জুলাইয়ের শহীদ পরিবার ও আহতরা ফ্ল্যাট পাবে
Published: 27th, May 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকায় একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রতিটি এক হাজার স্কয়ার ফুটের ২ হাজার ৬০০টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৭৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের আওতায় আলাদা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ঢাকার মিরপুরের ১৪ নম্বর সেক্টরে পাঁচ একর জমির ওপর বেশ কিছু ভবন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে বাজেট থেকে ঋণ হিসেবে অর্থ দেওয়া হয়। এবার অনুদান হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। কারণ সংস্থাটি এসব ফ্ল্যাট শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের কাছে বিনামূল্যে হস্তান্তর করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মনদীপ ঘরাই সমকালকে বলেন, মোট ১৪ তলাবিশিষ্ট ২৫টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি ভবনে এক হাজার স্কয়ার ফুটের ১০৪টি করে ফ্ল্যাট থাকবে। সব মিলিয়ে ফ্ল্যাটের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ হাজার ৬০০। বাজেট পাস হওয়ার পর বরাদ্দ পাওয়া গেলে পরে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকেই শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি আরও এককালীন অর্থ এবং চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে ৫৯৩ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব সুবিধা দেওয়া হবে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বাজেটেই শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২৪৭ কোটি ৮০ টাকা এবং আহত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা (দেশে-বিদেশে), অনুদান ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ৩৯০ কোটি টাকাসহ মোট ৬৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা চেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে আর্থিক সংকটের কারণে এ খাতে ২৩২ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও ছিল। তাই আগামী বাজেটে এ খাতে বেশ খানিকটা বরাদ্দ বাড়ছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমানে এককালীন কিছু অর্থ ও চিকিৎসায় অনুদান দেওয়া হচ্ছে। নতুন বাজেটে এসব কাজ গতিশীল করার পাশাপাশি মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়া হবে। এসব কারণে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। মাসিক সম্মানী ভাতা ও এককালীন সহায়তা অনুদান ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় দেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের কাজটি এখনও শুরু হয়নি। তাদের চাকরি দেওয়ার চেয়ে কর্মসংস্থানের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে সরকার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ছাড়াও বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার আহত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছে। পুনর্বাসনের কাজটিতেও সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর দ দ র খ একক ল ন অন দ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রাজস্ব আদায়
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির ১০ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা প্রায় ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এনবিআরকে পরবর্তী দুই মাসে ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা আহরণ করতে হবে। রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত এনবিআরের সাময়িক প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থবছরের ১০ মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময় রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় ১ লাখ ১১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৮১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এ খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯৪ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ‘সাধারণত মে-জুন মাসে রাজস্ব আদায় সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচির কারণে মে মাসে বড় ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে আগামী মাসে এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
চলতি মাসে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা বেশ কয়েকদিনের কর্মসূচিতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে রাজস্ব কার্যক্রম। এতে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস এবং বিভিন্ন স্থলবন্দরে শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এতে রাজস্ব আদায়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, চলতি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার আগেই রাজস্ব ঘাটতির এই চিত্র সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এনবিআরের কার্যক্রমে গতি কমে যায়। ডিসেম্বর থেকে কিছুটা গতি পেলেও এপ্রিল-মে মাসে আন্দোলনের ফলে আবারও রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছে। ফলে গতকাল থেকে রাজস্ব আদায় ও শুল্ক কার্যক্রম অনেকটা স্বাভাবিক রূপ নিয়েছে।