেশে ছিল। এটি করেছিল জিয়া সরকার। ২০১৮ সালে হাসিনা সরকার তা বাতিল করে দেয়। হাসিনা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকতে যেহেতু সরকারি কর্মচারীদের তোষণ করে থাকতে হতো এবং মোটামুটি সব স্তরে নিজদলীয় লোকজন বসানো হয়েছিল, তাই সরকার তাঁদের জন্য সবকিছু করতে রাজি ছিল।

এখন এই ধারাগুলোর মধ্যে কোনটি অযৌক্তিক, কেউ বলতে পারবেন? তাঁর সরকারের কাজে বাধা দিলে কিছু বলা যাবে না, ছুটি ছাড়া ইচ্ছেমতো অনুপস্থিত থাকবেন, অন্যদের কাজে বাধা দেবেন—কিছুই বলা যাবে না!

জুলাই আন্দোলনে সব শ্রেণি–পেশার মানুষই যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকারি কর্মচারীশ্রেণি আছেন, যাঁরা আগের সময় গুড় খেয়েছেন, পরে তাঁদের কোনো ক্ষতি হয়নি, এখন অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে (বিভিন্ন পেশাজীবী দলের নামের আড়ালে) ঠিকই তাঁরা সুবিধা নিচ্ছেন এবং দেশকে সেই আগের মতোই চালাচ্ছেন। তাঁদের কোনো পূর্ব কাজের জন্য অনুশোচনা নেই; সংশোধনের ইচ্ছাও নেই। দুদকেরও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে অনুমতি লাগে। ফলে তাঁদের কোনো দুশ্চিন্তাও নেই।

হ্যাঁ! এখানে বলার আছে, কীভাবে শাস্তি হবে তার প্রক্রিয়া নিয়ে। একজনকে শাস্তি দিতে হলে অবশ্যই যথাযথ তদন্ত ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে এবং এই জন্য আপিল বিধিমালা ১৯৮৫ (২০১৮ সালে সংশোধিত) তা যেন পালন করা হয়। কোনো রাজনীতিবিদ এই আইনের সুযোগ নিয়ে যেন তাঁদের হেনস্তা না করতে পারেন, তার জন্য এই আইনে ধারা থাকতে হবে।

একজন আমলাকে এই আইনের মাধ্যমে যেন ‘জি হুজুর’ টাইপ করে ফেলার চেষ্টা না হয়। কারণ, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, কেউ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারাতে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখন কোনো কাজের সমালোচনাকেও অবাধ্যতা হিসেবে দেখানো যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তার মানে এই আইন বাতিল নয়, বাস্তবে সংস্কার দরকার।

সরকারি চাকরিতে থেকে অনেকেই বিদেশে অনেক দিন ছুটি কাটিয়ে বা এখানে নিজের ব্যবসা করে ফেরত এসে মামলা করে পূর্ণ বেনিফিটসহ চাকরিতে পুনর্বহাল হন। এই সরকার এসে বঞ্চিত নাম দিয়ে এক বিশালসংখ্যক প্রমোশন দিয়ে প্রশাসনকে আরও মাথাভারী করেছে। কিন্তু দুর্নীতি কি খুব কমেছে? যাঁরা ভুক্তভোগী তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।

আরও পড়ুনসরকারি চাকরিতে ‘বেশি সুবিধা’ দিয়ে কেন এই বিভাজন?২২ আগস্ট ২০২৩

এই বাজেটে সরকার ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেবে বলছে। তবে তা দেওয়া হবে আগের ৫ শতাংশ প্রণোদনা বাদ দিয়ে। তার মানে ১৫ শতাংশ বাড়বে। আসলেই সরকারি চাকরির নিচের দিকে যাঁরা আছেন, তাঁরা অনেক কম বেতন পান।

আমি দেখছিলাম তাদের বেতন কত বাড়বে? দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ গ্রেডের এই সামান্য টাকা বাড়ানোর পর মূল্যস্ফীতি যে তিন গুণ বাড়বে, তা সামাল দিতে পারবেন তো?

সিনিয়র কর্মচারীরা যে অতিরিক্ত সুবিধা পাচ্ছেন, সেগুলো কমানোর কি কোনো ব্যবস্থা হয়েছে? এদিকে বেসরকারি খাতে করোনার পর বেশির ভাগ কোম্পানির ইনক্রিমেন্ট যে নামমাত্র হচ্ছে, তা কি কেউ বলছে?

সরকারি অফিসের কিন্তু প্রণোদনা, মহার্ঘ ভাতা ছাড়াও ৫ শতাংশ করে একটা ইনক্রিমেন্ট প্রতিবছর হচ্ছে, ওটার কথা কেউ বলে না। যেখানে বেসরকারি অফিসের বেতন বরং কমেছে।

শেষবার পে–স্কেল হওয়ার পর বলা হয়েছিল, ‘আর পে–স্কেল লাগবে না’ এবং ‘এমন বেতন বাড়িয়েছি, ঘুষ খাওয়া কমে যাবে’। বাস্তবে কী হয়েছে? প্রতিবছর প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার হয়েছে, যার সিংহভাগই করেছেন সরকারি কর্মচারীরা।

বাস্তবতা হচ্ছে, এই সরকার এসে এসব দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকে না ধরে তাঁদের আরও বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করেছে। যদিও তা করে তারা গতি আনতে পারেনি।

এই দেশের সবচেয়ে বড় খরচ যায় বেতন–ভাতা ও পেনশনে (প্রায় ২৮ শতাংশের মতো)। বিগত সরকারের সময় কথা উঠেছিল, ২০ শতাংশ খরচ কমানোর। কিন্তু কোনোভাবেই এই খরচ কমানোর অথবা আয় বাড়ানোর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু এখানে এনবিআর সংস্কার করতে গিয়ে নতুন ঝামেলা তৈরি হলো। এনবিআরকে দুই ভাগ করতে যাওয়ার পর এনবিআর-কর্মীরা কলমবিরতিতে যাওয়াতে দেশের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই ক্ষতির দায় কে নেবে? এনবিআর এত দিনে নিজেদের গণ্ডি থেকে বের হতে পারেনি। তাদের দুই ভাগ করা আসলে সময়ের দাবি ছিল। হয়তো গঠনরীতি বা কাজের স্কোপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আমার নিজেরও প্রশ্ন আছে, অ্যাডমিন ক্যাডার এখানে কেন?

অবশ্যই কোনো আইন প্রথম দিন থেকেই পারফেক্ট না, এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, হওয়া উচিতও। তাই বলে দেশের যে এত দিন ক্ষতি হলো, এর জন্য কি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে না? এই শাস্তি যাতে না আসে, সে জন্যই কি অধ্যাদেশের বিপক্ষে আন্দোলন চলছে, যাতে তাঁর সরকারকে যখন ইচ্ছা ব্ল্যাকমেল করতে পারেন? দেশের স্বার্থে কখনো তো তাঁদের একজোট হতে দেখলাম না।

বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে কঠোর সংস্কার করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে কর্মদক্ষতা ও সততার মাপকাঠি অনুযায়ী বেতন ও প্রমোশন হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় খোলামেলা পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাভিত্তিক নিয়োগ হয়, যেখানে রাজনীতির প্রভাব থাকে না। এসব উদাহরণ দেখায়, সংস্কার অসম্ভব নয়; বরং তা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

কী হয় বেসরকারি চাকরিতে? আট দিন বিনা নোটিশে উপস্থিত না থাকলে ছাঁটাই, কেউ ঠিকমতো কাজ না করলে কন্ট্রাক্ট আইন অনুসারে যা চুক্তি আছে, সেই অনুযায়ী নোটিশ ও ছাঁটাই।

শ্রম আইন ধরলে হয়তো তিন মাসের মূল বেতন দেয়। মূল বেতন দেখা যায় এতই কম ধরে রাখা যে তা দিয়ে দুই মাসের সাকল্য বেতনও হয় না। আর এই চাপে দেশের যে বাকি ৯৫ শতাংশ চাকরিজীবী আছেন, তাঁরা খেটেই যাচ্ছে অফুরান এবং তাঁদের অক্লান্ত চেষ্টাতেই দেশের অর্থনৈতিক চাকা চলছে। তাঁদের দাবিদাওয়ার কোনো জায়গাই নেই। তাঁরা যদি টয়োটার গতি হয় (আমাদের কর্মদক্ষতার লেভেল বিশ্বের সঙ্গে তুলনায় নিচের দিকে), সরকারি খাত এখনো গরুর গাড়ির স্পিডে চলে। সরকারি খাতে থাকা ৫ শতাংশ কর্মী, যাঁরা কোনো শাস্তির ভয় ছাড়া, নিজেদের জন্য ইনডেমনিটি নিয়ে সব কাজকেই আইনের বেড়াজালে স্লো করে দেন।

বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে কঠোর সংস্কার করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে কর্মদক্ষতা ও সততার মাপকাঠি অনুযায়ী বেতন ও প্রমোশন হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় খোলামেলা পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাভিত্তিক নিয়োগ হয়, যেখানে রাজনীতির প্রভাব থাকে না। এসব উদাহরণ দেখায়, সংস্কার অসম্ভব নয়; বরং তা উন্নয়নের পূর্বশর্ত।

জুলাই আন্দোলনে সব শ্রেণি–পেশার মানুষই যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই সরকারি কর্মচারীশ্রেণি আছেন, যাঁরা আগের সময় গুড় খেয়েছেন, পরে তাঁদের কোনো ক্ষতি হয়নি, এখন অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে (বিভিন্ন পেশাজীবী দলের নামের আড়ালে) ঠিকই তাঁরা সুবিধা নিচ্ছেন এবং দেশকে সেই আগের মতোই চালাচ্ছেন। তাঁদের কোনো পূর্ব কাজের জন্য অনুশোচনা নেই; সংশোধনের ইচ্ছাও নেই। দুদকেরও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে অনুমতি লাগে। ফলে তাঁদের কোনো দুশ্চিন্তাও নেই।

সরকারি কর্মচারীদের সংস্কারের জন্য এই সরকার যে কাজ করতে চায়, তাতে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্য লাগবে। এ বিষয়ে একামেডিশিয়ান এবং বেসরকারি খাতের ভুক্তভোগীদের মতামত নিতে হবে। যদিও সরকার যা করতে চাচ্ছে, তা এই খাত সংস্কারের জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়, কিন্তু শুরু তো করতে হবে। এখন অন্য রাজনৈতিক দল যদি সাহায্য না করে, তারা যখন ক্ষমতায় আসবে, এই একই অবস্থায় পড়তে হবে।

যেহেতু সরকারি কর্মচারীদের যথেষ্ট জবাবদিহি নেই, তাই ক্ষতি হবে যে ক্ষমতাসীন হবে তারই। কারণ, পাঁচ বছর তাদেরই তো আমাদের সামনে আসতে তো হবে।

সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলাম লেখক

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব এই সরক র ব সরক র ব যবস থ সরক র র র সরক র ই সরক র এই আইন চ কর ত হয় ছ ল র কর ম র জন য অন য য় আইন র ই আইন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারে চট্টগ্রামে পাউবো’র অভিযান 

চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় আজ উচ্ছেদ অভিযান চলবে। 

অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিন টানা চলবে উচ্ছেদ অভিযান।

২ জুন সমকালের শেষের পাতায় ‘৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা। 

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

সরকারি জায়গা যাদের দখলে
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন। 

এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।

পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ