দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননকেন্দ্র হালদা নদীর তিন থেকে চার স্থানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ প্রজাতির মা মাছেরা স্বল্পসংখ্যক ডিম ছেড়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত দুইটার পর জোয়ারের সময় নদীর হাটহাজারীর গড়দোয়ারা ইউনিয়নের নয়াহাট, রাউজানের পশ্চিম গুজরা আজিমের ঘাট ও নাপিতের ঘাটের কাটাখালী এলাকায় ডিম সংগ্রহকারীদের কেউ কেউ ১০ থেকে ১৫টি করে ডিম পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাউজান ও হাটহাজারী মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘হালদার তিন থেকে চার স্থানে সংগ্রহকারীদের কেউ কেউ ১০ থেকে ১৫টি করে নমুনা ডিম পেয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। যদি ডিম ছাড়ার মতো পরিবেশ থাকে, তাহলে ডিম আরও হতে পারে।’

প্রচুর বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হলে হালদায় পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছেরা। গত এপ্রিল মাসের শুরু থেকে পূর্ণ প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে অপেক্ষায় ছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। নদীতে মা মাছের আনাগোনাও শুরু হয়েছে। দুই উপজেলার চারটি সরকারি হ্যাচারি ও শতাধিক মাটির কুয়ায় রেণু পোনা ফোটানোর জন্য নানা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন ও সংগ্রহকারীরা।

হালদা নদীতে মাছের ডিম সংগ্রহকারী মুহাম্মদ শফি, মো.

কামাল ও রোশাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মতো শত শত ডিম সংগ্রহকারীর চোখ এখন হালদা নদীতে। মা মাছের কখন পুরোদমে ডিম ছাড়বে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।

হালদা–গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, নদীর পরিবেশ এখনো ডিম ছাড়ার উপযোগী নয়। কয়েক স্থানে স্বল্প পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে। নদীর পানির টারবিডিটি (ঘোলাটে) এখন ১০০ থেকে ১৫০। এটি ৬০০ থেকে ৭০০ থাকলে মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে।

প্রতিবছর হালদার দুই পাড়ে মা মাছের নিষিক্ত ডিম ধরার অপেক্ষায় থাকেন ৭০০ থেকে ৮০০ জন ডিম সংগ্রহকারী। তবে গত কয়েক বছর ডিমের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীর সংখ্যা কমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী জুন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ার আছে। মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, আজ দুপুরের জোয়ারে যদি পাহাড়ি ঢল অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হয়, তাহলে ডিম ছেড়ে দিতে পারে মা মাছ। ডিম সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নদীতে কাজ করছেন দুই উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ম স গ রহক র স গ রহক র র মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

শুল্ক আলোচনা: আগস্টের আগেই ইতিবাচক ফলের আশাবাদ ঢাকার

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফা শুল্ক আলোচনা শেষে বেশ কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। তাই ঢাকার আশা, আগামী ১ আগস্টের নির্ধারিত সময়ের আগেই একটি ইতিবাচক ফল অর্জন সম্ভব হবে। ওই দিন থেকেই সব বাংলাদেশি পণ্যে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

শনিবার প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ‘কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত থাকলেও আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি জানান, উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আন্তমন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা চলবে এবং দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও বৈঠকে বসবেন। আলোচনা সরাসরি ও ভার্চ্যুয়ালি—উভয় মাধ্যমেই হতে পারে। তারিখ ও সময় শিগগিরই নির্ধারণ করা হবে।

প্রয়োজনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাণিজ্যসচিব ও অতিরিক্ত সচিব আবারও যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব।

তিন দিনের আলোচনা শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি ইতিবাচক সমঝোতায় পৌঁছানোর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ঢাকা থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এতে অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি, জ্বালানি, বাণিজ্য ও কপিরাইট–সংক্রান্ত সংস্থার কর্মকর্তারাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস আলোচনার সমন্বয় করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় (ইউএসটিআর) ৯-১১ জুলাই পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়।

৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৪টি দেশের নেতাদের চিঠি পাঠান। বাংলাদেশ এসব দেশের অন্যতম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বলেন, ‘আপনার দেশের বাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত করলে এবং শুল্ক ও অশুল্ক বাধা তুলে নিলে, আমরা এই চিঠিতে উল্লিখিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার পুনর্বিবেচনা করতে পারি।’

ট্রাম্প বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে ঘোষিত এই শুল্কহার বৃদ্ধি বা হ্রাস—উভয়ই হতে পারে। তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠিতে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কখনোই আপনাকে হতাশ করবে না।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি পূরণে ৩৫ শতাংশ হার এখনো যথেষ্ট নয়। তবে, আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করেন, তাহলে কোনো শুল্কই থাকবে না। বরং দ্রুত অনুমোদন পেতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ