কোরবানির ঈদ আমাদের জীবনে ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি একটি পারিবারিক ও সামাজিক আনন্দের উৎসব। এ সময় গরু, ছাগল বা ভেড়া কোরবানি দিয়ে মাংস আত্মীয়স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এর পাশাপাশি নিজেদের ঘরের জন্যও বেশ পরিমাণ মাংস সংরক্ষণ করতে হয়। এ সংরক্ষণের প্রধান ভরসা হলো ফ্রিজ। কিন্তু মাংস সংরক্ষণের আগে যদি ফ্রিজ অপরিচ্ছন্ন, গন্ধযুক্ত বা অপর্যাপ্ত জায়গা হয়, তবে পুরো ব্যবস্থাপনাই বিপাকে পড়ে।
ঈদের ঠিক আগেই অনেকেই ফ্রিজ পরিষ্কারের কথা ভাবেন, কিন্তু তখন সময় ও চাপের কারণে ঠিকমতো সম্ভব হয় না। তাই কোরবানির ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে শুধু ফ্রিজ জীবাণুমুক্তই হয় না, বরং সংরক্ষণের জন্য বাড়তি জায়গাও তৈরি হয়।
প্রথমেই যেটা করতে হবে, সেটা হলো ফ্রিজের প্লাগ খুলে দিন এবং সব খাবার বের করে ফ্রিজ একেবারে খালি করে ফেলুন। ডিপ ফ্রিজে যদি বরফ জমে থাকে, সেটা গলতে সময় দিন। এ ক্ষেত্রে গরম পানি ভরা বাটি রেখে দিলে বরফ গলে যাওয়ার সময় কমে যাবে।
এরপর ফ্রিজের সব ট্রে, ড্রয়ার ও র্যাক খুলে আলাদা করে নিন। এগুলো হালকা গরম পানিতে লিকুইড সাবান বা বেকিং সোডা দিয়ে ধুয়ে নিন। অতিরিক্ত গন্ধ থাকলে ১:১ অনুপাতে ভিনেগার ও পানি মিশিয়ে ব্যবহার করুন। ফ্রিজের ভেতরের দেয়াল বা দরজার রাবার সিলের মধ্যে অনেক সময় ছাঁচ বা ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে। এগুলো পরিষ্কার করার জন্য নরম ব্রাশ বা পুরোনো টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন।
ফ্রিজের ভেতরের অংশ পরিষ্কারের সময় অবশ্যই পরিষ্কার নরম কাপড় বা তুলার বল ব্যবহার করবেন, যাতে ভেতরের সেল বা কুলিং অংশে কোনো ক্ষতি না হয়। ডিপ ফ্রিজের নিচের দিকটা একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে পরিষ্কার করুন। কারণ সেখানেই বেশির ভাগ সময় রক্ত বা পানি জমে গন্ধ তৈরি হয়।
পরিষ্কার করা হয়ে গেলে ফ্রিজ সম্পূর্ণ শুকিয়ে নিতে দিন। চাইলে এক কাপ লেবুর রস বা কিছু কাঠ-কয়লা ফ্রিজের ভেতরে রেখে দিতে পারেন, যা গন্ধ শোষণ করতে সাহায্য করে। সবকিছু শুকিয়ে গেলে ফ্রিজ পুনরায় চালু করুন এবং অন্তত এক ঘণ্টা খালি অবস্থায় চালু থাকতে দিন।
এবার ফ্রিজে প্রয়োজনীয় আইটেম গুছিয়ে রাখুন। ঈদের মাংস সংরক্ষণের জন্য আলাদা জায়গা রাখুন। মাংস ফ্রিজে রাখার সময় অবশ্যই ছোট ছোট প্যাকেট করে রাখুন। পলিথিন বা ভালো মানের কনটেইনার ব্যবহার করুন; যাতে রক্ত বা তরল ফ্রিজের ভেতর ছড়িয়ে না পড়ে।
কোরবানির সময় অনেকবার ফ্রিজ খোলা হয়। তাই ফ্রিজের ভেতর জিনিসগুলো এমনভাবে গুছিয়ে রাখুন যেন প্রয়োজনীয় জিনিস দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায় এবং বেশি সময় ফ্রিজ খোলা না রাখতে হয়।
ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় কিছু স্মার্ট টিপস
মাংস রাখার আগে ফ্রিজে এক রাত ফাঁকা রেখে ঠান্ডা আবহাওয়া তৈরি করুন। এতে খাবার দ্রুত ঠান্ডা হবে।
প্লাস্টিকের বদলে এয়ারটাইট কাচের কনটেইনার ব্যবহার করলে গন্ধ ও রস ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যায়।
পরিষ্কারের সময় পানিতে এক চিমটি দারচিনি গুঁড়া মিশিয়ে নিলে দীর্ঘসময় ফ্রিজে একটা মিষ্টি গন্ধ বজায় থাকবে।
বরফ পরিষ্কারে কখনও ছুরি বা ধারালো কিছু ব্যবহার করবেন না। এতে ফ্রিজের কুলিং সিস্টেম নষ্ট হতে পারে।
ফ্রিজ পরিষ্কারের পর একটি পুরোনো কাপড় বা তোয়ালে ফ্রিজের নিচে বিছিয়ে রাখুন। এতে ফ্রিজের অপ্রত্যাশিত লিকেজ ধরা পড়বে সহজে। ফ্রিজে রাখার আগে প্রতিটি মাংসের প্যাকেটে তারিখ লিখে রাখুন। পুরোনো ও নতুন মাংস গুলিয়ে যাবে না।
ফ্রিজের ভেতরে প্রয়োজন ছাড়াও যেসব খাবার পড়ে থাকে, তা আগে থেকেই দান করে দিন। জায়গা বাঁচবে, সওয়াবও মিলবে। পাখা চালিয়ে বা জানালা খুলে রাখুন পরিষ্কারের সময়। এতে গন্ধ ও আর্দ্রতা দ্রুত দূর হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ফ্রিজ শুধু খাবারকে সতেজ রাখে না, বরং পুরো পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোরবানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ফ্রিজ পরিষ্কার করাটা অনেক ছোট কাজ মনে হলেও এর প্রভাব অনেক বড়। তাই সময় থাকতেই কাজটি সেরে ফেলুন আর উপভোগ করুন স্বাস্থ্যকর এবং ঝামেলাবিহীন কোরবানির ঈদ। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র জ পর ষ ক র ব যবহ র কর পর ষ ক র র ক রব ন র র র সময় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
তামাক নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেছেন, “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় ও শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। এর জন্য ডিএনসিসির প্রতি অর্থবছরের বরাদ্দকৃত বাজেট বার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করা হবে।”
বুধবার (২৮ মে) ডিএনসিসির সভা কক্ষে ঢাকা আহছানিয়া মিশনে ও ডিএনসিসির যৌথ আয়োজনে ‘তামাক ও ধূমপানমুক্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন গঠনে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতি বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
ইমরুল কায়েস চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির উপ-প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা পলি, ডা. ফিরোজ আলম, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ, মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদসহ ডিএনসিসি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। ।
আরো পড়ুন:
অন্তর্বর্তীকালীন সংসদ সচিবালয় কমিশনের ৩৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত
বাজেটে ‘কৃষি-শিল্প-পাট-সুন্দরবন’ রক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি
সভায় মূল প্রবন্ধে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম বলেন, “গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্যমতে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে, ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ ধূমপান করে এবং প্রায় ৪ কোটি মানুষ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের এ হার ৪২.৭ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আইন সম্পর্কে সচেতনতা কম, তামাকজাত প্যণ্যের ব্যাপক প্রচারণা, সহজলভ্যতা, আইনের সঠিক ও যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং তামাক কোম্পানির কূটকৌশল ইত্যাদি।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, কর্মক্ষেত্রে যত্রতত্র ধূমপানের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। ফলে ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে সবাইকে রক্ষা করতে কর্মক্ষেত্রকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ডিএনসিসির আওতাধীন বাসস্টান্ড, রেস্টুরেন্টসহ পাবলিক প্লেসগুলোতে ধূমপান বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কর্মক্ষেত্র ও আশেপাশের এলাকা ধূমপানমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও ধূমপানমুক্ত সাইনেজ লাগানো এবং ডিএনসিসির সব কার্যালয়কে শতভাগ ধূমপান ও স্মোকিং জোনমুক্ত রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান বক্তারা।
পাশাপাশি, তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও কোম্পানিগুলো সুকৌশলে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করছে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজে, যা বন্ধ হওয়া উচিৎ। ডিএনসিসির আওতাধীন মার্কেট, পাবলিক প্লেস ও বিপণন কেন্দ্রগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লংঘন বন্ধ করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন বক্তারা।
এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ রাখা এবং সেই বরাদ্দকৃত বাজেট ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ধূমপানমুক্ত নিশ্চিত করতে হবে। এবং সামাজিক মাধ্যমে তামাকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে তরুণদের এ কাজে এগিয়ে আশার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী